পাত সঞ্চালন মতবাদের স্বপক্ষে প্রমাণ (Evidences in favour of Plate Tectonic Theory)

◆পাত সঞ্চালন মতবাদের স্বপক্ষে প্রমাণ (Evidences in favour of Plate Tectonic Theory) :

ভূ-ত্বক যে কতকগুলো পাতের সমন্বয়ে গঠিত এবং ঐ পাতগুলো সর্বদা গতিশীল রয়েছে সে সম্পর্কে আর কোম সন্দেহের অবকাশ নেই। পাতগুলোর অস্তিত্ব ও গতিশীলতা সম্পর্কে প্রমাণস্বরূপ ভূ-বিজ্ঞানীগণ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপস্থাপন করেছেন-


(i) পাতের সম্প্রসারণ গতি : 

এ গতির প্রভাবে সীমানা হতে পাতগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যে আলাদা আলাদা ভূ-খণ্ড গঠন করছে প্রায় প্রতিটির বিপরীত দিকের ভূ-খণ্ডের প্রান্ডের সাথে যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এদেরকে যদি সঙ্কুচিত করে পুনরায় একত্র করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে তারা পরস্পর পরস্পরে অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে মিলে যাবে। এভাবে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উভয় দিকে অবস্থিত ইউরোপ মহাদেশ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া উপদ্বীপ ও নলা পরস্পরের সাথে মিলে যাবে। অনুরূপভাবে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব প্রান্ত এবং আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্ত পরস্পরের সাথে সম্পূর্ণভাবে মিলে যাবে। এছাড়া লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং ক্যালিফোর্নিয় উপসাগরের উভয় দিকে অবস্থিত স্থলভাগগুলোর মধ্যেও যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।


(ii) ভূকম্পন তরঙ্গ (Seismic wave):  

   ভূ-কম্পন তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেও পাতগুলোর গতিশীলতার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফাটল (cracks) বা (fault) কারণে সৃষ্ট ভূকম্পন তরঙ্গ (scismic wave) যদি একই সাথে বিভিন্ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহ করা হয় তা হলে। উক্ত ফাটল বা চ্যুতির দিকস্থিতি (Orientation), আন্দোলনের দিক প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়। পাতগুলো গতিশীল বলে উক্ত ফাটল বা চ্যুতির দিকস্থিতি ও আন্দোলনের দিক তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এ থেকে বোঝা যায় পাতগুলে সর্বদা গতিশীল।


(iii) মহাসাগরের উভয় প্রান্তের সম্প্রসারণ গতি :

বুলার্ড (Bullard) ও অন্যান্যরা 1965 সালে একটি মানচিত্রের সাহায্যে দেখান যে, আটলান্টিকের উভয় পালে মধ্যে অদ্ভুত সাযুজ্য রয়েছে। এই মিল আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যদি কেউ প্রান্তভাগ হিসেবে উপকূলকে না ধরে মহীসোপানত গণ্য করে। এরূপ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উভয় দিকে অবস্থিত ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া উপদ্বীপ ও গ্রীনলাচ পরস্পরের সাথে মিলে যাবে এবং দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব প্রান্ত ও আফ্রিকার পশ্চয় প্রাস্ত অতি সুন্দরভাবে মিলে যাবে। তাছাড়া লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের উভয় প্রতে অবস্থিত স্থলভাগগুলোর মধ্যেও অনুরূপ মিল লক্ষ্য করা যায়।

(iv) পৃথিবীর চৌম্বকত্ব (Magnetism of the Earth) :


পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র সংক্রান্ত পরীক্ষাকার্য হতেও পাতগুলোর গতিশীলতার পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়। পৃথিটি চৌম্বকক্ষেত্র অতীতে বার বার স্থান পরিবর্তন করেছে। এমনকি কখনও কখনও উত্তর চুম্বকমেরু দক্ষিণ চুম্বকমের পরিণত হয়েছে আবার কখনও এর উল্টোটি হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রসারণশীল পাতের সীমানা বরাবর রৈখিক (liamar) চৌম্বক বিচ্যুতি (Magnetic Anomaly) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। উপরোক্ত তথ্যাদির সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের দ্বারা পাতগুলো অবস্থান, পাত সীমানা, এদের গতির প্রকৃতি, পর্যায় ও মাত্রা পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়।

(v) আগ্নেয়গিরির অবস্থান : 

পাত-সীমান্ত বরাবর রৈখিকভাবে আগ্নেয়গিরিগুলোর অবস্থান হতেও পাত সঞ্চালনের সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। কোন নির্দিষ্ট দিকে গতিশীল কোন পাতে যদি অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি বিদ্যমান থাকে তাহলে দেখা যাবে যে এর বিপরিত দিকের আগ্নেয়গিরিগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে অধিক নবীন। এ থেকে বোঝা যায় যে ভূ-গর্ভস্থ কোন নির্দিষ্ট আগ্নেয় কেন্দ্রের  ওপর দিয়ে কোন পাত অতিক্রম করলে তার ওপর নতুন নতুন আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হবে। পাত যতোই অগ্রসর হবে তার সম্মুখভাগের আগ্নেয়গিরি গুলো ততোই পুরাতন হবে।

Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)