Class 8 : অষ্টম শ্রেণীর পঞ্চম অধ্যায় মেঘ ও বৃষ্টি Importent Question
1. সম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে? এর বিশেষত্ব বা বৈশিষ্ট্য ?
উত্তর: কোনো স্থানে নির্দিষ্ট উস্নতাযুক্ত বায়ুতে সর্বাধিক যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকা দরকার তার সমস্তটাই যখন সেই বায়ু ধারণ করে, তখন তাকে সম্পৃক্ত বায়ু বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে।
◆ বৈশিষ্ট্য বা বিশেষত্ব :
১. সম্পৃক্ত বায়ু হল এমনই এক বায়ু, যা জলীয় বাষ্প ধারণের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্দেশ করে।
২. এই বায়ুতে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প যুক্ত হলে তা ভূপৃষ্ঠেই ফিরে আসে।
৩. বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কে পৌছোলে বায়ু সম্পৃক্ত হয়।
৪.বৃষ্টি বা তুষারপাত সৃষ্টিতে সম্পৃক্ত বায়ুর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
2. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের ভূমিকা লেখো।
উত্তর : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের ভূমিকা অপরিসীম। যেমন—
১. জলীয় বাষ্প ছাড়া মেঘ সৃষ্টি হতে পারে না। আর মেঘ না হলে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ ঘটা সম্ভব নয়। তাই, অধঃক্ষেপণ সৃষ্টিতে জলীয় বাষ্পের ভূমিকা অপরিসীম।
2. জলীয় বাষ্প সৌরকিরণ ও ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ, উভয়ই শোষণ করে। তাই বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি হলে উয়তা কিছুটা কম হয়।
৩. ঘনীভবনের সময় জলীয় বাষ্প লীনতাপ ত্যাগ করে, ফলে বায়ুর উয়তা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ও বায়ুতে অধিক জলীয় বাষ্প স্যাতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।
৪.বিভিন্ন শিল্পে জলীয় বাষ্পের প্রভাব দেখা যায়। যেমন— বয়নশিল্পের পক্ষে বায়ুর আর্দ্রতা অনুকূল৷ কিন্তু ময়দা, সিমেন্ট প্রভৃতি শিল্পক্ষেত্রে অধিক আর্দ্রতা সমস্যার সৃষ্টি করে।
3. ভেবে বলোতো আপেক্ষিক আর্দ্রতার সঙ্গে উদ্বৃতার সম্পর্ক কীরকম?
উত্তর উস্লতার সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, উয়তা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং উয়তা হ্রাস পেলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। একটি উদাহরণের সাহায্যে এই সম্পর্ক সহজে বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, 15°C উয়তায় কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা 60%। এখন ওই বায়ুর উহ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে যদি 30°C হয়, তাহলে তার জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সুতরাং, একই পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকা সত্ত্বেও ওই বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে হবে প্রায় 30%। আবার, ওই বায়ুর উদ্বৃতা কমে গিয়ে যদি 5°C হয়, তাহলে ওই একই পরিমাণ জলীয় বাষ্পতেই ওই বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে যাবে, অর্থাৎ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা হবে 100%।
4. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কুয়াশা কী কী সমস্যার সৃষ্টি করে? ★
উত্তর: কুয়াশা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যেসব বাধার সৃষ্টি করে সেগুলি হল—
১. মানুষের দৃষ্টির প্রসারতা কমিয়ে দেয়।
২. রাস্তায় যানবাহন চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
৩.বিমান ওঠানামা করতে পারে না। ও পর্বতারোহণে বাধার সৃষ্টি করে।
৪. ঘন কুয়াশা মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ সিক্ত করে দেয়।
৫. অতিরিক্ত কুয়াশা বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে দিতে পারে।
5. শীতকালে কেন কুয়াশা দেখা যায় ?
