Class 8:দক্ষিন আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(2/3) ----geographyhonour

Content

 4.'দক্ষিণ আমেরিকাকে 'কাঁচামাল সমৃদ্ধ মহাদেশ হয়'— কারণ ব্যাখ্যা করো


More..........

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

১.আন্দিছ পার্বত্য অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ – কারণ ব্যাখ্যা করো? 

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমের আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চল অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। কারণ- ১. প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশীয় পাতের অভিসারী সীমানায় গড়ে ওঠা আন্দিজ পর্বতমালা একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালা। অস্থিতিশীল দুই পাতের সংযোগস্থলে থাকায় এই নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। 2. আবার, এই পার্বত্য অঞ্চল প্রশান্ত মহাসাগরীয় আমেয় বলয়ের অংশ। তাই এখানে বহু সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। যেমন— চিম্বোরাজো, কটোপ্যাক্সি প্রভৃতি। এইসব আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় এই পার্বত্য অঞ্চল কেঁপে ওঠে। 3. অঞ্চলটি নরম পাললিক শিলায় গঠিত বলে এখানে প্রায়শই ভূমিধস দেখা যায় যা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে। 4. অঞ্চলটির গঠন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে সরণশীল দুটি পাতের সরণের ফলে শিলাচ্যুতি ঘটে। এর ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।


2.‘দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ক্রান্তীয় অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্তে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে' – ব্যাখ্যা করো।★★★

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ক্রান্তীয় অঞ্চলের পশ্চিমাংশে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে, যেমন— আটাকামা মরুভূমি। কারণ: দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু আন্দিজ পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পর্বতের অনুবাত ঢালে অর্থাৎ, আন্দিজ পর্বতমালার পূর্ব দিকে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু এই বায়ু যখন মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত হয় তখন দীর্ঘ পথ স্থলভাগের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার ফলে তাতে আর জলীয় বাষ্প সেরকম থাকে না। ফলে, মহাদেশের পশ্চিমাংশে (আন্দিজ পর্বতমালার প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত) বৃষ্টিপাত সেরূপ হয় না। ফলে, ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও মহাদেশের পশ্চিমাংশে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।


3.'দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলের উন্নতা সারাবছর বেশি থাকে' – কারণ ব্যাখ্যা করো। ★★★ 

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলে উন্নতা সারাবছর বেশি থাকে। কারণ-

১. পর্বতের অবস্থান : দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম। উপকূলে বিস্তৃত রয়েছে সুদীর্ঘ আন্দিজ পর্বতশ্রেণি। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু এই পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, কিন্তু পর্বতের পূর্ব ঢালে এই বায়ুর গতিপথে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি করে। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয় ও শুষ্ক ঋতু বিরাজ করে।

সদুঘস্রোতের প্রভার: দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর ভয় ব্রাজিল স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় এখানে সারাবছর উদ্ভুত। বেশি থাকে।


 4.'দক্ষিণ আমেরিকাকে 'কাঁচামাল সমৃদ্ধ মহাদেশ হয়'— কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশটি নানারকম বনজ, কৃষিজ্ঞ, প্রাণীজ ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এই মহাদেশের সেলভা অরণ্যে মূল্যবান কাঠের বৃক্ষ (মেহগনি, রবার, ব্রাজিল নাট) ও নানা বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। কফি, কোকো, আখ, রবার এই মহাদেশের প্রধান ফসল। বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে গবাদিপশু ও মেষ পালনে দক্ষিণ আমেরিকা বিশ্বে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। ফলে পশম, মাসে, চামড়া প্রভৃতি কাঁচামালের সহজলভ্যতা রয়েছে। সর্বোপরি, এখানে প্রাপ্ত আকরিক লোহা, তামা, নাইট্রেট, রূপা, বক্সাইট, খনিজ তেল প্রভৃতি খনিজ সম্পদকে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যায়। তাই দক্ষিণ আমেরিকাকে 'কাঁচামাল সমৃদ্ধ মহাদেশ' বলা হয়।


5. দক্ষিন আমেরিকা শিল্পে অনুন্নত '-- কারণ ব্যাখ্যা করো

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা শিল্পে অনুন্নত, কারণ-

 ১. খনিজ সম্পদের অভাব: এই মহাদেশে কয়লা, আকরিক,লোহা, খনিজ তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ তেমন পাওয়া যায় না. হলে খনিভিত্তিক শিল্পের কোনো উন্নতি হয়নি।

