অম্ল বৃষ্টি (Acid Rain):সংজ্ঞা,অম্ল বৃষ্টির কারণ,অম্লবৃষ্টির প্রভাব,অম্লবৃষ্টি নিবারণের উপায়

Content

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

 অম্ল বৃষ্টি (Acid Rain)

বায়ুদূষণের অন্যতম ক্ষতিকারক ফল হল অম্লবৃষ্টি। প্রধানত যে সকল অঞ্চলে কলকারখানা, যানবাহন, ধাতুনিষ্কাশন বৃল্লি থেকে নির্গত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড জমা হয়। সেই পদার্থগুলি বৃষ্টির সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বা অম্লবৃষ্টি রূপে পৃথিবীতে নেমে আসে। অম্লবৃষ্টি পরিবেশ দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।


সংজ্ঞা বা (Definition):

নাইট্রোজেন অক্সাইড (No.) এবং সালফার অক্সাইড (So.) বায়ুমণ্ডলে বৃষ্টির জলের সহিত মিশে যথাক্রমে নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। এইসব অ্যাসিড বৃষ্টির ফোটার সহিত মিশ্রিত হয়ে মাটিতে এসে পড়ে তখন তাকে অম্লবৃষ্টি বলে।


• অম্ল বৃষ্টি কবলিত দেশসমূহ (Countries affected by Acid Rain) : 

             শিল্পোন্নত দেশগুলি অ্যাসিড বৃষ্টির যারা প্রভাবিত।

(1) উত্তর আমেরিকা মহাদেশের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।

(ii) ইউরোপ মহাদেশের জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে প্রভৃতি।

(ii) এশিয়া মহাদেশের জাপান, ভারত (মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পুনে, দিল্লি কেরলের তিরুবন্তপুরম) চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া প্রভৃতি।


• অম্ল বৃষ্টির কারণ (Causes of Acid rain)

এককথায় বায়ু দূষণের ফলে এই অম্লবৃষ্টি সৃষ্টি হয়। অম্লবৃষ্টির 60%-70% সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) থেকে হয় এবং 30% -40% হয় নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে। পৃথিবীতে দ্রুত শিল্পায়ণের ফলে অম্লবৃষ্টির পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সাধারণত জীবাশ্মঘটিত জ্বালানী যেমন—কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি জ্বালানোর ফলে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) মিশে যায়। সালফার ডাই অক্সাইড একটি বিষাক্ত গ্যাস। এই গ্যাস বায়ুমগুলের ওজোন (03) গ্যাস, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (H202) ও জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। আবার যানবাহনের এগজস্ট (Exhaust) থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসে মিশে গিয়ে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রিক অ্যাসিডে (HNO3) পরিণত হয়। এই ধরনের রাসায়নিক পদার্থগুলি বাতাসে ভাসমান জলকণার সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিশির, তুষার ও বৃষ্টির জলের সঙ্গে অ্যাসিড বৃষ্টিরূপে পৃথিবী পৃষ্ঠে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

2SO2 + O2 → 2SO3

SO3+H₂O → H2SO4

2N02 + 02 → N2O5+ 02

N2O5 + H20 → 2HNO3

অ্যাসিড বৃষ্টির সময়ে তুষার, শিশির ও বৃষ্টির জলে মিশে থাকা সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিডের প্রধান উৎসগুলি হল


সালফিউরিক অ্যাসিডের উৎস(Cources of Sulfuric Acid): 

(i) কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানীর দহন।

(ii) তামা, সীসা, দস্তা প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশন চুল্লি থেকে নির্গত গ্যাস।

(iii) সালফার নিষ্কাশন 


নাইট্রিক অ্যাসিডের উৎস (Cources of Nitric Acid):

(i) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ধোঁয়া ও গ্যাস।

(ii) যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস।

(iii) ধাতু নিষ্কাশন চুল্লী।


■ পরিবেশের উপর অম্লবৃষ্টির প্রভাব (Effects of Acid Rain on Environment) : 

অম্লবৃষ্টি পরিবেশের উপর যথেষ্ট ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এই প্রভাবগুলি হল—

(i) বায়ুদূষণ : অম্লবৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রধানত দরকার দুটি রাসায়নিক পদার্থ। যেমন—সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড। এই দুটি রাসায়নিকই বায়ুকে দূষিত করে। বিজ্ঞানীরা এদের প্রাথমিক বায়ুদূষণ বলেছেন।


(iii) জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট : অম্লবৃষ্টির ফলে জলজ খাদ্যশৃঙ্খল বিনষ্ট হয়। (a) অ্যাসিড মিশ্রিত বৃষ্টির জল পড়ে পুকুর, হ্রদ, জলাশয়ের জলকেও অম্ল করে তোলে। ফলে মাছ, পোকামাকড়, শৈবাল মারা যায়। (b) মাছের ডিম পাড়ার ক্ষমতা কমে যায়। (c) শামুক, ঝিনুক, শঙ্খের শক্ত খোলস বা আবরণ ক্ষয় পায়।


(iii) জলদূষণ বৃদ্ধি : সাধারণত অম্লধর্মী মৃত্তিকার বিভিন্ন ধাতু যেমন—তামা, দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি মাটির গভীরে প্রবেশ করে জলদূষণ বৃদ্ধি করে।