উত্তর: শীতকালে এবং জলাশয়ের ওপর কুয়াশা বেশি দেখা যায়,কারণ—
১.শীতকালে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। ফলে, গড় তাপমাত্রা অনেক কম থাকে।
২. স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগ রাত্রিবেলায় অধিক শীতল থাকে।
৩. অধিক শীতলতার সংস্পর্শে বায়ুমণ্ডল মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প জলাশয়ের ওপর বেশি পরিমাণে ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে।
6. নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয় কেন?** অথবা, নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন বিকেলের দিকে বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর: জলীয় বাষ্পপূর্ণ উয় ও আর্দ্র বায়ু পরিচলন পদ্ধতিতে সোজা উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে সরাসরি বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে নেমে এলে তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে ৷
নিরক্ষীয় অঞ্চলে (5° উত্তর 5° দক্ষিণ অক্ষরেখা) সারাবছর বিকেল ও সন্ধেবেলা সর্বাধিক পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। কারণ—
১. লম্ব সূর্যরশ্মি: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় 27°C-30°C থাকে, যার ফলে বাষ্পীভবনও বেশি ঘটে।
২. বিস্তীর্ণ জলভাগ : এই অঞ্চলে প্রশাস্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি পরিচলন বৃষ্টির জন্য জলীয় বাষ্পের জোগান দেয়।
৩.বায়ুর চাপ ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা : বায়ুর চাপ কম বলে ঊর্ধ্বগামী উয়-আর্দ্র বায়ু বিকেলের দিকে দ্রুত শীতল হওয়ায় জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে, ফলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়তে থাকে।
● ঘনীভবন প্রক্রিয়া অধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতায় বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় জলকণায় পরিণত হয় এবং পরিচলন বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়।
উদাহরণ : আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকা, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকায় গড়ে 150-300 সেমি বৃষ্টিপাত হয়।
7.বায়ুমণ্ডলের সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটে না কেন? ★★
উত্তর: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প বা ঘনীভূত জলকণার সম্মিলিত রূপ হল মেঘ। কিন্তু সমস্ত প্রকার মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটে না, তার কারণ—
● জলকণার ব্যাস : অধিকাংশ সময় মেঘের জলকণার ব্যাস থাকে 10–15 মাইক্রন। যতক্ষণ না এই মেঘের জলকণাগুলির ব্যাস 2 মিলিমিটার বা তার বেশি হয়, ততক্ষণ জলকণাগুলি বৃষ্টিপাত ঘটায় না।
● জলকণার সংযুক্তিকরণ : প্রতিটি মেঘ যখন বায়ুমণ্ডলে বিক্ষিপ্তভাবে ভেসে থাকে, তখন মেঘে থাকা বিভিন্ন জলকণা সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না, তাই বৃষ্টিপাতের অবস্থা তৈরি হয় না।
● আপেক্ষিক আর্দ্রতা : বায়ুমণ্ডলীয় আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% না থাকলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হতে পারে না, তাই বৃষ্টিপাত হয় না।
● মেঘের অবস্থান : বায়ুমণ্ডলের মেঘ ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে চলে এলে তা শিশিরাঙ্কে (Dew Point) পৌঁছোতে পারে না। ফলে, ঘনীভবন না হওয়ার দরুন বৃষ্টিপাত ঘটে না।
8. নিরক্ষীয় অঞ্চলে বিকেলের দিকে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর: নিরক্ষীয় অঞ্চলের 5°-10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগের পরিমাণ বেশি। যেহেতু, এই অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয়, তাই এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রাও প্রায় 27°C থাকে। ফলে, এই উচ্চ তাপমাত্রায় এখানকার বিস্তীর্ণ জলরাশি থেকে সৃষ্ট জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পরিচলন পদ্ধতিতে ঊর্ধ্বগামী হয় এবং বিকেলের দিকে তা স্তূপাকার মেঘে পরিণত হয়। এরপর ওই মেঘে আরো বেশি পরিমাণে জলীয় বাষ্প যুক্ত হলে তখন সেখানে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ বা নীরদ স্তূপ মেঘ সৃষ্টি হয়। সারাদিন ধরে মেঘ সৃষ্টির পর এই মেঘ থেকে বিকেল 4টে নাগাদ বজ্রবিদ্যুৎসহ মুশলধারে পরিচলন বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই বিকেল 4টের সময় পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় বলে একে 4 0' Clock Rain বলে।
9.গ্রীষ্মকালে পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হয় কেন? ★★
উত্তর: গ্রীষ্মকালে কোনো অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় বায়ুমণ্ডলের উয়তা বেশি হয়। ফলে, বাষ্পীভবনের হার বেশি হওয়ায় জলভাগ থেকে বিপুল পরিমাণ জলরাশি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। জলীয় বাষ্পের জোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, জলীয় বাষ্প দ্রুত ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি পরস্পর সংযুক্ত হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পরিচলন বৃষ্টিরূপে অধঃক্ষিপ্ত হয়। তাই, গ্রীষ্মকালে পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
10. ভারতে কোন ধরনের বৃষ্টিপাত খুব বেশি দেখা যায় এবং কেন?
