Population geography; Defination ,concept and Objective - geographyhonour
জনসংখ্যা ভূগোলের সংজ্ঞা (Definition of Population Geography)
জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি (Scope of Population Geography
জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের উদ্দেশ্য (Objectives of Study Population Geography)
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
জনসংখ্যা ভূগোলের সংজ্ঞা (Definition of Population Geography) :
সামাজিক ও মানবীয় ভূগোলের অন্যতম শাখা হল জনসংখ্যা ভূগোল। 1950 সালের পরবর্তী সময়ে এই শাখা আত্মপ্রকাশ করে এবং তা ক্রমে ক্রমে ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ শাখায় রূপান্তরিত হয়। জনসংখ্যা ভূগোল কোন অঞ্চলের জনসংখ্যার গঠন, বৃদ্ধি, জন্ম, মৃত্যু, পরিযান প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। শুধু তাই নয়, জনসংখ্যা ভূগোলে জনসংখ স্থানগত ও সময়গত বন্টনের বিশ্লেষণ করা হয়। (Population Geography is concerned with the spatis temporal analysis of the population)। জনসংখ্যা ভূগোলকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভৌগোলিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সংজ্ঞায়িত করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল—
1. অধ্যাপক জি. টি. ট্রিওয়ার্থ (G. T. Trewartha) :
1953 সালে Trewartha তাঁর রচিত 'The Geography of Population' গ্রন্থে সর্বপ্রথম জনসংখ্যা ভূগোগতে সংজ্ঞায়িত করেন। তাঁর মতে, “যে সমস্ত ভৌগোলিক উপাদানগুলি দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে যেগুলি এককভাবে বা সমবেত ভাবে গুরুত্ব দাবি করেন করে তাদের সমস্ত বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে জনসংখ্যা।" (Population serves as the point of reference from which all other geographic elements are observed and from which they all, sighly and collectively desire significance and meaning),
2. জন আই. ক্লার্ক (John I. Clarke) :
ক্লার্ক-এর মতে, “অঞ্চল বা এলাকার প্রকৃতিগত স্থানিক পার্থক্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত জনসংখ্যার বন্টন, কাঠামো অভিগমন এবং বৃদ্ধির যে স্থানিক পার্থক্য হয়ে থাকে তা প্রদর্শন করাকে জনসংখ্যা ভূগোল বলে” (Population Geography. is concerned with demonstrating how spatial variation in distribution, composition, migration and growth of population are related to the spatial variatians in the nature of Places).
3. উইলবার জেলিনস্কি (Willbur Zelinsky) :
ক্লার্ক Clarke-এর পরবর্তী সময়ে প্রখ্যাত আমেরিকান ভূগোলবিদ জেলিনস্কি জনসংখ্যা ভূগোলের প্রকৃতি নিয়ে গবো। করেন এবং তিনি বলেন “কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এলাকার সমস্ত মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচন করে জনসংখ্যা ভূগোল" (Population Geography is the studies of spatial aspects of population the contents of the aggregate of nature and places).
4. বিজু গার্নিয়ার (Beaujeu Garnier) :
ফরাসি ভূগোলবিদ বিজু গার্নিয়ার তার ‘Goography of Population' গ্রন্থে বলেন- “Population Geography is concerned with describing the demographic factors in their Present environmental context, studying also the causes, their original characteristics and possible consequences” অর্থাৎ বর্তমান পরিবেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন জনমিতির নিয়ন্ত্রকগুলোর প্রকৃত বৈশিষ্ট্য এবং তাদের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করাই হল জনসংখ্যা ভূগোলের বিষয়বস্তু।
5. হ্যাগারস্থান্ড (T. Haggerstrand) :
সুইডিস ভূগোলবিদ হ্যাগারস্টান্ড (Haggerstrand) এর মতে, “সময়ভেদে ভৌগোলিক স্থানের মধ্যে জনসংখ্যার সমীক্ষাই হল জনসংখ্যা ভূগোল" (Population geography is the study of human population with in geographic space over time)। তিনি তাঁর আলোচনায় স্থান ও কালকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন।
6. পি. এফ. গ্রিফেন (P. F. Griffin) :
অধ্যাপক গ্রিফেন -এর মতে “জনসংখ্যার পরিমাণগত ও গুণগত বিষয়ের সাথে ভৌগোলিক এলাকার প্রকৃতি অনুযায়ী জনসংখ্যার বয়স কাঠামো, বন্টন, স্থানাস্তর, পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনাই হল জনসংখ্যা ভূগোল।”
7. মেলেজিন (Melezin) :
