ওজোন স্তর: ওজোন স্তর সম্পূন্ন তথ্য(Full Details Of Ozone Depletion)

ওজোন অবক্ষয়

 (Ozone Depletion) :

ওজোন হল বায়ুমণ্ডলের একটি উল্লেখযোগ্য বিরলতম গ্যাস। তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর (0) আইসোটোপ হালকা নীল বর্ণের উএ গন্ধযুক্ত উত্তেজনা প্রবণ গ্যাস ( 1840 সালে বিজ্ঞানী স্কোনবী এই গ্যাস আবিষ্কার করেন। পরবর্তী সময়ে 1913 সালে ফরাসী বিজ্ঞানী হেনরী বুশন ও চার্লস ফেব্রি বায়ুমণ্ডলে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে 15-30 কিমির মধ্যে ওজোন স্তরের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেন। এই ওজন গ্যাস সুর্যের অতি বেগুনী রশ্মির হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করো। 
                   ওজোন হল একধরনের বিষাক্ত গ্যাস এবং অক্সিজেনের একটি রূপভেদ। তিনটি অক্সিজেন পরমাণু জুড়ে তৈরি হয়। একটি ওজোন অণু। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে 15-30 কিমি উচ্চতায় এই গ্যাসের স্তর লক্ষ্য করা যায়। এজেন পরমাণু খুব সহজেই বিভাজিত হয়ে অন্য পদার্থের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। এজন্যই ইহা সক্রিয় গ্যাস নামে পরিচিত।


• ওজোন স্তরের সৃষ্টি (Formation of Ozone Layer)

বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাস সৃষ্টি হয়। দুটি অণুক্রমিক আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রথম বিক্রিয়ায় অক্সিজে অণুগুলি অতিবেগুনী রশ্মির (UV-C এবং UV-B) ফোটনকণা দ্বারা দুটি অক্সিজেন পরমাণুতে বিয়োজিত হয়। হি বিক্রিয়ায় আলোক বিয়োজনে উৎপন্ন আলোক বিয়োজনে উৎপন্ন অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেন অণুর সংযোজন উৎপন্ন হয় ওজোন গ্যাস।

প্রথম বিক্রিয়া :  O2 অতিবেগুনি রশ্মি 0+ 0 (অক্সিজেন বিয়োজন) 

দ্বিতীয় বিক্রিয়া : 02 + ০ + (M) = 03+ (M) ন গঠন (M) =

অনুঘটক।


ওজোন গহ্বর (Ozone Depletion):

1985 সালে (Joseph Charles Farman (1930-2013) আন্টার্কটিকা মহাদেশের উপর প্রথম ওজন গহ্বর এর সন্ধান পান। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে রয়েছে ওজোন গ্যাস যা অতিবেগুনি রশ্মি (U.V.Ray) কে শোষণ করে। কিছু CFC গ্যাস অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন (CV) পরমাণুতে পরিণত হয়। পরে Cl পরমাণুO3 সহিত বিক্রিয়া করে ওজোন অণুকে অক্সিজেন অণু (O2) এবং ক্লোরিন মনোক্সাইড (CIO) তে পরিণত করে। এইভাবে ওজোন অণুর বিয়োজনের ফলে ওজোন স্তর পাতলা হচ্ছে, একে ওজোন গহ্বর বলে


ওজোন গহ্বর সৃষ্টির পদ্ধতি (Process of development of Ozone Hole) : 

ওজোন গ্যাস সৃষ্টির অপেক্ষা ধ্বংসের পরিমাণ বেশি হলে ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি হয়। আন্টার্কটিকা বায়ু মণ্ডলে ইহা প্রথম সৃষ্টি হয়। 2000 সালে কুমেরু ও ল্যাটিন আমেরিকার দক্ষিণ প্রাস্তে ওজোন ছিদ্র লক্ষ্য করা গিয়েছে যার ক্ষেত্রফল 2 কোটি 85 লক্ষ বর্গ কিমি। ওজোন গহ্বর সৃষ্টির পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে নীচে আলোচনা করা হল :