উত্তর : ভারতে সাধারণত শৈলোৎক্ষেপ শ্রেণির বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কারণ –
ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়। এই উয় ও আর্দ্র বায়ু আরবসাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় এই দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। আরবসাগরীয় শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধা পেয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটায়। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মেঘালয়ের খাসি, জয়ন্তিয়া প্রভৃতি পাহাড়ে বাধা পেয়ে উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।
11. মৌসুমি বায়ুর কোন্ শাখার প্রভাবে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয় এবং কেন?*
উত্তর: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে থাকে।
কারণ : মার্চ-মে মাস পর্যন্ত ক্রান্তীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ার কারণে মধ্যভারতে গভীর নিম্নচাপ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় এবং বঙ্গোপসাগরের জলভাগে উচ্চচাপ বিরাজ করে। এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যখন ভারতে প্রবেশ করে, তার একটি অংশ উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অঞ্চলে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে বাধা পেয়ে চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম অঞ্চলে বার্ষিক 1,300 সেমিরও বেশি শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।
12. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে অনুবাত ঢালে কম বৃষ্টি হয় কেন? – ব্যাখ্যা করো। অথবা, বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলতে কী বোঝো? কেন অনুবাত ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল তৈরি হয়? ★
উত্তর
সংজ্ঞা : প্রতিবাত ঢালের তুলনায় পর্বতের অনুবাত ঢালে বৃষ্টিপাত খুবই কম হওয়ার জন্য অনুবাত ঢালে অবস্থিত অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
সৃষ্টির কারণ : জলীয় বাষ্পপূর্ণ উষ্ম বায়ু পর্বতের প্রতিবাত ঢাল বেয়ে উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে সেখানেই প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন পর্বতের বিপরীত দিকে অর্থাৎ অনুবাত ঢালে পৌঁছোয় তখন সেখানে তেমন বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না, কারণ—
১.অনুবাত ঢালে যাওয়ার পর এই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ একেবারে কমে যায় এবং
২. এই বায়ু উপর থেকে নীচে নামে বলে এর উদ্বৃতা ধীরে ধীরে (10°C/কিমি) বাড়তে থাকে। ফলে, বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই বায়ু অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এই দুই কারণে প্রতিবাত ঢালের তুলনায় অনুবাত ঢালে খুবই কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনুবাত ঢালের দিকের অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rainshadow Zone) বলা হয়।
↑ উদাহরণ : • পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল।
●মেঘালয়ের রাজধানী শিলং প্রভৃতি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের উদাহরণ।
13. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয় কেন? ★★
উত্তর বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হওয়ার কারণগুলি হল –
• সূর্যরশ্মির পতনকোণ : পৃথিবীপৃষ্ঠে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ার ফলে তা জলাশয়ের জলকে বেশি উত্তপ্ত করে, সেখানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হয়। আবার, যেখানে সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পড়ে, সেখানে জলাশয়ের জল কম উত্তপ্ত হয়। ফলে, সেখানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হয়।