রাশিয়ার ভূগোলবিদ মেলেজিন (Melezin) বলেন “জনসংখ্যা ভূগোল হল জনসংখ্যার বন্টন এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উৎপাদনের সম্পর্কের আলোচনা যার মধ্যে জনসংখ্যার শ্রেণী, জনবসতি, কর্মদক্ষতা, সক্রিয়তা, ব্যবহারযোগ্যতা প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ থাকে।” (Population geography is the study of population distribution and productive relationship existing within various groups, the settlements, network and its fitness, usefulness and effectiveness for productive goals of society)
8. বিজ্ঞানী S. A. Qazi-র মতে “জনসংখ্যা ভূগোল হল মানবগোষ্ঠীর বিশেষ অধ্যয়ন” (Population geography is the spatial study of the human population)
জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি (Scope of Population Geography) :
1950 সালের পরবর্তী সময়ে মানবীয় ভূগোলের শাখা রূপে আত্মপ্রকাশ করে জনসংখ্যা ভূগোল এবং তা ক্রমবিকাশের মাধ্যমে ভূগোলে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। জনসংখ্যা ভূগোলের কেন্দ্রীয় বিষয় হল জনতা। কোনো স্থানে জনতার আবির্ভাব, বন্টন, ঘনত্ব, পরিযান, বৈশিষ্ট্য, গঠন প্রভৃতি জনসংখ্যা ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভৌগোলিকগণ তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধির কথা আলোচনা বলেছেন। সাধারণভাবে বলতে গেলে কোনো ভৌগোলিক এলাকায় বিরাজমান বিভিন্ন উপাদান অক্ষুণ্ণ রেখে জনসংখ্যা বিন্যাসের সাধারণীকরণের পদ্ধতি এবং পন্থাই হচ্ছে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি। সাধারণ রীতিনীতির ভিত্তিতে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-
1. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের সমীক্ষা :
এর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার সাক্ষরতা, পরিব্রাজন, জাতিসত্ত্বার গঠন, জাতি, ধর্ম, বৈবাহিক সম্পর্ক ও সামরি মর্যদা প্রভৃতি।
2. জনসংখ্যার অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের সমীক্ষা :
জনসংখ্যার শ্রম শক্তি, আয় ও ব্যয়ের বন্টন, জীবিকা ও বসবাসের মানদণ্ড, উদ্বৃত্ত শ্রমিক, পেশাগত মর্যাদা ও লগ্নির ও শ্রমের ব্যবহার প্রভৃতি সমীক্ষা এই বিষয়ের অন্তর্গত।
3. জনসংখ্যার জৈবিক বৈশিষ্ট্যের সমীক্ষা :
জনসংখ্যার জৈবিক বৈশিষ্ট্য যেমন—জন্মহার, মৃত্যুহার, বয়স, লিঙ্গ অনুপাত, বয়স কাঠামো, বয়স পিরামিড, জঙি ও ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ের সমীক্ষা।
নিম্নে ভূগোলের পরিধি নিয়ে বিভিন্ন ভৌগোলিকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নে আলোচিত করা হল—
1. পুঁজিবাদী ভূগোলবিদদের ব্যাখ্যা (Explanation of Capitalist Geographers ) :
জন, আই, ক্লার্ক (John, I. Clarke) -এর মতে, মানুষের আপেক্ষিক সংখ্যা, জনসংখ্যার সামাজিক, অর্থনৈছিল। ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, জনসংখ্যার গতিশীলতা, মানুষের বয়স কাঠামো, স্ত্রী-পুরুষ অনুপাত, বৈবাহিক অবস্থা, পরিবার বাসস্থান, শিক্ষা, ধর্ম, ভাষা এবং আয় ও মানুষের পরিমাণগত ও গুণগত দিক জনসংখ্যা ভূগোলের প্রধান পরি
2. জেলিনস্কি (Zelinsky) :
তার মতে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসরত জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং কারণসমূহ বিশ্লেষণই জনসংখ্যা ভূগো পরিধির আওতায় আসবে। জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি হিসাবে তিনি জৈবিক বৈশিষ্ট্য (লিঙ্গ, বয়স, জাতি), অর্থনৈষ্টিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং পরিবর্তনশীল উপাদানগুলিকে ব্যাখ্যা করেন।
3. ট্রিওয়ার্থ (Trewartha) :
জনসংখ্যা ভূগোল মানুষ এবং তার আর্থসামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে তাঁর মতে, জনসংখ্যার বন্টন (Population Distribution), জনসংখ্যার ঘনত্ব (population density), পরিব্রাজন (Migration) এবং ও পরিমাণগত অনুসারে মানুষের আঞ্চলিক বন্টনের ধরন জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধির আওতায় আসবে।
4. বিজু গার্নিয়ার (Beaujeu Garnier):
ভৌগোলিক বিজু গার্ণিয়ার ভূগোলের পরিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে। তার মতে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিি হল বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার অঞ্চলগত বন্টন। ভৌগোলিক এলাকার ভিত্তিতে সমাজের পরিবর্তন, জনসংখ্যার ভৌগোলি ও ঐতিহাসিক ধরন যেমন–বিবাহ, জন্ম, মৃত্যুর হার, স্ত্রী-পুরুষ অনুপাত প্রভৃতি।
2. সমাজতন্ত্রী ভৌগোলিকদের ব্যাখ্যা (Explanation of Socialist Geographers) :
