Green House Effect: Definition of Green House Effect, Causes of Green House Effect
গ্রীণ হাউস প্রভাব (Green House
Effect)
আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতা অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে তৈরি হচ্ছে নানান ধরনের বিষাক্ত শাস যা মানুষের স্থায়িত্বও জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে। তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পরিবেশগত সমস্যা তার মধ্যে শুন্যতম হল Green House Effect। ‘গ্রীণ হাউস’ কথাটির অর্থ হল গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের তৈরি ঘর। শীতপ্রধান দেশে গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের ঘর নির্মাণ করে উষ্ণতা বাড়ানো হয় একে Green House Effect বলে। বায়য়ুমণ্ডলের বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীতে গ্রীণ হাউস ঘটাতে সাহায্য করছে।
গ্রীণ হাউস প্রভাবের সংজ্ঞা (Definition of Green House Effect):
শীতপ্রধান দেশে গাছপালা পরিচর্যা করার জন্য কাচের ঘর নির্মাণ করা হয়। কারণ সূর্যরশ্মি কাচ ভেদ করে আসে কিন্তু যেতে পারে না ফলে ঘরটিকে উত্তপ্ত রাখে। বর্ধিত উত্তাপের জন্য কাঁচের নির্মিত ঘরটিকে Green house বলে।সূর্যরশ্মির ক্ষুদ্রতরঙ্গ রূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূ-পৃষ্ঠে আসে কিন্তু বৃহৎ তরঙ্গরূপে আর যেতে পারে না কারণ বায়ুমণ্ডলে মাত্রতিরিক্ত CO., CO, CH, CFC, H,O, O,, N, O, HCFC, CF, C, গ্যাসের বৃদ্ধির ফলস্বরূপ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। গ্রিন হাউস এফেক্ট হল মনুষ্য সৃষ্ট তাপদূষণ সমস্যা।
গ্রীণ হাউস গ্যাসের নাম:-
গ্রীণ হাউস গ্যাসের নাম--1.কার্বন ডাই অক্সাইড,2.মিথেন,3. ক্লোরোফ্লুরো কার্বন(CFC),4.নাইট্রাস অক্সাইড,5.কার্বন মনোঅক্সাইড 6.জলীয় বাষ্প(H2O) 7.ওজন গ্যাস,
■ গ্রীণ হাউস প্রভাব বৃদ্ধির কারণ (Causes of Green House Effect) :
জীণ হাউস গ্যাস তৈরিতে উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় উন্নত দেশ অনেক বেশি দক্ষ। এই গ্যাসগুলির মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। গ্রীণ হাউস প্রভাব (Green house Effect) বৃদ্ধির কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল—
1. জীবাশ্ম জ্বালানী :
জ্বালানী কাঠ, কয়লা ও খনিজতেল ব্যবহার করার ফলে বাতাসে CO, ও CO প্রভৃতি গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে মিশছে। জীবাশ্ম জ্বালানী অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে দূষিত গ্যাস সমূহ বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করছে। সূর্যের বৃহৎ তরঙ্গ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আর যেতে পারে না এবং পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। উন্নত দেশগুলি বেশি পরিমাণ CO, বাতাসে ছাড়ছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে 1950-2003 সালের মধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র 5100 কোটি টন CO, নির্গমন করেছে সেখানে ভারত ও চীন মিলে 1800 কোটি টন।
2. দাবানল : বনের আগুনকে দাবানল বলে। দাবানলের ফলে বৃহৎ বনভূমি ধ্বংস হয় ফলে CO., CO গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে মিশছে। দাবানল গ্রীণ হাউস প্রভাব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
3. যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া :
যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি হয় CO., CO হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোকার্বন সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এর মতো বিষাক্ত গ্যাস। এই সমস্ত গ্যাসগুলী Green House Effect ঘটাতে সাহায্য করে। 1 লিটার পেট্রোল পোড়ালে তৈরি হয় 2.17 কেজি CO, গ্যাস।
4. পচনশীল জৈব আবর্জনা :
পচনশীল জৈব আবর্জনা গবাদিপশুর গোবর, ধান খেত ও জলাভূমি থেকে নিঃসৃত হয় মিথেন গ্যাস। এই মিথেন গ্যাস গ্রীণ হাউস এফেক্ট সৃষ্টিতে 17% ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে প্রতি বৎসর প্রায় 540 মিলিয়ন টন মিথেন বায়ুমণ্ডলে মিশছে।
5. রেফ্রিজারেটর ও AC মেশিন :