প্রথম পর্যায় : শীতকালে সূর্যের অনুপস্থিতিতে আন্টার্কটিকা মহাদেশে বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। ফলে দক্ষিণ মেরুর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ খুব বেড়ে যায় এবং এর কেন্দ্রে একটি আবর্তের সৃষ্টি হয়। এই আবর্তের মধ্যস্থিত বাতাসের গতিবেগ 300 কিমির বেশি হয়। ফলে আবর্ত মধ্যস্থিত বায়ু চারপাশের বায়ু থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তখন বায়ুর উষ্ণতা অধিক মাত্রায় হ্রাস পেয়ে নমে আসে প্রায় 80°C)।

দ্বিতীয় পর্যায় : এই পর্যায় মেরুদেশীয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে মেঘের (PSC) সৃষ্টি হয়। জল ও নাইট্রিক অ্যাসিড ঘনীভূত হয়ে নাইট্রিক অ্যাসিডের ট্রাইহাইড্রেট (HNO3, 3H2O) কেলাস রূপে এই মেঘ অবস্থান করে। এই সময় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরে ক্লোরিন নাইট্রেট (CIONO2) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCI) নিষ্ক্রিয় ভাবে আবর্তের চারিদিকে অবস্থান

তৃতীয় পর্যায় : ক্লোরিন নাইট্রেট ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মেঘের কেলাসের অংশ রূপে সংযুক্ত হয়। হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সঙ্গে ক্লোরিন নাইট্রেটের সংঘাত ঘটলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আণবিক ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন হয়। যথা

CIONO2 + HCI → Cl2 + HNO3

এইভাবে ক্লোরিন গ্যাস সঞ্চিত হয়।

চতুর্থ পর্যায় :দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তের শুরুতে সূর্যের প্রথম আবির্ভাবে ক্লোরিন অতিবেগুনি রশ্মির দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পারমাণবিক ক্লোরিনে (CI) পরিণত হয়। ক্লোরিন পরমাণু ওজোন অণুকে অক্সিজেন অণু O2 এবং ক্লোরিন মনোক্সাইডে (CIO) পরিণত করে। 

              অতিবেগুনি রশ্মি

  Cl2----------------------------------------> 2Cl

          Cl+O3--->ClO+O2

এইভাবে ওজোন অণুর বিয়োজনের ফলে ওজোন স্তর পাতলা হয় এবং ওজোন গহ্বর এর সৃষ্টি হয়।


ওজোন স্তরের অবক্ষয়ের কারণ (Causes of ozone Depletion) :

বর্তমান শতাব্দীতে পৃথিবীর পরিবেশগত অবক্ষয়ের মধ্যে অন্যতম হল ওজোন স্তরের হ্রাস। এই হ্রাসের ফলে সূর্যের মারাত্মক অতিবেগুনি রশ্মি (UVRay) পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রবেশ করে। এই ওজোন স্তর (O, layer) হ্রাসের জন্য দায়ী কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল—



A. প্রাকৃতিক কারণ : ওজোন স্তর বিনাশের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল

(i) আলোর বিক্রিয়া : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে প্রাকৃতিক উপায়ে যেমন ওজোন গ্যাস উৎপন্ন হয়। তেমনি এই স্তরে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটে। ওজোন গ্যাসের গঠন বিনাশ এই স্তরের ভারসাম্য রক্ষায়  সমর্থ হয়। ওজোন স্তরে অতিবেগুনি (UV) রশ্মির উপস্থিতিতে গ্যাসের বিনাশ দেখানো হল

03+0→202


(ii) নাইট্রোজেন অক্সাইড : ওজনস্তর (O, layer) ধ্বংসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় নাইট্রোজেন অক্সাইড। ইং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ধ্বংসের ক্ষেত্রে 50% দায়ী। নাইট্রাস অক্সাইড জারণের ফলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে নাইট্রোজেন অক্সাইডের উৎপত্তি ঘটে।