● জলভাগের উপস্থিতি ও বায়ুর উন্নতা: বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ জলভাগের উপস্থিতি এবং বায়ুর উন্নতার ওপর নির্ভর করে। যে স্থানে জলভাগের বিস্তৃতি বেশি, সেই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হয় তবে বাষ্পীভবনের হারও বেশি হয়। ফলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। যেমন – নিরক্ষীয় অঞ্চল। আবার, কোনো স্থানে জলভাগের বিস্তৃতি বেশি হওয়া সত্ত্বেও উদ্বৃতা যদি কম হয়, তবে বাষ্পীভবনের হার কম হওয়ায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও কম হয়। আবার কোনো অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হয়, কিন্তু জলভাগের অভাব থাকলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের অভাব লক্ষ করা যায়।
● অরণ্যের উপস্থিতি : গভীর গহন অরণ্যভূমিতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। অথচ স্বল্প অরণ্যযুক্ত অঞ্চলে, মরু অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হয়। এর কারণ অরণ্যরাজির প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচুর জলীয় বাষ্প বাতাসে যুক্ত হয়।
14. শুষ্ক অঞ্চলে শিশির কম পড়ে' কারণ ব্যাখ্যা করো।★
উত্তর বায়ু মধ্যস্থিত জলীয় বাষ্প শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে ঘাস বা গাছের পাতার ওপর জলবিন্দুর আকারে সঞ্চিত হলে, তাকে শিশির বলে। অর্থাৎ, শিশির হল জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে জলকণায় পরিণত হওয়ার একটি রূপ। তাই শুষ্ক অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকায় ঘনীভবন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের অভাব দেখা যায়, তাই শুষ্ক অঞ্চলে আর্দ্র অঞ্চল অপেক্ষা কম শিশির পড়ে।
15. শরৎকালে বা শীতকালে ভোরবেলা ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটলে পা ভিজে যায় কেন? **
উত্তর শরৎকালে বা শীতকালে মেঘমুক্ত রাতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে অধিক শীতল হয়ে পড়ে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলবিন্দুতে পরিণত হয় এবং ভোররাতে ঘাসের আগায় শিশির বিন্দুরূপে জমা হতে থাকে। তাই, ভোরবেলা ঘাসের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটলে পা ভিজে যায়। দিনের আলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশির বিন্দুগুলি ক্রমশ বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
16.শিশির ও কুয়াশা অধঃক্ষেপণ নয় কেন? *★*★
উত্তর শিশির ও কুয়াশা হল ঘনীভবনের রূপ বিশেষ। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শীতল স্থানের সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়ে গাছের পাতা ও ঘাসের ওপর শিশিররূপে সঞ্চিত হয়। আবার, জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলকণায় পরিণত হয়ে ধোঁয়ার আকারে কুয়াশারূপে ভেসে বেড়ায়। বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে, তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। শিশির ও কুয়াশা যেহেতু ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে সৃষ্টি হয়, তাই এরা অধঃক্ষেপণ নয়।
17 শীতকালে জলাশয়ের ওপর কুয়াশা বেশি দেখা যায় কেন? ★★
উত্তর: শীতকালে জলাশয়ের ওপর কুয়াশা বেশি দেখা যায়, তার কারণ—
১.শীতকালে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে ফলে, গড় তাপমাত্রা অনেক কম থাকে।
২. স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগ রাত্রিবেলায় অধিক শীতল থাকে।
৩.অধিক শীতলতার সংস্পর্শে বায়ুমণ্ডলের মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প জলাশয়ের ওপর বেশি পরিমাণে ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে।
18. শহরাঞ্চলে বা শিল্পাঞ্চলে কুয়াশা খুব বেশি দেখা যায় কেন?
উত্তর শহরাঞ্চলে বা শিল্পাঞ্চলে প্রচুর যানবাহন চলাচল ও শিল্পকারখানার অবস্থানের জন্য বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা, কার্বনকণা, ছাই ভাসতে থাকে। ভোররাতে ভূপৃষ্ঠ অত্যন্ত শীতল হয়ে পড়লে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে এইসব কঠিন কণাকে আশ্রয় করে সহজেই কুয়াশায় পরিণত হয়। একারণে শহরাঞ্চলে বা শিল্পাঞ্চলে কুয়াশা খুব বেশি দেখা যায়।
Comments
Post a Comment