ম্যাগমা এর প্রকারভেদ (শ্রেণীবিভাগ)

 রাসায়নিক গঠন অনুসারে ম্যাগমাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নীচের  তা ব্যাখ্যা করা হল।

◆◆ ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা (Basaltic Magma) :

মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় ভূত্বকে ব্যাসল্ট আগ্নেয়গিরি (Basalt Volcanoes) দেখা যায়। এই আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা (Basaltic Magma) বলে। ব্যাসল্ট (Basalt) শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Basanites” থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘খুবই শক্ত পাথর’। 1556 সালে জার্মান খনিজবিদ জর্জজিয়ায় এগ্রিকোলা (Georgius Agricola, 1494-1556) সর্বপ্রথম লাভা দ্বারা সৃষ্ট শিলাকে ব্যাসল্ট শিলা হিসাবে চিহ্নিত করেন। ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা সাধারণত উচ্চ গুরুমণ্ডলের (upper mantle) উপরে লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা অঞ্চলেও ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা দেখা যায়। শিলামগুলের নীচে অবস্থিত তপ্ত বিন্দুগুলো (Hot spot) দিয়ে ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে বেরিয়ে আসে। এই জাতীয় ম্যাগমাতে সিলিকার পরিমাণ 50% এবং এই ম্যাগমার সান্দ্রতা (viscosity) খুবই কম এবং বিস্ফোরণের মাত্রাও কম। এই জাতীয় ম্যাগমা থেকে সামুদ্রিক ও মহাসাগরীয় ব্যাসল্ট সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা দ্বারা সৃষ্ট শিলাগুলির প্রধান হল ব্যাসল্ট ও গ্রারো (Gabbro)।


উদাহরণ :

i) হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এসে ধীরে ধীরে শীতল কঠিন হয়ে আগ্নেয় শিলা সৃষ্টি করেছে।

ii) ভারতের ডেকানট্রাপ অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা দিয়ে গঠিত হয়েছে।


◆◆ অ্যান্ডেসাইট জাতীয় ম্যাগমা (Andesitic Magma) :

‘Andesite’ শব্দটি Andes পর্বতের নাম অনুসারে হয়েছে। অ্যান্ডেসাইট জাতীয় ম্যাগমা গাঢ় ধূসর, বাদামি, হালকা ঘনত্বযুক্ত এবং সিলিকা উপাদানের বিচারে এই ম্যাগমা ব্যাসল্ট ও রায়োলাইটের মধ্যবর্তী অবস্থানকে প্রমাণ করে। মাঝারি সান্দ্রতা সম্পন্ন ম্যাগমাকে আন্দিজ পর্বতাঞ্চলে পাত সংস্থানের ফলে সৃষ্টি হয় বলে একে অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমা বলে। এক্ষেত্রে পরস্পর অভিমুখী দুটি পাতের মধ্যে একটি মহাসাগরীয় পাত এবং অন্যটি মহাদেশীয় পাতের অভিমুখী চলনের কারণে এই জাতীয় ম্যাগমার উৎপত্তি ঘটে। এক্ষেত্রে মহাসাগরীয় পাত ভারী পাতটি হাল্কা মহাদেশীয় পাতের নীচে অধোগমন করে ৷ নীচে ঢুকে যাওয়া এই পাতটি সর্বাধিক 700 কিমি. পর্যন্ত যেতে পারে এবং সেখানে কঠিন গুরুমগুলের মুখোমুখি হয়। অধোগমনের সময় 100 কিমি. গভীরতার পর থেকে অন্তর্ধানকারী পাতের প্রান্তদেশ ভূগর্ভের তাপের গলে গিয়ে অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমা হিসাবে ভূত্বকের ফাটলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে অ্যান্ডেসাইট লাভা বেরিয়ে এসে সারি সারি আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করে। অ্যান্ডেসাইট লাভায় তৈরি আগ্নেয়গিরির সারিকে অ্যান্ডেসাইট রেখা বলে।

আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমার প্রভাব :

অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমার সান্দ্রতা মধ্যম মানের, এর মধ্যে সিলিকার পরিমাণ 60% এবং দ্রুত প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে সিলিকার পরিমাণ 60%, লোহা ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ 3% এবং এর তাপমাত্রা 1000° সে.। মহাদেশীয় পাতের তলায় যখন মহাসাগরীয় পাতটি প্রবেশ করে, মহাদেশীয় পাতের ফাটলের মধ্যে দিয়ে জল ম্যাগমা চেম্বারে ঢুকে যায় এবং জল উষ্ণ হয়ে গিয়ে ম্যাগমা চেম্বারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন জল ও ম্যাগমার চাপের কারণে ভূপৃষ্ঠের কাছে আগ্নেয়গিরির কাছে বিস্ফোরণ ঘটে এবং অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমা বেরিয়ে আসে। জল ও ম্যাগমার সংযোজনের কারণে অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমার উৎপত্তিতে বিস্ফোরণ ঘটে।


উদাহরণ :

i) অধিক ঘনত্বের নাজকা পাত দক্ষিণ আমেরিকা পাতের নীচে অধো:পতিত হওয়ায় আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয়গিরি গড়ে উঠেছে যেখানে অ্যান্ডেসাইট ম্যাগমা দেখা যায়।

ii) প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে অ্যান্ডেসাইট জাতীয় ম্যাগমা এবং অ্যান্ডেসাইট লাভায় তৈরী আগ্নেয়গিরি দেখা যায়। 


◆◆ রায়োলাইট জাতীয় ম্যাগমা (Rhyolite Magma) :

রায়োলাইট (Rhyolite) শব্দটি 1860 সালে জার্মান ভূতত্ত্ববিদ ফার্দিনান্দ ভন রিচথোফেন (Ferdinand Von Richtho fen) সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। রায়োলাইট শব্দটি গ্রীক শব্দ ‘rhyax’ থেকে এসেছে, যার অর্থ, লাভা স্রোত। রায়োলাইট আগ্নেয়গিরি (Rhyolite volcanoes) সাধারণতঃ মহাদেশীয় ভূত্বক বরাবর বা অ্যান্ডেসাইট আগ্নেয়গিরি যুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়। এই অংশেই রায়োলাইট ম্যাগমা অবস্থান করে। মহাসাগরীয় ভূত্বক বরাবর এটি সৃষ্টি হয় না। এই ম্যাগমার সান্দ্রতা (viscosity) বেশি হয় এবং বিস্ফোরণের মাত্রা অধিক হয়। রায়োলাইট ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরেই শীতল ও কঠিন হয়। এই ম্যাগমা থেকেই গ্রানাইট জাতীয় শিলার (Granitoids) সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ :

i) রাবাউল আগ্নেয়গিরি (Rabaul volcano) অঞ্চলে রায়োলাইট জাতীয় ম্যাগমার অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। আগ্নেয়গিরিটি পাপুয়া নিউ গিনি দেশে অবস্থিত।


ii) উত্তর সুমাত্রায় অবস্থিত টোবা আগ্নেয়গিরি (Toba volcano) রায়োলাইট জাতীয় আগ্নেয়গিরি। বর্তমানে এটি একটি বিশাল হ্রদ যা লেক টোবা (Lake Toba) নামে পরিচিত।

Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)