NO + 03-->NO2+O2

NO + O---> NO + 02 [ 03 

       ------>2O2 

                                     O+


(iii) হাইড্রোজেন অক্সাইড : একটি হাইড্রোজেন পরমাণু হাইড্রোজিনাল OH প্যারা হাইড্রোফিল এবং রেডিক্যাল দ্বারা গঠিত হয়। যেগুলি প্রত্যেকটি জলীয় বাষ্প (H,O), মিথেন (CH), হাইড্রোজেন অণু থেকে উৎপন্ন হয়। এটি স্বাভাবিকভাবে বায়ুমণ্ডলে সৃষ্টি হয়। ওজোন স্তরের হ্রাস এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্ট্র্যাটোনিয়াহ ওজোন স্বাভাবিক ধ্বংসের জন্য দায়ী থাকে।

(iv) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড : CFCS অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন করে। এই ক্লোরিন পরমাণু স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোনকে ধ্বংস করে।

(v) ক্লোরিন : ক্লোরিন হল সবচেয়ে সক্রিয়। এটি ), স্তরের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

(vi) আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত : জৈব উৎস ছাড়া মাঝে মধ্যে অগ্ন্যুৎগমের ফলে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস বা এরোসল নির্গত হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে এরোসল নির্গত হয়ে বাতাসে মেশে। SO, O,, সূর্যরশ্মি ও বাতাসের জলকণা মিশ্রিত হয়ে সালফেট যৌগ উৎপন্ন করে।

                           এই সালফেট যৌগ ধূলিকণা ও জলকণা বাতাসের ওজোনকে ধ্বংস করে। 1990 সালের প্রথম দিকে ফিলিপাইনাসের এক পর্বত থেকে প্রচুর পরিমাণে সালফার ডাইঅক্সাইড উচ্চ বায়ুমণ্ডলে পৌঁছায় এবং মুক্ত CI এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে

B. মনুষ্যসৃস্ট কারণ : 

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে 1915 সাল থেকে মানুষের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা পৃথিবীকে অধ্যাসের পথে নিয়ে চলেছে। সাধারণত O, অবনমনের জন্য মনুষ্য ক্রিয়াকলাপ যেগুলি বিশেষ করে দায়ী সেগুলি হল = (a) যুদ্ধকালীন অবস্থা (b) বিমান চলাচলের উন্নতি (c) কৃষিকার্যের পরিবর্তন ইত্যাদি।

(i) পারমাণবিক বিস্ফোরণ : আধুনিক বিশ্বে পারমানবিক বোমা আবিষ্কারের ফলে এত বেশি পরিমাণে রাসায়নিক শক্তি নির্গত হয়ে বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হচ্ছে, যা বায়ুমণ্ডলের নিষ্ক্রিয় নাইট্রোজেনকে অক্সিজেনের সাথে যুক্ত করে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপাদন করে যা পৃথিবীর সামগ্রিক স্তরের 20% হ্রাস ঘটায়।

03 + NO = NO₂-->O2

(ii) সুপারসনিক বিমানের ধোঁয়া:-  স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সুপারসনিক বিমান থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প ও নাইট্রোজেন অক্সাইড সমূহ (NO) সমূহ O3 গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ওজনকে বিনাশ করে।

 Iii) CFC গ্যাসের নির্গমন: ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) ও ক্লোরোফ্লুরোমিথেন (CF CI) প্রধানত ওজোন ধ্বংসকারী হাস। একটি CFC কণা এক লক্ষের বেশি ওজোন কনাকে ধ্বংস করতে পারে। রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, স্প্রে ক্যান, বিমানের প্রপেলার, ফোম ও প্লাস্টিক তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই জাতীয় গ্যাস ধীরে ধীরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছায়। এখানে অতি বেগুনি রশ্মির জন্য প্রথমে CFC ক্লোরিন পরমাণুতে (CI) পরিণত হয় এবং ওই Cl ওজোন তণর সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ওজোন ধ্বংস করে। এই বিক্রিয়া হল : 03+ CI → ClO + 02
CFC কর্তৃক স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের 03 হ্রাসের কণা প্রথম প্রমাণ করেন 1914 সালে ম্যারিওনা ম্যালিক নামক একজন বিজ্ঞানী। এই CFC শুধু ওজোন স্তরের হ্রাসই নয়, এর সাথে ভুবন উষ্ণায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(iv) হ্যালোন গ্যাস : ক্লোরোফ্লুকার্বন বা হ্যালোন গ্যাস বিভিন্ন কারখানা ও উড়োজাহাজের জন্য এবং আগুন নির্বাপন ব্যবস্থায় ব্যাপক ব্যবহার করা হয় যা 03 ধ্বংসের অন্যতম উৎস। এছাড়াও 03 স্তরের হ্রাসের জন্য দায়ী থাকে CBr CIF CBrF, যারা CFCS থেকে 3 গুণ বেশি শক্তিশালী । যেসব যৌগ OR স্তরের ক্ষতিসাধন করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল CBrF3