(iv) অরণ্যনিধন : গাছপালার উপর অ্যাসিড বৃষ্টি হলে গাছের ক্ষতি হয়। যেমন—

(a) গাছের পাতা ঝলসে যায়।

(b) পাতা কুঁকড়ে যায়।

(c) সালোকসংশ্লেষ বিঘ্নিত হয়।

(d) গাছের উচ্চতা কমে যায়।

(e) বীজের অঙ্কুরোদগম বাধা পায়।

(f) কাঠ শিল্পের জন্য ভাল কাঠের যোগান কমে যায়।

(v) মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব : অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মানুষের ত্বক কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাক তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়

(vi) পশুপাখির সংখ্যা হ্রাস : অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে কোন অঞ্চলে পশুপাখির সংখ্যা হ্রাস পায়। যেমন—ভারতের ভরতপুর পাখিরালয় হ্রদের জলে সালফার ডাইঅক্সাড ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

 (vii) মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস: অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়, মৃত্তিকা দূষিত হয়।

(a) বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, মটর, আলু প্রভৃতির ফলন কম হয়।

(b) মাটির অম্লতা বৃদ্ধির জন্য নীচের স্তর থেকে গাছেদের খাদ্যগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে গাছ মরে যায়। 

(c) মাটির মধ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী ও সুক্ষ্ম জীবাণুরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা মরে যায়।

 (viii) স্থাপত্যশিল্প ও স্মৃতিসৌধ ক্ষয় : অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মার্বেলের তৈরি মূর্তি, স্ট্যাচু ও অন্যান্য স্মারক, অট্টালিকা,প্রাসাদ ও ধাতু নির্মিত সেতু কলকারখানার বিশেষ ক্ষতি হয়। উদাহরণ হিসাবে আগ্রার তাজমহলের, দিল্লির লালকেল্লা প্রভৃতি ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করা যেতে পারে।


| অম্লবৃষ্টি নিবারণের উপায় (Prevention of Acid Rain) : 

অম্লবৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন সাধ্য কাজ। অম্লবৃষ্টি কমানোর কোনো সহজ উপায় নেই। তবে নিম্নলিখিত উপায়গুলিকে অনুসরণ করলে এর তীব্রতা কিছুটা কমানো যেতে পারে-


(i) চুন প্রয়োগ করে : জলাশয়ের অ্যাসিড জলের সঙ্গে চুন মিশ্রিত করে অ্যাসিডকে প্রশমিত করা যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি একটি স্বল্পস্থায়ী উপায়। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ব্যবধানে বার বার চুন প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া বৃহৎ জলাশয়ে প্রচর পরিমাণে চুন মেশানোর প্রয়োজন হয়। যদিও খরচ সাপেক্ষ।


(a) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো : জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে নানাধরনের বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মেশে। জলীয় বাষ্পের সাথে সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের বিক্রিয়ায় বাতাসে ভাসমান অ্যাসিড কণার। সৃষ্টি হয়। যা গাছপালা, মাটি, প্রাণীর প্রচণ্ড ক্ষতি করে। তাই যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো যায় তাহলে কিছুটা অম্লবৃষ্টির পরিমাণ কমবে।


(iii) অপ্রচলিত শক্তির উপর জোর দেওয়া: প্রচলিত শক্তির ব্যবহার কমিয়ে যদি অপ্রচলিত শক্তির জোয়ার ভাটা শক্তি, সমুদ্র শক্তি, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি) ব্যবহার বেশি করা হয় তাহলে শক্তি উৎপাদনের সময় যে ধোঁয়া, গ্যাস উৎপন্ন হয় তা কিছুটা কমবে। ফলে অম্লবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।


(iv) শিল্প থেকে নির্গত ধোঁয়ার পরিশ্রুতিকরণ : কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি দহনের ফলে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাসকে (SO.. NO.) পরিশ্রুত করলে অম্লবৃষ্টির পরিমাণ কমানো যাবে।


(v) উন্নত যানবাহনের ইঞ্জিন ব্যবহার:  যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস বায়ুমন্ডলে সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড জমা করে। যা বৃষ্টির সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি রূপে নেমে এসে পরিবেশের ক্ষতি করে। যদি যানবাহনের ইঞ্জিনকে উন্নত করা যায় তাহলে গ্যাস, ধোঁয়া কম নির্গত হবে। অম্লবৃষ্টির পরিমাণও কমবে।


(vi) এছাড়া স্থির এবং সচল দূষণ উৎস থেকে সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের উৎপাদন এবং নিক্ষেপ নিয়ন্ত্রিত করে বা বাধা দিয়ে অ্যাসিড বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

অম্ল বৃষ্টি কাকে বলে
অম্ল বৃষ্টির জন্য দায়ী কোন গ্যাস
অম্ল বৃষ্টির কারণ
অম্ল বৃষ্টির প্রভাব
অম্ল বৃষ্টি কীভাবে সৃষ্টি হয়
অম্ল বৃষ্টি বলতে কী বোঝো
অম্ল বৃষ্টি কী
অ্যাসিড বৃষ্টি
অম্ল বৃষ্টি প্রতিকারের উপায়
অম্ল বৃষ্টির কারণ গুলি লেখ
অম্ল বৃষ্টি টিকা

অম্ল বৃষ্টির সংজ্ঞা

অ্যাসিড বৃষ্টি কাকে বলে
অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ
অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য কোন গ্যাস দায়ী

অ্যাসিড বৃষ্টির সমাধান
অ্যাসিড বৃষ্টির ক্ষতিকারক প্রভাব
অ্যাসিড বৃষ্টির প্রতিকার
অ্যাসিড বৃষ্টি টিকা
acid rain is caused by
acid rain effects
acid rain definition
acid rain contains
acid rain causes and effects
acid rain and its effects pdf
acid rain and its harmful effects
acid rain acid name
acid rain bengali



Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)