অষ্টম শ্রেণীর চতুর্থ অধ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত প্রশ্নউত্তর
Sort Question(2 or 3 Marks)
[ বিষয়- চাপবলয় ও বায়ুপ্রবাহ
* 1. কৰ্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়কে '‘শাস্তবলয়’ বলার কারণ কী? *
উত্তর: উভয় গোলার্ধে 25°-35° অক্ষরেখার মধ্যে অবস্থিত ক্রান্তীয় (কর্কটীয় ও মকরীয়) অঞ্চলে বায়ুর উচ্চচাপ অবস্থান করে। এই অঞ্চলে বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহ থাকে না। যে কারণগুলির জন্য উভয় ক্রান্তীয় অঞ্চলকে শান্তবলয় বলা হয়, তা হল
■ ৱিক্ষিপ্ত বায়ুপ্রবাহ্ : উচ্চচাপ বলয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বিক্ষিপ্ত হওয়া বায়ু শীতল ও ভারী হয়ে নীচের দিকে নামতে থাকে। ফলে, বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহ না হওয়ায় বায়ুপ্রবাহ বোঝা যায় না। বলয় দুটিতে শান্তভাব বিরাজ করে।
■ নিম্নচাপ থেকে উচ্চচাপের দিকে বায়ুপ্রবাহ : ক্লাস্তীর অঞ্চলের একদিকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এবং অন্যদিকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অবস্থিত। ফলে বায়ু উভয় দিকের নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এই অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে শাস্তভাব বজায় থাকে। তাই কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়কে শান্তবলয়’ বলা হয়।
2. অশ্ব অক্ষাংশ বরাবর পালতোলা জাহাজগুলি গতিহীন হয়ে পড়ত কেন?
উত্তর: অশ্ব অক্ষাংশ অর্থাৎ, উভয় গোলার্ধে 25°-35° অক্ষাংশের মধ্যে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়ে শীতল ও ভারী বায়ুর নিম্নমুখী স্রোত লক্ষ করা যায়। বায়ুর কোনো অনুভূমিক প্রবাহ দেখা যায় না। ফলে, বায়ুপ্রবাহের অভাবে এখানে পালতোলা জাহাজগুলি গতিহীন হয়ে পড়ে।
3.‘আয়ন বায়ুকে ‘বাণিজ্য বায়ু’ বলা হয়’ – কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর আয়ন বায়ুর ইংরেজি নাম 'Trade Wind', যার অর্থ ‘বাণিজ্য বায়ু’। কারণ— ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে উভয় গোলার্ধের 5°-25° অক্ষাংশের মধ্যে সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট গতিতে একইদিকে আয়ন বায়ু (আয়ন শব্দের অর্থ ‘পথ’) প্রবাহিত হয়। তাই প্রাচীনকালে এই বায়ুপ্রবাহের পথ ধরে নাবিকেরা পালতোলা জাহাজে করে বাণিজ্য করত ৷ তাই এই বায়ুকে ‘বাণিজ্য বায়ু’ নামকরণ করা হয়েছে।
4.দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ বেশি কেন?
উত্তর: উত্তর গোলার্ধে পশ্চিমা বায়ুর প্রবাহপথে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগের বিস্তার বেশি হওয়ায় ঘর্ষণজনিত বাধার কারণে বায়ুর গতিবেগ কম হয়। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের বিস্তার বেশি হওয়ায় পশ্চিমা বায়ু এখানে প্রবল গতিতে বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হয়। তাই এখানে পশ্চিমা বায়ুকে ‘সাহসী পশ্চিমা বায়ু’ বা ‘প্রবল পশ্চিমা বায়ু’ বলে। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে গর্জনশীল চল্লিশা, 50° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে ক্রোধোন্মত্ত পঞ্চাশ, 60° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট বলে।
5. মেরু বায়ু শীতল হয় কেন?
উত্তর: মেরু বায়ু মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় (80°–90° উত্তর/ দক্ষিণ) থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর এই দুই মেরুদেশীয় অংশে সূর্যরশ্মি সারাবছরই অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ায় উন্নতা প্রায় হিমাঙ্কের নীচে থাকে। এই শীতল অঞ্চল থেকে মেরু বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় এই বায়ুও অত্যন্ত শীতল হয়।
6. 'পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয়’- তার কারণ ব্যাখ্যা করো। অথবা, পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল অপেক্ষা শীতকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর:- উত্তর গোলার্ধে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর ধরে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। এই পশ্চিমা বায়ু শীতকালে মহাদেশগুলির পশ্চিমভাগে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর কারণ—
■জলীয় বাষ্প সংগ্রহ : পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহের সময় পশ্চিমা বায়ু আটলান্টিক মহাসাগর বা ভূমধ্যসাগর বা প্রশাস্ত মহাসাগর-এর উপর দিয়ে প্রবাহের সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে এবং মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায় ৷
■ অতি শীতল স্খলভাগ : শীতকালে স্থলভাগ, জলভাগ অপেক্ষা বেশি শীতল হয়ে পড়ে। ফলে পশ্চিমা বায়ু এই শীতল স্থলভাগের সংস্পর্শে এলে বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প দ্রুত ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এজন্য পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা শীতকালেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
● মহাদেশগুলির পশ্চিমভাগে প্রথম প্রবেশ : পশ্চিমা বায়ু সমুদ্রের ওপর দিয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করার সময় জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগ দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে। ফলে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে আগে এসে পৌছায় বলে সেখানকার উচ্চভূমিতে বাধা পেয়ে পশ্চিমা বায়ু বেশি বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে থাকে। এরপর যতই পূর্বদিকে অগ্রসর হয় ততই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমতে থাকে বলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমতে থাকে।
7. মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ু বলার কারণ কী? ★
উত্তর:- সারাবছর প্রবাহিত না হয়ে বছরের বা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ুপ্রবাহ বলে। যেমন— মৌসুমি বায়ু। মৌসুমি বায়ু সারাবছর প্রবাহিত না হয়ে গ্রীষ্ম ও শীত দুটি নির্দিষ্ট ঋতুতে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। যেমন- গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ু বলা হয়।
8.* প্রতীপ ঘূর্ণবাতে শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে কেন?