(v) মিথেন গ্যাস : উদ্ভিদের দেহাংশ পচনক্রিয়া এবং কৃষিজাত বর্জ্য পদার্থ, পশুদের জৈব মল ও তৈল ক্ষেত্রে থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস ওজোন হোল ঘটাতে সাহায্য করে। মিথেন গ্যাস (CH) বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের সঙ্গে পক্রিয়া করে ওজোন অণুকে ভেঙে দেয়।

(Vi) কৃষিজাত সার ও কীটনাশক : কৃষিতে বর্তমানে অত্যধিক হারে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলের আরসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কৃষিতে নাইট্রোজেন ঘটিত সার নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন করে যা ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটায়।


ওজোন অবক্ষয়ের ফলাফল (Effects of Ozone Depletion) :

 ওলেন স্তরের অবক্ষয় এর ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। যা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ছে। ওজোন স্তরের অবক্ষয় এর ফলে নিম্নলিখিত প্রভাবগুলি লক্ষ্য করা যায়।

1. ওজোন স্তর ক্ষয়ের মানুষের উপর প্রভাব :

(i) মানুষের ত্বকে UV-B এর ফলে সৌর গ্ধ এবং ত্বক তামাটে বর্ণের হয়।

(ii) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বক ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, লিউকোমিয়ায় মানুষ আক্রান্ত 

(iii) চোখের লেন্স ও করনিয়া, UV-B প্রভাবে অল্পবয়স্ক মানুষের চোখে ছানি পড়ার ঘটনা বাড়ছে।

(iv) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

2. ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রাণীদের উপর প্রভাব :

(i) প্রাণীদের ক্যানসার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র USAতে 3 লক্ষের বেশি প্রাণীর দেহে ক্যানসার ছড়াচ্ছে।

(ii) প্রাণীদের বংশবিস্তারও বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।

(iii) প্রাণীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।

(iv) জীব পরিবেশে UV-B অবাধ অনুপ্রবেশ এর ফলে উভচর প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

3. ওজোন স্তর ক্ষয়ের উদ্ভিদ এর উপর প্রভাব :

(i) সালোকসংশ্লেষ ও বীজের অঙ্কুরোদগম ব্যাহত হবে।

(ii) পাতার রং পরিবর্তন ও পাতায় সাদা দাগ লক্ষ্য করা যায়। 

(iii) UV-B এর প্রভাবে 20-25 শতাংশ পাতার ক্লোরোফিল এর পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং ক্ষতিকারক মিউটে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

(iv) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে পত্ররন্ধ্র দ্বারা মৃত্তিকা স্তরের জল দ্রুত হারে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে হ্রাস প্রাপ্ত হয়।

(v) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে গাছের পাতা, ফুল, ফল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।

4. পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি : বায়ুমণ্ডলে স্ট্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন বিলুপ্তি হলে অতিবেগুনি রশ্মি (LIVRas) ঐ অঞ্চলে শোষিত না হয়ে সরাসরি ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হবে। ফলে ভূ-পৃষ্ঠে তাপমাত্রা বাড়বে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে বলেছেন আগামী 40 বছর ওজন অবক্ষয়ের দরুন ভূ-পৃষ্ঠের 5-20 ভাগ UV Ray বেশি পতিত হবে। ভূ-পৃষ্ঠ উভয় হওয়ার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warmming) দেখা দেবে। যার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করে এবং সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বাড়বে।

