১. "আগ্নেয় শিলাকে প্রাথমিক শিলা বলা হয়।"- কারণ ব্যাখ্যা করো। অথবা, কোন্ শিলাকে ‘প্রাথমিক শিলা’ বলে ও কেন?
উত্তর:- পৃথিবী উত্তপ্ত জ্বলন্ত গ্যাসীয় পিণ্ড থেকে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন অবস্থায় (ভূত্বক) পরিণত হয়েছে। এই উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় পরিণত হওয়ার সময় ভূঅভ্যন্তরে ম্যাগমা জমে এবং ভূপৃষ্ঠে লাভা জমে প্রথমে যে শিলার সৃষ্টি হয় তা হল আগ্নেয় শিলা। পৃথিবীতে আগ্নেয় শিলা প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল বলে একে প্রাথমিক শিলা (Primary Rock) বলে।
২.‘পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায়'- কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:- নদী, সমুদ্র বা হ্রদের তলায় স্তরে স্তরে পলি জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহও তার মধ্যে চাপা পড়ে যায়। পরবর্তীকালে পলি জমাটবদ্ধ হয়ে পাললিক শিলা গঠনের সময় ওইসব উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ ধীরে ধীরে প্রস্তরীভূত হয়ে যায় এবং শিলাস্তরের ওপর তার ছাপ সৃষ্টি হয়। এইজন্য জীবাশ্ম শুধুমাত্র পাললিক শিলাতেই দেখা যায় ৷
৩.ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত ভূমিরূপ চ্যাপটা আকৃতির হয়।' কারণ ব্যাখ্যা করো:
উত্তর:- ব্যাসল্ট নিঃসারী শ্রেণির আগ্নেয় শিলা। এই শিলার সান্দ্রতা কম হওয়ায় তরল লাভা অনেক দূর প্রবাহিত হয়। ভূত্বকের ফাটলের মধ্যে দিয়ে লাভা নির্গত হয়ে অনুভূমিকভাবে ধীরে ধীরে ও স্তরে স্তরে জমে ধাপজাতীয় চ্যাপটা আকৃতির ভূমিরূপ তৈরি করে। এই ধাপগুলিকে ট্র্যাপ বলে। ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির এই ধরনের ভূমিরূপকে ডেকান ট্র্যাপ বলে।
৪. "আগ্নেয় শিলাতে জীবাশ্ম দেখা যায় না"-কারণ ব্যাখ্যা করো:
উত্তর:- স্তরে স্তরে পলি সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলা সৃষ্টি হওয়ার সময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ প্রস্তরীভূত হয়ে জীবাশ্মে পরিণত হয়। কিন্তু আগ্নেয় শিলা সৃষ্টি হওয়ার সময় উত্তপ্ত গলিত আগ্নেয় পদার্থসমূহ জমাট বেঁধে শীতল হয়ে এই শিলার সৃষ্টি করে। এই সময় কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীদেহ চাপা পড়লে তা প্রচণ্ড উত্তাপে গলে যায়, তাই জীবাশ্ম গঠিত হতে পারে না। তাই আগ্নেয় শিলায় কোনো জীবাশ্ম দেখা যায় না।
৫. ‘পাললিক শিলার অপর নাম স্তরীভূত শিলা।' কারণ ব্যাখ্যা করো। অথবা, কোন্ শিলাকে ‘স্তরীভূত শিলা' বলা হয় এবং কেন?
উত্তর:- ভূত্বকের বিভিন্ন শিলা নদী, হিমবাহ, বায়ু প্রভৃতি দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পলি, নুড়ি, বালি সৃষ্টি করে। এরা প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা বাহিত হয়ে নদী, হ্রদ বা সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলা সৃষ্টি করে। পলিকণার বেধ দ্বারা স্তরগুলিকে পৃথক করা যায়। স্তরে স্তরে পলি সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলার উদ্ভব হওয়ায় একে স্তরীভূত শিলাও বলে ৷
৬.'পাললিক শিলায় কেলাস গঠন হয় না’ – কারণ ব্যাখ্যা করো। ★★
উত্তর:- বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে জলের অণু দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কেলাস গঠন করে৷ আগ্নেয় শিলা তৈরি হওয়ার সময় তার মধ্যে উত্তপ্ত খনিজ জল থেকে যায় যা পরবর্তীকালে ঠান্ডা হয়ে শিলার মধ্যে খনিজ জলের অণু কেলাস গঠন করে। কিন্তু জলাশয়ের তলদেশে স্তরে স্তরে পলি সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলা গঠনকালে কণামধ্যস্থ জল অপসৃত হওয়ায় খনিজ জলের অণু কেলাস গঠিত হতে পারে না। সেইজন্যে এই শিলায় কেলাস গঠন হয় না।
৭.ছোটোনাগপুর মালভূমিকে 'ভারতের খনিজ ভাণ্ডার' বলা হয় – কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:- ভারতে উত্তোলিত মোট খনিজ সম্পদের প্রায় 33% ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে পাওয়া যায়। এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত খনিজ পদার্থগুলি হল – কয়লা, আকরিক লোহা, তামা, অভ্র, বক্সাইট, ম্যাঙ্গানিজ, গ্রাফাইট ইত্যাদি। ভারতে মোট কয়লা সঞ্চয়ের 70%, অভ্র সঞ্চয়ের 50%, তামা সঞ্চয়ের 95% এখানে আছে। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে এতরকম বৈচিত্র্যপূর্ণ খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় বলে একে ‘ভারতের খনিজ ভাণ্ডার’ বলা হয়।
৮.কাদামাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি’ কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:- মাটির জলধারণ ক্ষমতা নির্ভর করে মাটির প্রবেশ্যতা সচ্ছিদ্রতার ওপর। কাদামাটির কণাগুলি অতি সূক্ষ্ম এবং গায়ে গায়ে লেগে খুব দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে। ফলে মাটিতে ছিদ্রপথ বেশি থাকে না। অর্থাৎ প্রবেশ্যতা খুব কম হয় বলে জল মাটির নীচে যেতে পারে না। কাদামাটির সচ্ছিদ্রতা বেশি হওয়ায় জল সহজেই কাদামাটির মধ্যে সঞ্চিত হতে পারে। তাই কাদামাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি হয়।
Comments
Post a Comment