২. শক্তি সম্পদের অভাব : দক্ষিণ আমেরিকায় তেমন কয়লা পাওয়া যায় না বলে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা যায় না। এ ছাড়া গুলি এত চওড়া যে, নদীতে জলবিদ্যুতের জন্য বাঁধ নির্মাণ বহুল। ফলে, বিদ্যুতের অভাব মহাদেশটিকে শিল্পে অনগ্রসর করে।

৩.যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নতি : উন্ন-আর্দ্র জলবায়ু, সাঁতসেঁতে আবহাওয়া, ভেজা নরম মাটি, প্রশস্ত নদী উপত্যকা, ঘন বনভূমি প্রভৃতির কারণে রেল ও সড়কব্যবস্থা একেবারেই উন্নত নয়। তবে আমাজন নদী বরাবর জলপথ খানিকটা যাতায়াতের সুবিধা দিয়েছে। মহাদেশের অন্যত্র বিশাল পর্বতশ্রেণি যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করে।

৪. পরিকাঠামোর অভাব:  দক্ষিণ আমেরিকার পরিকাঠামো অনুন্নত, ফলে শিল্পায়ন সম্ভব হয়নি।

৫.দক্ষতার অভার: এখানকার মানুষজন কারিগরিবিদ্যায় দক্ষ নন এবং স্বল্প বসতির কারণে শ্রমিক প্রাপ্তিরও অসুবিধা আছে। 


6. দক্ষিণ আমেরিকাকে সম্ভাবনাময় মহাদেশ' বলা হয়' কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। এখানে রয়েছে শক্ত কাঠের বিশাল বনভূমি সেলভা, বিখ্যাত গম খেত ও পশুচারণক্ষেত্র পম্পাস এবং বিশাল খনিজ সম্পদের ভাঙার (খনিজ তেল, লৌহ আকরিক, তামা, নাইট্রেট, টিন, বক্সাইট, দস্তা ইত্যাদি)। কাঁচামালের প্রাচুর্যতার সঙ্গে অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী খরস্রোতা নদী, বিপুল জনশক্তি প্রভৃতি উপাদানগুলিকে সুষ্ঠুভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা গেলে দক্ষিণ আমেরিকাও ভবিষ্যতে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী মহাদেশে পরিণত হবে। তাই একে ‘সম্ভাবনাময় মহাদেশ’ বলে।


7.আমাজনকে 'পৃথিবীর বৃহত্তম নদী' বলা হয় কেন?*

উত্তর:  আমাজন নদী পৃথিবীর বৃহত্তম (সর্বাধিক পরিমাণ) জল বহনকারী নদী এবং দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য 6,437 কিমি। নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রায় সারাবছরই বৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে বৃষ্টির প্রাবল্য এতই বৃদ্ধি পায় যে আমাজনের জল হঠাৎ হয় 12-18 মিটার বেড়ে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তখন এই নদীটি 80-160 কিমি অঞ্চল পর্যন্ত প্লাবিত করে। এ ছাড়া এর অসংখ্য উপনদীবাহিত জলধারা আমাজনে এসে পড়ে। ফলে, আমাজন নদীপথে প্রচুর জল প্রবাহিত হয়। তাই এই নদীকে 'পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নদী’বলা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে মোট যে পরিমাণ জল প্রবাহিত হয় তার প্রায় শতকরা 20 ভাগ একমাত্র আমাজন নদী দিয়ে বয়ে যায়।


8. 'আমাজন অববাহিকাকে পৃথিবীর বৃহত্তম অববাহিকা' বলা হয়' - কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে মিশমি শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে আমাজন নদী তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদী সহ পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থান এবং তার ফলে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে এই নদীটি প্রচুর পরিমাণে জল বহন করে। রিও নেগ্রো, জাপুরা, জুরুয়া, পুরুস, মদিয়া প্রভৃতি আমাজনের প্রধান উপনদী। অধিকাংশ উপনদীর দৈর্ঘ্য ভারতের গঙ্গার থেকেও বেশি। সমগ্র অববাহিকাটির ক্ষেত্রমান প্রায় 70.50 লক্ষ বর্গকিমি যা ক্ষেত্রমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সমান এবং ভারতের ক্ষেত্রমানের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। তাই এটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা।