5. অ্যাসিড বৃষ্টি : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে ট্রপোস্ফিয়ারের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়বে। ফলে অ্যাসিড বৃষ্টির পরিমান বাড়বে।

6. ধোঁয়াশার সৃষ্টি : ওজোন বিনাশের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে অতিবেগুনি রশ্মি (UVRay) এর প্রভাব বাড়বে এবং ফটোক্যামিক্যাল বিক্রিয়া বৃদ্ধি হয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টির প্রভাব বৃদ্ধি পাবে।

7. জলবায়ুর প্রভাব : ওজোন হ্রাসের ফলে আবহাওয়ার, বিভিন্ন উপাদান যেমন—উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ দিক, ইনসোলেশন, তাপ বাজেট, উত্তাপ এর সমতা ইত্যাদি বিঘ্নিত হবে। সূর্যের তবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর উত্তপ্ত হয় এবং উষ্ণতার বৈপরীত্য ঘটায়। অতিবেগুনি রশ্মি (UVRay) অবাধ অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাপী উষ্ণায়নে সাহায্য করছে।

৪. বাস্তুতন্ত্রের প্রভাব : ওজোন হ্রাস নিয়ন্ত্রণ না করলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা ও স্থায়িত্ব এর ভারসাম্য বিলীণ হবে। জীব পরিবেশ বিশেষভাবে পরিবর্তিত হলে জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ ও প্রাণীদেহের শারীর পূর্ণা পরিবর্তন ঘটবে। উষ্ণতার পরিবর্তনে জীবমণ্ডলে উদ্ভিদের বিস্তার প্রকৃতি ও ঘনত্ব পরিবর্তিত হবে এবং উদ্ভিদের পুর্ব


ওজোন অবক্ষয়ের সংরক্ষণ (Conservation of Ozone Depletion) :

বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের হ্রাসের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে জীব জগতের উপর কুপ্রভাব পড়ছে। ওজোন স্তর সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। তা নিয়ে আলোচনা করা হল—

1. মন্ট্রিল প্রোটোকল (1987) :

 ওজোন স্তর ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে 1987 সালে কানাডার মন্ট্রিলে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা মন্ট্রিল প্রোটোকল নামে পরিচিত। এই সম্মেলনে গৃহীত চুক্তির সারমর্ম হল—

(i) 1995 সালের মধ্যে সমস্ত উন্নত দেশগুলিকে CFC ও হ্যালন গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।

(ii) কার্বন ট্রেটাক্লোরাইড (CCI) এবং ট্রাইক্লোরোইথেন (CH, CCI) এর উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করতে হবে।

(iii) ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের পরিবর্ত দ্রব্য হিসাবে হাইড্রো ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (HCFC) এবং হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFC) যৌগের ব্যবহার 2040 সালের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।


2. লন্ডন কনফারেন্স (1989): 

1989 সালের ব্রিটিশ সরকার এবং UNO পরিবেশ প্রোগ্রাম নামে লন্ডনে একটি সম্মেলন গঠন করেন যা লন্ডন কনফারেন্স নামে পরিচিত। এই দুই সম্মেলনে স্থির হয় যে— 

(i) ওজোন স্তর ধ্বংসকারী CFCS এর উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

(ii) বিকল্প রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করতে হবে যা ওজন স্তরকে ধ্বংস করবে না।

(iii) CFC3 উৎপাদন শতকরা 20 ভাগ হ্রাস করতে হবে।

(iv) ভবিষ্যতে এই গ্যাস উৎপাদন আরও 30% হ্রাস করতে হবে।


3. United Nation Environment Programme (U.N.E.P.) : 

1987 সালে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি আলোচনার জন্য চুক্তি হয়-

(i) 1989 সালের মধ্যে CFCS এর পরিমাণ 1986 সালের স্তরের সমান আনতে হবে। (a) 1993 র মধ্যে সিনথেটিক কেমিক্যালের পরিমাণ 20% কমানো হবে।

