Geography: ত্রিপাত সম্মেলন টি আলোচনা কর-geographyhonour
(Tripple Jucnction) :
ধারণা (Concepts) :
ত্রিপাট সম্মেলন এমন একটি পাত সীমানা যেখানে তিনটি পাত এসে মিলিত হয়। অর্থাৎ তিনটি পাতের মিলনস্থলকে বলা হয়। এক্ষেত্রে ভূত্বকের অন্তর্ধান বা পাশাপাশি সরে যাওয়া যেকোনো প্রিপাত সম্মেলন (Triple Junction) অবস্থাতেই ঘটতে পারে। অনেক সময়ে Y” আকারের ত্রিপাত সম্মেলন ক্ষেত্র বরাবর দুটি বাহু সক্রিয় থাকে এবং একটি বাহু নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এই নিষ্ক্রিয় বাহু অলাকোজেন (Aulacogen) নামে পরিচিত।
ত্রিপাট সম্মেলনে তিন পাত সীমানার ধরন তিন রকম। যথা—শৈলশিরা (R); সমুদ্রখাত (T) এবং ট্রান্সফর্ম চ্যুতি (F)। ত্রিপাত সম্মেলনে পাতসীমাগুলি নিম্নলিখিত প্রকৃতির হয়ে থাকে—
(ক) ট্রান্সফর্ম চ্যুতি ট্রান্সফর্ম চ্যুতি-সমুদ্রখাত (F-F-T)।
(খ) শৈলশিরা-শৈলশিরা-শৈলশিরা (R-R-R)
(গ) সমুদ্রখাত-সমুদ্রখাত-সমুদ্রখাত (T-T-T) ইত্যাদি।
1969 সালে আমেরিকান ভূপদার্থবিদ উইলিয়াম জেসন মরগান (Williom Jason Morgan, 1935), ব্রিটিশ পদার্থবিদ ডান পিটার মেকেঞ্জি (Dan Peter McKenzie, 1942-) এবং আমেরিকান ভূপদার্থবিদ তানয়া আলওয়াটার (Tanya Alwater. 1942) যৌথভাবে 'নেচার' (Nature) পত্রিকায় একটি গবেষণা পত্র ("Evolution of Tripple Junction) প্রকাশ করে সর্বপ্রথম 'ত্রিপাত সম্মেলন'-এর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দেন।
• তাৎপর্য বৈশিষ্ট্য :
(I) ত্রিপাত সম্মেলন ভূত্বকের বিভিন্ন অংশে উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে পর্যালোচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ আমরা জানি যে পাতের নির্দিষ্ট অংশে– (ক) প্রতিসারী, (খ) অভিসারী, (গ) স্পর্শজনিত চলন ঘটে থাকে। কিন্তু ত্রিপাত সম্মেলনের ক্ষেত্রে পাতের ধরন কোনো একটি নির্দিষ্ট নয়। পাতের কোন অংশে অভিসারী, কোন অংশে প্রতিসারী চলন দেখা যায়। ফলে পাতের যে অংশে এই ত্রিপাত সম্মেলন দেখা যায়, সেখানে ভূমিরূপ উদ্ভব ও বিকাশ অনেক উটিল আকার ধারণ করে যা অনেক ক্ষেত্রে পাত সংস্থান তত্ত্বকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
(2) ত্রিপাত সীমানায় শৈলশিরা (R), খাত (T) ও ট্রান্সফর্ম চ্যুতি (F) প্রভৃতি দেখা যায়। এই অংশ বরাবর পাত সঞ্চালন হয়ে থাকে এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।
(3) ত্রিপাত সীমানা বরাবর বহু সক্রিয় আগ্নেয়গিরি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ গ্রস্থ উপত্যকা অঞ্চলে এরূপ আগ্নেয়গিরি দেখা যায়। এছাড়া হোর্স্ট এর ওপর ফ্লাড (Flood Basalt) স্ত দেখা যায়।
(4) ত্রিপাত সম্মেলন বরাবর বিশেষ ট্রান্সফর্ম সীমানায় প্রায়শই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। মেন্ডোসিনো ত্রিপাত সম্মেলন (MTJ) যেখানে উত্তর আমেরিকা পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, পাত (Gorda Plate) সম্মিলিত হয়েছে সেখানেই প্রায়শই ভূকম্পীয় তরঙ্গের প্রমাণ পাওয়া যায়।
(5) এই ধলটি স্থিতিশীল বা অস্থিতিশীল যা সমভাবে পাতের চলনের ওপর নির্ভর করে।
(6) এই স্থানে হোর্স্ট ও গ্রাবেন। জাতীয় গিঠিত ভূমি গড়ে ওঠে যা পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ গ্রন্থ উপত্যকা অঞ্চলে দেখা যায়।
উদাহরণ :
(1) F-F-T সম্মেলন :উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের কাছে আন্দিজ চ্যুতি (F), মেন্ডোসিনো (Mendocino fault) চ্যুতি (F) এবং উত্তর আমেরিকা পাত (T) একত্রে মিলিত হয়ে যে ত্রিপাত সংযোগ হয়েছে, তা মেন্ডোসিনো ত্রিপাত সম্মেলন (Mendocino Tripple Junction) নামে পরিচিত।
(2) R-R-R সম্মেলন :
ক) লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ গ্রস্ত উপত্যকা সংযোগস্থল একটি ত্রিপাত সম্মেলন যাকে আফার ট্রায়াঙ্গেল (Afar Triangle) বলে এবং এটি R-R-R-এর উদাহরণ।
(খ) আন্টার্কটিকা পাত, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান পাত ও আফ্রিকান পাত দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের নিকট একে অপরের সাথে সম্মিলিত হয়েছে যা রডরিওয়েস ত্রিপাত সম্মেলন (Rodrigues Triple Junction) নামে পরিচিত।
(গ) নাজকা পাত, কোকো পাত (উত্তর আমেরিকা ও নাজকা পাতের মধ্যে অবস্থিত) এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত যেখানে সম্মিলিত হচ্ছে তাকে গালা পাগোস ত্রিপাত সম্মেলন (Gala-pagos Triple Junction) নামে পরিচিত।
(3) T-T-T সম্মেলন :
ওখোটস্ক (Okhotsk) পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত এবং ফিলিপাইন সাগর পাতগুলি জাপানের কাছে মিলিত হয়েছে, যা বোসো ত্রিপাত সম্মেলন (Boso Tripple Junction) নামে পরিচিত।
Comments
Post a Comment