বেনিরফ জোন (Benioff Zone) ,(Concept of the Beni off Zone)
বেনিরফ জোন (Benioff Zone) :
ধারণা (Concept) :
অভিসারী পাত সীমানায় একটি মহাদেশীয় পাত (Sial) মহাসাগরীয় পাতের (Sima) সম্মুখীন হলে মহাসাগরীয় পাত ভারী হওয়ায় হালকা মহাদেশীয় পাতের তলায় নিমজ্জিত হয়। এই ঘটনাটিকে অধোগমন বা নিমজ্জন বলে এবং যেখানে প্রবেশ করে তাকে অধোগমন মন্ডল বা নিমজ্জন মন্ডল বলে (Subduction zone) । এই নিমজ্জন সীমানা বরাবর মহাসাগরীয় পাতটি হ্যালানো অবস্থায় অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের মধ্যে প্রবেশ করে। এভাবে পাত সীমানার সমান্তরালে বা যে কোণে মহাদেশীয় পাতটি নীচের দিকে নামতে থাকে, এই নিম্নবর্তী অঞ্চলকে বেনিয়ফ মন্ডল বা Benioff zone বলে।
― বেনিয়ফ জোন এর প্রবক্তা: 1949 সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এর ভূমিরূপবিদ ভিক্টর হুগো বেনিয়ফ (Victor Hogo Benioff, 1899-1968) সর্বপ্রথম এই অঞ্চলটি চিহ্নিত করেছেন। তাই তার নাম অনুসারে বেনিয়ফ জোন (Benioff Zone) নামকরণ করা হয়েছে। হুগো বিনিয়ফ কারমাডেক টোঙ্গা অবনমন অঞ্চল (Kchnadec Tonga subduction) ও দক্ষিণ আমেরিকান অবনমন অঞ্চলের উপর গবেষণা করে উক্ত অঞ্চলটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেন। 1935 সালে সম্পূর্ণভাবে এককভাবে জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (Japan Meteorological Agency) ভূমিরূপবিদ কিয়ো ওয়াদাতি (Kiyoo Wadati, 1902 1995) উক্ত স্থান নিয়ে গবেষণা করেন এবং চিহ্নিত করেন। সেই জন্য পরবর্তী সময় এই ঢালু সীমান্তকে বেনিয়ক -ওয়াদাতি জোন (Benioff wadati zone) বা ওয়াদাতি-বেনিয়ফ জোন (Wadati-Benioff Zone) বা বেনিয়ক ভূমিকম্প অঞ্চল (Benioff Seismic zone) নামে অভিহিত করা হয়।
→ বেনিয়ক জোনের (Benioff- Zone) এর বৈশিষ্ট্য :
1. সাধারণত ঢাল বেনিয়ক মন্ডলের ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে 30°-80° কোণে অবস্থান করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্র এই ঢালের কৌণিক অবস্থান 45°-এর কাছাকাছি হয়।
2. এই অঞ্চলটি দীর্ঘ এবং সংকীর্ণ হয় যা মহাদেশীয় পাতের সমান্তরালে অবস্থান করে।
3. বেনিয়ফ অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ হয়ে থাকে। নিমজ্জিত মহাসাগরীয় পাতের বিভিন্ন অবস্থানে ভূমিকম্পের পার্থক লক্ষ্য করা যায়।
4. ভূঅভ্যস্তরের 70-300 কিমি গভীরতায় বেনিয়ফ অঞ্চলটি অবস্থিত।
বেনিয়ফ জোনে অধগমন বা নিমজ্জন পদ্ধতি :
পাত সংস্থান মতবাদ অনুযায়ী যখন পরস্পর অভিমুখী দুটি পাত, একটি মহাসাগরীয় পাত ও অন্যটি মহাদেশীয় পাত একে অপরের দিকে অগ্রসর হয় তখন ভারী সামুদ্রিক পাতটি মহাদেশীয় পাতের নীচে ঢুকে যায়। ঢুকে যাওয়ার এই পদ্ধতিকে অধগমন বা নিমজ্জন পদ্ধতি বলে এবং এই অঞ্চলটি অধগমন অঞ্চল নামে পরিচিত। এই পদ্ধতির মাধ্যমে মহাসাগরীয় পাতটি দ্রুত অ্যাসথেনোস্ফিয়ারে প্রবেশ করে এবং তার চাপে মহাদেশীয় পাতটির সামনের অংশে ফাটল এবং ধনুকের মত একটি বাঁকের সৃষ্টি করে যা থেকে থেকে মহীখাতের উদ্ভব ঘটে এবং যার পরবর্তী পর্যায়ে ভঙ্গিল পর্বতমালা সৃষ্টি করে। মহাসাগরীয় পাতটি একটি নির্দিষ্ট কোণে প্রবেশ করে। এই অংশ বেনিয়ফ মন্ডল নামে পরিচিত। যত দ্রুত মহাসাগরীয় পাতটি অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের মধ্যে প্রবেশ করে ততই সেই স্থানটিতে বেনিয়ফ মন্ডল তৈরী হয়। এবং এই অংশটি ভূমিকম্পপ্রবণ প্রায় 700 কি.মি. পর্যন্ত এই পাতটি নিম্নে ঢুকতে পারে।
নিম্নমুখী পাতটির ওপর বিভিন্ন মাত্রায় ভূমিকম্প লক্ষ্য করা যায়। ইে ভূমিকম্পের কেন্দ্রগুলি তিনরকম গভীরতায় অবস্থিত।
1. অগভীর উৎসের কেন্দ্র ভূমিকম্প কেন্দ্রে 50 কি.মি. এর মধ্যে অবস্থান করে।
2. মাঝারি গভীরতা যুক্ত উৎসের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প কেন্দ্র 50-250 কি.মি. এর মধ্যে অবস্থান করে।
3. বেশি গভীর উৎসযুক্ত ভূমিকম্প ক্ষেত্রে ভূমিকম্প কেন্দ্র 250-650 কি.মি. এর মধ্যে অবস্থান করে। ভূমিকম্পপ্রবণ এই ভূত্বকীয় অংশ ভূত্বকীয় অঞ্চল নামে পরিচিত অর্থাৎ মহাসাগরী পাতের যতটা অংশ অধঃগমন করবে তার ওপরে নির্ভর করবে বেনিয়ফ জোন বা ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল।
তাৎপর্য (Significance) :
(i) বেনিয়ফ জোন দ্বারা ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলকে চিহ্নিত করা যায়।
(ii) এই অঞ্চলটিতে মহীখাতের সৃষ্টি হয় এবং এই স্থানে পরবর্তী পর্যায়ে ভঙ্গিল পর্বতমালা গঠন করে। এই দিক থেকে অঞ্চলটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
(iii) ভূগাঠনিক দিক থেকে অঞ্চলটি সক্রিয়। ঐ অংশে পাতের গতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়, তার কারণে স্থানটি ভূমিরূপের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই স্থানে আগ্নেয় দ্বীপমালা গঠিত হয় অর্থাৎ প্রতিনিয়ত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়েছে।
(iv) যখন দুটো মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয় এবং একে অপরকে ধাক্কা মারে তখন সেই স্থানে সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
(v) দুটি পাতের সংঘর্ষের ফলে একটি ভারী পাত অন্যটির তলায় অবনমন ঘটে। এই অবনমনের সময় অনেক সময় পাতের ভাঙ্গন ঘটে সেখানে থেকে ম্যাগমার উদগীরণ ঘটে।
vi) পাত সীমান্ত অঞ্চলে অনেক সময় সমুদ্র খাতেরও সৃষ্টি হয়
Comments
Post a Comment