Human Geography: write the Contribution of Humboldt and Ritter, Objectives of Human Geography.
●● অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে মানবীয় ভূগোলে জার্মান ভৌগোলিকদের অবদান :
আধুনিক ভূগোলর প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট ও কার্ল রিটার এর অবদান কালকে ভৌগোলিক জ্ঞান ক্রমবিকাশের ইতিহাসে আধুনিক ধ্রুপদী কাল (Modern Classical Period) নামে অভিহিত করা হয়।
* আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট (Friedrich Willhelm Heinrich Alexander Von Humboldt, 14 September, 1769-6 May, 1859) :
মানবীয় ভূগোল এ আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট এর প্রকৃত অবদান মূল্যায়ন করা কঠিন। তা সত্বেও তার বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়ন ও গবেষণা এবং প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে তার অবদানকে সহজে বোঝা যায়। জার্মান ভৌগোলিক আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট হলেন আধুনিক ভূগোলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রণালীবদ্ধ ভূগোলের উদ্ভাবক, ধ্রুপদী ভূগোলের জনক এবং জলবায়ুগত ভূগোলের প্রবর্তক। হামবোল্ট রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল—‘Cosmos’। হামবোল্ট ভূগোলকে প্রাকৃতিক ও মানবীয় ভূগোলে বিভক্ত করেছেন। তিনি নিয়ন্ত্রণবাদের কট্টর সমর্থক ছিলেন। হামবোল্টের অধ্যায়নে ডারউইনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তিনি মনে করেন মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপগুলো ভৌগোলিক পরিবেশের ধারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি ভূগোলের পৃথক স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে মানবীয় ভূগোলকে প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে আলাদা করে এবং মানবীয় ভূগোলের চিত্র : আলেকজান্ডার ভন বিভিন্ন বিষয় বস্তুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপশাখা সৃষ্টিতে সাহায্য করেন। হামবোল্ট উপলব্ধি করেছিলেন যে পরিবেশ মানুষকে প্রভাবিত করে, তিনি বিশ্বাস করেন যে পার্বত্য এলাকার অধিবাসীরা সমভূমি এলাকার অধিবাসীদের চেয়ে যথেষ্ট স্বতন্ত্র নয়।
* কার্ল রিটার (Carl Ritter August, 7, 1779-September 28, 1859)
কার্ল রিটার একজন প্রখ্যাত জার্মান ভূগোলবিদ। আলেকজান্ডার ফল হুমবোল্ট-এর সাথে সাথে তাঁকেও আধুনিক মানবীয় ভূগোলের অন্যতম স্থপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। 1870 সালে হামবোল্ট এর সাথে প্রথম কার্ল রিটারের পরিচয় হয়। তাঁর প্রকাশিত বিখ্যাত গ্রন্থটি হল “Erdkunde”। তাঁর মতে ভূগোল মানুষকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয় মানবীয় ভূগোল মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক, মানুষ ও তার ইতিহাস এর মধ্যস্থিত যোগাযোগ এবং যে ভূমিরূপ সে বাস করে তার অনুসন্ধান করে। কার্ল রিটার মানুষকে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সমন্বিত একটি অংশ হিসেবে দেখেছেন, বিশ্বাস করতেন যে পরিবেশ নিজেই মানবজাতির উন্নয়ন ধারা নির্ধারণ করতে সমর্থ। । মানুষের ওপরে মাটির প্রভাব এবং মাটির উপরে মানুষের বিনিময় কৃত কার্যকলাপ উভয়েই তার কাছে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তার মৌলিক ধারণা গুলোতে মানুষ পরিবেশ সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
■ মানবীয় ভূগোল পাঠের উদ্দেশ্য (Objectives of Human Geography)
ভূগোল শাস্ত্রের যে শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মানব জাতি চরিত্র, দেহ গঠন, ভাষা, আচার ব্যবহার ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বিভিন্নতা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়, তাকে মানবীয় ভূগোল বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জৈবিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার পার্থক্যের কারণে সৃষ্ট ভৌগোলিক কারণগুলি অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে মানবীয় ভূগোলের যে বিভিন্ন দিক গড়ে ওঠে তাই মানবীয় ভূগোলের প্রধান আলোচনা বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হয়। মানবীয় ভূগোল গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানবীয় ভূগোলের জ্ঞান মানুষকে তার পরিবেশ ও মানবীয় মানব জাতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করে। মানুষকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সচেতন করে তোলে। নিম্নে মানবীয় ভূগোলের মানবীয় ভূগোল পাঠের উদ্দেশ্য নিম্নে আলোচনা করা হল:
1. অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে মানবীয় ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রকার প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কিভাবে কার্যকরী হয়, তার একটি বাস্তব চিত্র মানবীয় ভূগোল এর মাধ্যমে জানা যায়।