উত্তর:- প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে চারদিকের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের মধ্যে পার্থক্য কম হওয়ায় বায়ুর গতিবেগ কম হয়। আবার, এই বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় ক্রমশ উঘ্ন হতে থাকে ও জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করতে পারে না, বৃষ্টিও হয় না। এই কারণে প্রতীপ ঘূর্ণবাতে মেঘমুক্ত, শান্ত ও রোদ ঝলমলে আবহাওয়া দেখা যায়।
9. অক্টোবর মাসেও আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। বর্ষার সময়কাল কি পিছিয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের উদ্ভব হয়। প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ু ও সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে শক্তিশালী ঘূর্ণবাত বা সাইক্লোনের উদ্ভব হয়। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের রাজ্যগুলিতে আকাশে কালো মেঘের সঞ্চার হয় এবং প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। এই ঝড় সাধারণত আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত (যেহেতু বাংলা মাস অনুযায়ী আশ্বিন মাসে সংঘটিত হয় বলে)। আশ্বিনের ঝড়ের প্রভাবে প্রতি বছরই সাধারণত অক্টোবর নভেম্বর মাসে বৃষ্টিপাত হয় ৷
অন্যদিকে সাম্প্রতিককালে জনবিস্ফোরণ, নগরায়ণ,
শিল্পস্থাপন জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যধিক ব্যবহার প্রভৃতির ফলে বিশ্বের সামগ্রিক তাপমাত্রা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনা বিশ্ব উয়ায়ন হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। CO,-এর পরিমাণ বৃদ্ধি, ওজোন স্তরের হ্রাস প্রভৃতির ফলস্বরূপ ঘটা বিশ্ব উস্লায়নের জন্য নিম্নচাপজনিত ঝড় বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে সাধারণত যে সময়ে আশ্বিনের ঝড় সংঘটিত হয় সেই সময়েও অত্যধিক পরিমাণ স্থানীয় নিম্নচাপ সংঘটিত হচ্ছে।
এই উপরিউক্ত সব ঘটনার ফলস্বরূপ অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঘনঘন নিম্নচাপ ও ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় এবং মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনের সময়কাল পিছিয়ে যায়।
10. অক্টোবর হিট' কী?
উত্তর:- অক্টোবর মাসের আবহাওয়াকে ভারতীয় উপমহাদেশে 'অক্টোবর হিট' (October Heat) বলে। এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রত্যাবর্তন করায় উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও আকাশ পরিষ্কার থাকে। এটি বর্ষার শেষ ও শীতের শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী পর্যায়।
11.শীতকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয় না কেন?
উত্তর: শীতকালে সূর্যের দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শুষ্ক ও শীতল মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। স্থলভাগের উপর দিয়ে এই বায়ু প্রবাহিত হয় বলে এতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে। ফলে, শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের অভাবে মৌসুমি বায়ু দ্বাপ বৃষ্টিপাত হয় না।
12. রাজস্থানে গ্রীষ্মকালে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় – কেন?
উত্তর: গ্রীষ্মকালে এপ্রিল-মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতে তথা রাজস্থানে পশ্চিম দিক থেকে বিশেষত দুপুরবেলায় একপ্রকার অত্যধিক উষ্ম ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, যা ‘লু’ নামে পরিচিত। এই উদ্বৃ বায়ু বালুকাময় উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুর প্রভাবে রাজস্থানের দিনেরবেলা উয়তা 40°-50°C পর্যন্ত হয়। তীব্র গরমে প্রচুর মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায়, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ঝলসে যায়। এই বায়ু সকাল 10 টার পর থেকে প্রবাহিত হয় এবং দুপুরে এর গতিবেগ (30-40 km/hr) সবচেয়ে বেশি হয়। এর প্রভাবেই রাজস্থানে গ্রীষ্মকালে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়।
MORE
Comments
Post a Comment