9. আমাজন নদীর মুখে বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন?***
 

উত্তর: 

 তীব্র জলস্রোত: আমাজন নদী সারাবছর প্রচুর জল বহন করে (সেকেন্ডে 1,16,000 টন), তাই নদীটিতে সর্বদা প্রবল স্রোত লক্ষ করা যায়।

 স্বল্প লবণতা: মোহানা থেকে 200 কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত সমুদ্রের জল ঘোলা থাকে এবং লবণতার পরিমাণ হ্রাস পায়।

 জোয়ারভাটা: প্রবল বেগে জোয়ারভাটা সংগঠিত হয় বলে বদ্বীপ গঠনের জন্য কোনো রকম পলি আমাজন নদীর মোহানায় সঞ্চিত হতে পারে না।

সমুদ্রস্রোত: আমাজন নদীর মোহানায় প্রবল সমুদ্রস্রোত দেখা যায়, ফলে বাহিত পলি সঞ্চিত হওয়ায় সুযোগ পায় না। ফলে, আমাজন নদীর মোহানায় কোনো বদ্বীপের সৃষ্টি হয়নি।


10. আমাজন অববাহিকা শিল্পে অনুন্নত - কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:  আমাজন অববাহিকায় শিল্পোন্নতি না ঘটার কারণ-

দুর্ভেদ্য অরণ্য : আমাজন অববাহিকার সেলভা অরণ্য বিশ্বের গভীরতম অরণ্য। এই অরণ্যের তলদেশ ঝোপ গুগ্ম ও আগাছায় পরিপূর্ণ থাকে। সুতরাং এককথায় বলা যায়, সমগ্র অরণ্যালটি দুর্ভেদ্য। 

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: সমগ্র অঞ্চলটির জলবায়ু উদ্বু, আর্দ্র ও স্যাতসেঁতে, যা অত্যস্ত অস্বাস্থ্যকর। ● হিংস্র ও বিষাক্ত প্রাণীর উপঘর সেলভা বনভূমি হিংস্র পশুপাখি ও বিষাক্ত পোকামাকড়ে পরিপূর্ণ, যা শিল্পস্থাপনে অনুপযুক্ত।

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা: দুর্ভেদ্য জঙ্গল, আর্দ্র মুক্তিকা প্রভৃতি কারণে এখানে পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত মানের। 

কাচামাল অপ্রাচুর্য : কৃষিজ, খনিজ ও অন্যান্য কাঁচামালের অভাব।

শিক্ষা, মূলধন ও উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার অভার:  এখানে শিল্পস্থাপনে প্রধান অন্তরায় হল চরম দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত অনুন্নতি।


11.দক্ষিণ আমেরিকা কৃষিকাজে অনুন্নত -- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা কৃষিকাজে অনুন্নত, কারণ 

নিরক্ষীয় জলবায়ু : দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-মধ্য অংশ

জুড়ে নিরক্ষীয় জলবায়ু বিরাজ করে। এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যই হল প্রায় প্রত্যহ বৃষ্টিপাত। সে কারণে অধিক আর্দ্রতা কৃষিকাজ করতে বাধা দেয়। 

 অরণ্যের প্রাধান্য:  দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকা জুড়ে নিবিড় বনভূমি রয়েছে। এই বনভূমির গাছ কেটে সেখানে চাষ করা হলেও পুনরায় অধিক বৃষ্টির কারণে গাছ জন্মায়। এতে কৃষিকাজ করা প্রায় অসম্ভব।

আদিম পদ্ধতিতে চাষ : দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ স্থানেই এখনো আদিম ঝুমচাষ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। কৃষির আধুনিক পদ্ধতি তাদের অজানা, ফলে কৃষিকাজ নিম্নমানের।

 বহুমুখী চাষের অভাব:  কৃষিতে নানাবিধ চাষের পরিবর্তে কেবল প্রাকৃতিক রবার বা ওক জাতীয় ফসলের চাষ হয় বলে কৃষিকাজ জনপ্রিয় নয়৷

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্তা : নিবিড় অরণ্য হওয়ায় এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। তাই উৎপন্ন দ্রব্য বাজারজাত করার অসুবিধা রয়েছে।