রেফ্রিজারেটর ও AC মেশিন প্রভৃতি যন্ত্রে CFC ব্যবহার করা হয়। CO. অণুর চেয়ে CFC অণু 10 হাজার গুণ বেশি উষ্ণকরণ ক্ষমতা রয়েছে। এই সকল যন্ত্রে ব্যবহৃত গ্যাস থ্রীণ হাউস। এফেক্ট ঘটায়।
6. বিভিন্ন শিল্পে :
অটোমোবাইল, প্লাস্টিক ফোম, স্প্রে ক্যান শিল্পে CF, CL, ও CFC,, এবং নরম ফোম, থার্মাল ইনসুলেটি, CFC-11. রং শিল্পে, কম্পিউটার (Computer) এর সিলিকন চিপ তৈরিতে CFC ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট তৈরিতে CFC ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পগুলি হতে বিষাক্ত গ্যাস গ্রীণ হাউস এফেক্ট ঘটাতে সাহায্য করে।
7. অরণ্যচ্ছেদন:
অরণ্য ধ্বংসের ফলে CO, এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প ও বসতি বিস্তারের ফলে প্রতি বছর প্রায় 3% হারে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে সালোকসংশ্লেষের হার ধীরে ধীরে কমছে। ফলস্বরূপ CO. এর পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে যা গ্রীণ হাউস প্রভাব (Green House Effect) প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।
8. নগরায়ন ও শিল্পায়ন :
নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে বনভূমির পরিমাণ দ্রুত হারে কমছে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে CO.CO.CH, CFC, HCFC, O, প্রভৃতি গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলি।
9. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধোঁয়া ;-
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে থাকে নানা ধরনের গ্রীণ হাউস গ্যাস। এই গ্যাসগুলি পৃথিবীতে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য
10. রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ:-
অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেন ঘটিত সার ও নানা ধরনের কীটনাশক ঔষৎ ব্যবহার করার ফালে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত নাইট্রাস অক্সাইড (NO)। এই N.O গ্রীণ হাউস এফেক্ট সৃষ্টিতে দায়ী। 11 জলীয় বাষ্প : জলীয় বাষ্প কুয়াশা, মেঘ ও ধোঁয়াশা (Smog) সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এই সকল উপাদানগুলি মাত্রাতিরিক্ত বেশি হলে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মিকে পুনরায় বায়ুমণ্ডল ভেদ করে যেতে বাধা দেয়। এই জলীয় বাষ্প Greenhouse effect সৃষ্টির অন্যতম উপাদান।
গ্রীণ হাউস এফেক্ট প্রতিরোধের ব্যবস্থা (Measures of Controlling Green House Effect):
গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলির নির্গমন না কমালে মানুষ তথা পৃথিবীর ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। একটি সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে USAতে মাথাপিছু CO, নির্গমনের পরিমাণ 19.13 টন। সেখানে বাংলাদেশে মাথাপিছু মাত্র 0.15 টন। নিম্নে গ্রীণ হাউস এফেক্ট এর প্রতিরোধের ব্যবস্থাগুলি আলোচনা করা হল :
1. মন্ট্রিল প্রোটোকলের (1987) নীতি গ্রহণ :
1987 সালে কানাডার মন্ট্রিলে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য CFC-র ব্যবহার কমানো। গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলি যেমন CO,, CO, CFC, CH, NH প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ওজন অবক্ষয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা ইহা মন্ট্রিল প্রোটোকল নামে পরিচিত। গ্রীণ হাউস এফেক্ট প্রতিরোধের জন্য উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলিকে এই চুক্তি মেনে চলতে হবে। CCl, ও CH,CCI, উৎপাদন বন্ধ করা।
2. এজেন্ডা 21’ মেনে চলা (1992):
1992 সালে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরোতে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা সম্মেলনে গৃহীত ‘21 এজেন্ডা’ মেনে চলা। এই সম্মেলনে গ্রীন হাউস গ্যাস গুলির প্রতিরোধের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তা মান্য করা।
(i) 2020 সালের মধ্যে পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বর্তমানের তুলনায় 30% হ্রাস করা হবে।
(ii) 2020 সালের মধ্যে CH, ও NH বৃদ্ধির হার 25% কমাতে হবে।
(iii) 2000 সালের মধ্যে পৃথিবীতে অরণ্য নিধন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
3. G-8 সম্মেলনের গৃহীত নীতি কার্যকর (2007) :
