পাললিক শিলা কাকে বলে? ইহার বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর?
★★ পাললিক শিলা কাকে বলে?
উত্তর- পাললিক শিলা (Sedimentary Rock): পাললিক শিলার ইংরেজি প্রতিশব্দ Sedimentary Rock যা ল্যাটিন শব্দ 'Sedimentum' থেকে এসেছে যার অর্থ হল ‘অধঃক্ষেপণ'। পাললিক শিলা কথাটি এসেছে ‘পলি’ বা ‘পলল’ থেকে। পৃথিবীপৃষ্ঠের আগ্নেয় শিলা, রূপান্তরিত শিলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ঘাত-প্রতিঘাতে অতি সূক্ষ্ম শিলাকণায় পরিণত হয়, যা পুনরায় সমুদ্রগর্ভ বা বিশাল জলাশয়ে নদী, হিমবাহ বা বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে আয়তন ও ভর অনুযায়ী স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে, তাকে পাললিক শিলা বলে। স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এই শিলাকে স্তরীভূত শিলা (Stratified Rock) বলে।
উদাহরণ: বেলেপাথর, কাদাপাথর।
পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো-
◆ পললের গঠন অনুসারে: পললের গঠন অনুসারে পাললিক শিলাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি নীচে আলোচনা করা হলো-
1. যান্ত্রিক উপায়ে সৃষ্ট পাললিক শিলা :
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ঘাত প্রতিঘাতে ভূপৃষ্ঠের শিলাসমূহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে কোনো প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা পরিবাহিত হয়ে কোনো অবনমিত অঞ্চলে (সমুদ্র, নদী বা হ্রদের তলদেশে) স্তরে স্তরে সঞ্চিত ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে, তাকে যান্ত্রিক উপায়ে সৃষ্ট পাললিক শিলা বলে। এই শিলা তিন প্রকারের হয়। যথা-
(i) প্রস্তরময়: যে পাললিক শিলা 2 মিমি-এর বেশি ব্যাসযুক্ত দানা দ্বারা গঠিত, তাকে প্রস্তরময় পাললিক শিলা বলে।
উদাহরণ : কংগ্লোমারেট, ব্রেকসিয়া।
(ii) বালুকাময় : যে পাললিক শিলা 0.6-2.0 মিমি ব্যাসযুক্ত দানা দিয়ে গঠিত তাদের বালুকাময় পাললিক শিলা বলে। ↑ উদাহরণ : গ্রেওয়েক বেলেপাথর,কোয়ার্টজ বেলেপাথর।
(III) কর্দমময় : 0.06 মিমি-এর কম ব্যাসযুক্ত দানা দিয়ে গঠিত শিলাকে কর্দমময় পাললিক শিলা বলে।
↑ যেমন: কাদাপাথর, শেল।
2. রাসায়নিক উপায়ে সৃষ্ট পাললিক শিলা :
প্রধানত চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির জল বাতাসের অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। অন্যদিকে, চুনাপাথর নদীর জল দ্বারা দ্রবীভূত হয়ে কোনো গহ্বরে সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। একে রাসায়নিক উপায়ে সৃষ্ট পাললিক শিলা বলে।
যেমন— ডলোমাইট, ক্যালসাইট, জিপসাম ।
3. জৈব উপায়ে সৃষ্ট পাললিক শিলা :
ভূআন্দোলনে বা প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ বা জীবাশ্ম ভূগর্ভে অথবা সমুদ্রের নীচে স্তরে স্তরে জমে কালক্রমে শিলায় পরিণত হয়, একে জৈৰ পাললিক শিলা বলে।
যেমন— কয়লা, চুনাপাথর।
◆◆পললের উৎপত্তি অনুসারে :
1. সংঘাত শিলা (Clastic Rock) :
ইংরেজি শব্দ 'Clastic' এসেছে গ্রিক শব্দ 'Klastos' থেকে যার অর্থ ‘ভগ্ন’। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির (জল, বায়ুপ্রবাহ, নদী প্রভৃতি) প্রভাবে আগ্নেয় ও পাললিক শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পলিতে পরিণত হয় এবং সেই পলি সঞ্চিত হয়ে যে পাললিক শিলা সৃষ্টি হয়, তার নাম সংঘাত শিলা। এক্ষেত্রে শিলার রাসায়নিক ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন— বেলেপাথর, কাদাপাথর প্রভৃতি।
2. অসংঘাত শিলা (Non-clastic Rock) :
যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন ব্যতিরেকে অর্থাৎ, সংঘাত ভিন্ন অন্য কোনো উপায়ে (রাসায়নিক ও জৈব) যেসব পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে অসংঘাত শিলা বলে।
যেমন— ডলোমাইট, জিপসাম, চক প্রভৃতি।
পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য বা বিশেষত্ব :
উত্তর:- পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য গুলি নীচে ব্যাখ্যা করা হলো-
১.স্তরবিন্যাস : স্তরে স্তরে পলি জমে গঠিত হয় বলে পাললিক শিলার অপর নাম স্তরীভূত শিলা।
২. স্তরায়ণ তল : একটি স্তর আর একটি স্তর থেকে যে তল দ্বারা আলাদা থাকে, তাকে স্তরায়ণ তল বলে।
৩. জীবাশ্মের উপস্থিতি : একমাত্র পাললিক শিলাস্তরের মধ্যেই জীবাশ্ম থাকে।
৪. কাঠিন্য : অন্যান্য শিলার তুলনায় কাঠিন্য কম, হালকা ও ভঙ্গুর, এর ক্ষয় প্রতিরোধী ক্ষমতা বিভিন্ন রকম হয়।
৫. প্রবেশ্যতা : এই শিলা ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় জল প্রবেশ করতে পারে। তাই একে প্রবেশ্য শিলা (Permeable Rock) বলে।
৬.সম্পদের উপস্থিতি : কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
৭. প্রকৃতি : ভঙ্গুর প্রকৃতির হওয়ায় সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
Comments
Post a Comment