12 'কুইটোকে ‘চিরবসন্তের দেশ’ বলা হয়'—ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত ইকুয়েডর দেশের রাজধানী কুইটো শহরের ওপর দিয়ে নিরক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে বলে এখানে সারাবছর ধরে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ে। আবার, আন্দিজ পর্বতের ওপর প্রায় 4,000/ মিটার উচ্চতায় কুইটো শহরের অবস্থানের দরুন এখানকার উন্নতা সমুদ্র সমতলের উন্নতার চেয়ে অনেক কম। এই দুটি কারণে এখানকার জলবায়ুতে সারাবছর ধরে বসন্তকালের প্রভাব অনুভূত হয়। তাই কুইটোকে ‘চিরবসন্তের দেশ’ বলা হয়।


13.  ব্রাজিলকে 'পৃথিবীর কফিপাত্র' বলে কেন?

উত্তর: দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ হল ব্রাজিল। এখানে রিও ডি জেনিরোর উত্তর থেকে সাও পাওলো পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে প্রচুর কফি চাষ হয়। কারণ—

• এখানকার পাহাড়ের ঢালু জমিতে জল জমতে পারে না, যা কফি চাষের পক্ষে ভালো। 

●কফি ফল শুকোবার উপযোগী শুষ্ক ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া এই অঞ্চলে বিরাজমান।

● কফি চাষের প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত (100-125 সেমি) এই অঞ্চলে হয়ে থাকে। যা কফি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।

● এখানকার লাভা মিশ্রিত লৌহ সমৃদ্ধ উর্বর টেরারোসা প্রকৃতির লালমাটি কফি চাষের পক্ষে আদর্শ।

● এ ছাড়া সাও পাওলো, স্যান্টোস প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কফি রপ্তানির সুবিধা রয়েছে। এই সকল কারণে ব্রাজিল কফি উৎপাদনে বিশ্বে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। এখানকার বৃহৎ কফি বাগিচায় বিশ্বের প্রায় 30% কফি উৎপন্ন হয়। 2016 সালে ব্রাজিলের মোট কফি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল 2,59,500 মেট্রিকটন। তাই ব্রাজিলকে ‘পৃথিবীর কফিপাত্র’ বলা হয়।


14. দক্ষিণ আমেরিকাকে 'বিচ্ছিন্ন মহাদেশ' বলা হয় কেন?

উত্তর: দক্ষিণ আমেরিকা প্রকৃতপক্ষে সমুদ্র পরিবেষ্টিত মহাদেশ। এই মহাদেশের উত্তর ও পূর্ব দিকে আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ দিকে কুমেরু বা দক্ষিণ মহাসাগর অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সংকীর্ণ পানামা যোজক ছাৱা মহাদেশটি আগে উত্তর আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু 1914 খ্রিস্টাব্দে ওই অংশে পানামা খাল কাটার পর আপাত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যদিও জলপথে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তা সত্ত্বেও অন্যান্য মহাদেশ থেকে জলভাগ দ্বারা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। তাই দক্ষিণ আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন মহাদেশ' বলা হয়।


15.মাগল্যান প্রনালী কী?

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে টিয়েরা ডেল ফুয়েগো নামে একটি দ্বীপ রয়েছে। দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মে সংকীর্ণ প্রণালী টিয়েরা ডেল ফুয়েগো দ্বীপটিকে দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, তাকে ম্যাগেলান প্রণালী পোর্তুগিজ নাবিক ম্যাগেলান ইউরোপ থেকে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে এই প্রণালীর মধ্য দিয়েই প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়েছিলেন। এজন্য তাঁরই নামানুসারে প্রণালীটির নাম হয়েছে ম্যাগেলান প্রণালী


16.আন্দিজকে 'কর্ডিলেরা' বলে কেন?

উত্তর:  স্পেনীয় শব্দ ‘কর্ডিলেরা'-র অর্থ পর্বতমালা। পরপর কয়েকটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি নিয়ে যখন শৃঙ্খলের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন সেই পর্বতশ্রেণিকে ‘কর্ডিলেরা’ বলা হয়। আন্দিজ পর্বতের মধ্যে কলম্বিয়ার মাঝখান দিয়ে সেন্ট্রাল কর্ডিলেরা পর্বতশ্রেণি, পশ্চিম দিকে অক্সিডেন্টাল পর্বতশ্রেণি এবং পূর্ব দিকে ওরিয়েন্টাল পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত হওয়ায় আন্দিজ পর্বতকে ‘কর্ডিলেরা’ বলা হয়।


17. আন্দিজ পর্বত বরাবর অসংখ্য আগ্নেয়গিরি রয়েছে কেন?