2007 এর G-8 সম্মেলনে রাশিয়া ও USA-কে বাদ দিয়ে বিশ্বের 6টি দেশ 2050 সালের মধ্যে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা 50% কমাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে পরিবেশ বাঁচাও কর্মসূচিতে সাহায্য করবে। কিয়োটো প্রোটোকল (1997, জাপান) মেয়াদ ফুরানোর পর পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচিকে অব্যাহত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তন (Climatic Change)-এর উপর গবেষণা করা ও এই নীতিগুলিকে কার্যকারী
4. পিটসবার্গ-এর G-20 (2009) ও কোপেনহেগেন (2010) সম্মেলন নীতি কার্যকর :
পিট্সবার্গের G-20 সম্মেলন ও ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলিকে কার্যকর করা প্রয়োজন। এই সম্মেলনগুলিতে বিশ্ব উষ্ণয়ন (Global Warming) এবং জলবায়ুর পরিবর্তন (Climatic Change) এর কারণ হিসাবে গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলিকে দায়ী করা হয়েছে। এই গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলিকে প্রতিরোধের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া প্রয়োজন।
5. জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার হ্রাস :
জীবাশ্ম জ্বালানী (কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস) যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে বাতাসে CO, পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব। এনার্জি এফিসিয়েন্সি ও ক্লিন টেকনোলজির উপর জোর দিতে হবে। ইতিমধ্যে মেক্সিকো শহরে যানবাহনের ক্ষেত্রে সপ্তাহে একদিন 'নো ড্রাইভিং ডে' হিসাবে গ্রহণ করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
6. অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার :
অপ্রচলিত শক্তির (সৌরশক্তি, জোয়ারভাটা, বায়ুশক্তি, ভূতাপ শক্তি, জৈব শক্তি, গোবর গ্যাস) ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে। ফলে গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সহজে।
7. CFC গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করা :
ফ্রিজ, এসি মেশিন, ফোম তৈরীতে ও রং স্প্রে ক্যান তৈরিতে CFC গ্যাস ব্যবহার করার বন্ধ করতে হবে তার পরিবর্তে HFC ও HCFC ব্যবহার করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে 2010 সালের মধ্যে CFC এবং হ্যালোন উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। CCl ও CH,CCI, উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
৪. বনসৃজন :
অরণ্যচ্ছেদন রোধ, বৃক্ষরোপণ, বনসৃজন এর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে কারণ গাছপালা CO কে শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। বনচ্ছেদনের ফলে হিসাব মতো বায়ুমণ্ডলে প্রায় 90-180 বিলিয়ন টন কার্বন বায়ুমণ্ডলে জমা হয়েছে। বনসৃজন এই কার্বনকে হ্রাস করতে পারে। কিন্তু ভারতে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের 19.45% যেখানে 33% থাকা প্রয়োজন। গ্রীন বেল্টের তৈরির দিকে নজর দিতে হবে।
9. যানবাহনের ব্যবহার কমানো:-
গাড়ি বা যানবাহনের ধোঁয়া থেকে উৎপন্ন হয় বিভিন্ন গ্রীন হাউস গ্যাস যানবাহনের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। ইউরো প্রযুক্তি ব্যবহারে মোটর যান থেকে দূষণ নিষ্ক্রমণ হ্রাস পাবে। প্রতি 1000 জন পিয় USA তে গাড়ির সংখ্যা 748, জাপানে 520, আর ভারতে মাত্র 6। তাই উন্নত দেশগুলিতে যানবাহনের ব্যবহার কমাতে হবে। নো ড্রাইভিং ডে, স্বল্প দূরত্বের জন্য সাইকেল ব্যবহার ও ব্যাটারী চালিত যানবাহনের ব্যবহারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
10. প্রযুক্তির উন্নতি :
শিল্প কারখানা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত পুরাতন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমিয়ে উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে শিল্প উৎপাদন করতে হবে। দূষণ প্রতিরোধের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে গ্রীন হাউস গ্যাস ি নিঃসরণ কমানো যায়। 'ক্লিন টেকনোলজি ও গ্রীণ টেকনোলজি ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলে CO এর পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।
Comments
Post a Comment