(ii) 1998 এর মধ্যে সিনথেটিক কেমিক্যালের উৎপাদন আরও 30% কমাতে হবে।

(iv) 1992 সালের মধ্যে হ্যালন গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে 1986 সালের স্তর পর্যন্ত করা হবে।

4. এজেন্ডা 21’ মেনে চলা : 

ওজোন স্তরের অবক্ষয় প্রতিরোধ করার জন্য ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরোতে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা সম্মেলনে (1992) গৃহীত ‘21 দফা কর্মসূচী' কার্যকর করা একান্ত প্রয়োজন। এই সম্মেলনে গ্রীণ হাউস গ্যাস প্রতিরোধ করার জন্য যে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছিল তা নিম্নরূপ—

(1) 2020 সালর মধ্যে পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বর্তমানের তুলনায় 30% প্রায় কমাতে হবে।

 (ii) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ও তার সমগোত্রীয় রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন 2010 সালের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

(iii) 2000 সালের মধ্যে মিথেন ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের বৃদ্ধি হার 25% কমাতে হবে। 


5. পিটস্বার্গের ‘G-20' (2009) ও কোপেনহেগেন সম্মেলন (2010):

 পিটসবার্গের ‘G-20' সম্মেলন ও ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলিকে কার্যকর করা। এই সম্মেলনে বিশ্ব উষ্ণায়ণ (Global Warmming) ও জলবায়ু পরিবর্তন (Climatic Change) এর কারণ নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়। 03 স্তরের সংরক্ষণ করার জন্ম উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি একযোগে কাজ করার জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ হয়েছে।

6. ফ্রেয়ন গ্যাসের উৎপাদন বন্ধ : 

ফ্রেয়ন গ্যাসের (CFC, CFC) উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে। ফ্রিজ, এসি মেশিন, ফোম, স্প্রে ক্যান ও রং তৈরিতে CFC গ্যাস এর ব্যবহার কমাতে হবে। বর্তমানে এই পদার্থটির বিষয় হিসাবে দুটি পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে যথা HFC ও HCFC এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।

7. জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস : 

জীবাশ্ম জ্বালানী (কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি) যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে বাতাসে CO, এর পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব। জ্বালানী প্রয়োজনহীন (ব্যাটারি ও ইলেকট্রিক চালিত) যানবাহনের ব্যবহারের দিকে প্রবণতা বাড়াতে হবে।

9. শিল্প দূষণ প্রতিরোধ : 

কলকারখানার ধোঁয়া থেকে নির্গত সালফেট এরোসল ওজোন অণুকে বিয়োজিত করে। অক্সিজেন অণু ও পরমাণুতে রূপান্তর ঘটায় তা প্রতিরোধ করতে হবে। শিল্প কেন্দ্রগুলিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র নে দরকার।

10. বনসৃজন : অরণ্যচ্ছেদন হ্রাস, বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজনের দিকে নজর দিতে হবে যাতে গাছপালা বাতাসের অতি CO, শোষণ করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বাজয় রাখতে পারে।


ওজোন স্তরের ঘনত্ব মাপার একক কি
ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী কোন গ্যাস
ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে অবস্থিত
ওজোন স্তর কে আবিষ্কার করেন
ওজোন স্তরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে কোন গ্যাস
ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণ
ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী
ওজোন স্তর ধ্বংসের দুটি ক্ষতিকারক প্রভাব
ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলাফল
ওজোন স্তর ধ্বংসের প্রাকৃতিক কারণ
ওজোন স্তর বলতে কি বুঝায়
ওজোন স্তর বায়ুমন্ডলের কোন অঞ্চলে অবস্থিত
ওজোন স্তরকে প্রাকৃতিক সৌর পর্দা বলা হয় কেন
ওজোন স্তর হ্রাসের কারণ

ozone depletion causes

ozone depletion definition

ozone depletion meaning

ozone depletion and climate change

the ozone depletion definition

ozone depletion by oxides of nitrogen

ozone depletion causes global warming

ozone depletion effects



Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)