2. মানবীয় গোষ্ঠীর অভিযোজন সম্পর্কে জানা;
পৃথিবীর মানব গোষ্ঠীর অভিযোজন সম্পর্কে জানতে মানবীয় ভূগোল পাঠের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পৃথিবী পৃথিবীপৃষ্ঠে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী কিভাবে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে যা অভিযোজন করে বেঁচে রয়েছে, তার বিজ্ঞানধর্মী ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ মানবীয় ভূগোলে করা হয়।
3. অর্থনৈতিক উন্নয়নের পন্থা জানা:
মানবীয় ভূগোল পাঠের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পন্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক অবস্থার সুযোগ কিভাবে গ্রহণ করে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা কতদুর উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে, তা মানবীয় ভূগোলের মাধমে সঠিক ভাবে জানা যায়।
4. সংস্কৃতিগত পার্থক্যের কারণ বিশ্লেষণ :
পৃথিবীর মানুষকে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। উন্নত দেশ গুলিতে যেমন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হলেও সংস্কৃতিগত দিত থেকে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এই পার্থক্যের কারণ মানবীয় ভূগোল বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
5. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সম্পর্কে জানা;-
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সম্পর্কে জানতে হলে মানবীয় ভূগোল অধ্যায়ন বিশেষ প্রয়োজন। কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবীর মানুষ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা মানবীয় ভূগোল এ আলোচনা করা হয়।
6. অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্নত করার প্রয়াস :
মানবীয় ভূগোেলর মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর মানব সমাজকে উন্নত, অর্ধোন্নত, উন্নয়নকামী, অনুন্নত ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করে তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক অনুন্নত সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নত করার চেষ্টা চালানো সম্ভব। তাই মানবীয় ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম।
7. অনুন্নত দেশগুলিকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করা :
অনুন্নত দেশগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে মানবীয় ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা অনুন্নত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করা যায় তার বিশদ আলোচনা পর্যালোচনা ও মানবীয় ভূগোল এ স্থান পায়।
৪. পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন :
পৃথিবীর সব অঞ্চলের পরিবহনব্যবস্থা এক রকম নয়। কোন অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও কোন অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত। মানবীয় ভূগোেলর অধ্যায়নের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। সুতরাং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে মানবীয় ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম।
9. লাভজনক দৃষ্টিভঙ্গি :
ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প কারখানা, চাষাবাদ প্রভৃতি কাজকর্ম কোন স্থানে লাভজনকভাবে গড়ে তোলা যায় সেই সম্পর্কে তার আঞ্চলিক সুযোগ সুবিধা কি প্রকৃতির সেই সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা মানবীয় ভূগোল থেকে জানা যায়।
10. পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ :
পরিবেশ দ্বারা কিভাবে কৃষ্টি, জীবনযাত্রা তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয় সে সম্পর্কে মানবীয় ভূগোল একটা স্বচ্ছ ধারণা গড়ে তোলে।
11. উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা :
একই রকম প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ এর মধ্যে বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী বসবাস করলে বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হয়। একই সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা বিশিষ্ট মানব ভৌগোলিক পরিবেশের বিভিন্নতার ফলে বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে আবার পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান বা দেশ আছে যেখানে যথেষ্ট পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে অথচ সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার অভাবে সেখানে মানব উন্নয়ন আজ ঘটেনি।
Comments
Post a Comment