জনসংখ্যা ভূগোল সম্পর্কে সমাজতন্ত্রী ভৌগোলিক যেমন মেলেজিন (Melezin) ও মার্কস (Marx) পোষণ করেন। তারা মনে করেন মানুষের উৎপাদনশীল দৃষ্টিভঙ্গির উপর জনসংখ্যার বন্টন নির্ভর করে।
1. ভৌগোলিক মেলেজিন (Melezin) এর মতে, “জনবসতির বৈশিষ্ট্য, জনবসতির উপর প্রাকৃতিক উপাদান প্রভাব, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধরন, কোনো শহর ও নগরের ভৌগোলিক অবস্থান শিল্প অভিবাসন, পরিব্রাজন জনগ ভূগোলের অন্যতম পরিধি”।
2. মার্কসীয় চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ভৌগোলিকরা পৌর ও গ্রামীণ বসতি ভূগোল, জনসংখ্যা ও ঐতিহাসিক ভূগোল, নৃতাত্ত্বিক ভূগোল এবং শ্রমসম্পদের ভূগোলকে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি সম্পর্কে ভূগোলবিদরা একমত না হলেও বেশ কিছু বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি সবাই মেনে নিয়েছেন। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি দাও ক্রমশ বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিভিন্ন ভৌগোলিক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধি সম্বন্ধে মত ভিন্ন পোষণ করেছেন। যদিও এটা বলাই বাহুল্য যে জনসংখ্যা ভূগোলের পরিধির বিষয়বস্তু ক্রম পরিবর্তনশীল এবং গতিশীল তাই এর পরিধি নির্ণয় করা বেশ কঠিন।
। জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের উদ্দেশ্য (Objectives of Study Population Geography) :
মানবীয় ভূগোলের অন্যতম শাখা হল জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography)। ভূগোলবিদ R.J.Johnston বলেছেন যে, কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি এবং গঠন বিশ্লেষণ করতে গেলে মানুষের জন্ম (Fertility), মৃত্যু (Mortality) এবং পরিব্রাজন (Migration) তিনটি মূল বিষয়কে অনুধাবন করতে হবে। বিভিন্ন ভৌগোলিক ও সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জনসংখ্যা ভূগোলের বিভিন্ন উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন ভৌগোলিকদের জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের উদ্দেশ্যের ভিন্ন মতামতগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল—
1. ভৌগোলিক Johnston এর মতে, “জনসংখ্যা ভূগোলের প্রধান উদ্দেশ্য হল জন্ম, মৃত্যু এবং পরিব্রাজন নিয়ে আলোচনা করা।”
"Fertility, Mortality and Migration are at the root of any studies at population growth and composition."
2. Clarke, Zelinsky এবং Trewartha এর মতে, “জনসংখ্যা ভূগোলের মূল উদ্দেশ্য হল স্ত্রী-পুরুষের অনুপাত, মানুষের বয়সের কাঠামো, পরিবার, বাসস্থান, শিক্ষা, ধর্ম, ভাষা ও কর্মধারা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা।”
3. Beaujeu Garnier এর মতে, “জনসংখ্যা ভূগোলের মূল উদ্দেশ্য হল জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ, ধর্ম, বিবাহ, জন্ম-মৃত্যুর হার, স্ত্রী পুরুষের অনুপাত, বয়স, মানুষ জমির অনুপাত প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা।”
4. মার্কসীয় ভৌগোলিকদের মতে, “জনসংখ্যার বন্টন এবং বিভিন্ন দলের উৎপাদনশীলতার পারস্পরিক সম্পর্ক, শ্রম, জনবসতির বিন্যাস প্রভৃতি বিষয়গুলি জনসংখ্যা ভূগোলের মূল উদ্দেশ্য।”উপরোক্ত ভৌগোলিকদের বক্তব্যকে পর্যালোচনা করে জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের মূল উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করা হল
(1) কোনো দেশে কিংবা অঞ্চলের জনসংখ্যার গঠন, জন্ম ও বৃদ্ধির হার, মৃত্যুহার, বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার গঠন কাঠানো বিশ্লেষণ করা হয় ভূগোলের এই শাখার।
(2) মানুষের পরিব্রাজনের কারণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা।
(3)জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও নগরায়ণ এদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা।
(4) জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল ও প্রতিকূল প্রভাব ব্যাখ্যা করা জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের অন্যতম উদ্দেশ্য।
(5) পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে জনবন্টনের স্থানগত ও সময়গত তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ করা।
(6) জনসংখ্যা ভূগোল পাঠের মাধ্যমে কোনো দেশের জনসংখ্যা নীতি (Population Policy) সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।
(7) উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জনসংখ্যার গুণগত মানের তারতম্য কেন ঘটে তা পর্যালোচনা করা হয় এই শাখায়।
Comments
Post a Comment