উত্তর:   আন্দিজ পর্বতের অধিকাংশ শৃঙ্গই এক একটি আগ্নেয়গিরি, যেমন— অ্যাকোনকাগুয়া, কটোপ্যাক্সি, চিম্বোরাজো প্রভৃতি। আন্দিজ পর্বত হল প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার পূর্বদিকের অংশ। পাত সংস্থানতত্ত্ব অনুসারে প্রশান্ত মহাসাগরের উভয় পার্শ্বস্থ অংশ পাত সীমানা অঞ্চল। ফলে, ওই মহাসাগরকে বেষ্টন করে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি।


18.আন্দিজ পর্বতে অবস্থিত একটি মৃত ও একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।

উত্তর: আন্দিজ পর্বতে অবস্থিত একটি মৃত আগ্নেয়গিরি অ্যাকোনকাগুয়া (6,960 মিটার) এবং একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট কটোপ্যাক্সি (5,896 মিটার) 

19.দক্ষিণ আমেরিকা উন্নতম ও শীতলতম স্থানের নাম লেখো?

উত্তর: দক্ষিণ আমেরিকার উন্নতম স্থান আর্জেন্টিনার রিভাডাভিয়া (48.9° সেলসিয়াস), শীতলতম স্থান – সারমিয়েন্টো (32° সেলসিয়াস)।


20.মন্টানা কী ?

উত্তর:   আন্দিজ পর্বতের পশ্চিম ঢাল অপেক্ষা পূর্ব ঢালে বৃষ্টি বেশি হয় বলে পূর্ব ঢাল বরাবর ঘন বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই বনভূমি ‘মন্টানা' নামে পরিচিত।


21. পশুপালনে দক্ষিণ আমেরিকা উন্নত কেন?

উত্তর:  দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পম্পাস অঞ্চলে বিস্তীর্ণ চারণক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গবাদিপশু ও মেষ পালন করা হয়। বুয়েল্স এয়ার্স প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ হল প্রধান পশুচারণ কেন্দ্র। পশুপালনে দক্ষিণ আমেরিকার উন্নতির কারণ হল – ●বিশাল অঞ্চল জুড়ে তৃণভূমির অবস্থান, ●পুষ্টিকর পশুখাদ্য হিসেবে আলফাআলফা ঘাসের চাষ,● পশুপালনের উপযোগী নাতিশীতোয় জলবায়ু সরকারি সহযোগিতা প্রভৃতি।


22. আমাজন অববাহিকা অঞ্চলে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় কেন?

উত্তর:  আমাজন অববাহিকা অঞ্চলটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত। ফলে, প্রত্যহ অধিক উন্নতা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমাজনের পূর্ব এবং পশ্চিমে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত হওয়ার জন্য লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মি অধিক পরিমাণ জলকে বাষ্পীভূত করে। ফলে, বাতাসে আর্দ্রতা থাকে সর্বাধিক। সন্ধ্যার দিতে এইসব বাষ্পীভূত জলকণা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। আমাজন অববাহিকা সে কারণে অধিক বৃষ্টিপাতের অঞ্চল। এ ছাড়া এখানকার ঘন বনভূমিতে প্রস্বেদন বেশি হয় বলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়।


23.যাযাবর কৃষি অথবা, ‘ঝুম চাষ' কী?

উত্তর:  যাযাবর কৃষিতে চাষের জন্য কোনো নির্দিষ্ট জমি থাকে না। প্রয়োজনমতো জমি বেছে নিয়ে গাছপালা পুড়িয়ে জমি পরিষ্কার করে। কয়েক বছর ফসল ফলানোর পর জমির উর্বরতা কমে গেলে মানুষ কৃষিকাজের জন্য সেই স্থান ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যায়। 2/4 বছর অস্তর অস্তর স্থান বদল করে বলে এই কৃষিকাজকে স্থানান্তর কৃষি বা যাযাবর কৃষি বলে। এটি একপ্রকার অনুন্নত কৃষিব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী অববাহিকায় ভুট্টা, আখ, তুলো, ধান, কলা, ম্যানিওক প্রভৃতি চাষ করা হয়। এই প্রকার কৃষি পদ্ধতি ঝুম চাষ নামেও পরিচিত।



Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)