Human Geography;: the Nature and Scope of Human Geography (GeographyHonour)
★★ মানবীয়ভূগোলের পরিধি (Scope of Human Geography)
মানবীয় ভূগোলর প্রধান কেন্দ্রবিন্দুই হল মানুষ কিন্তু মানবীয় ভূগোলর পরিধি শুধুমাত্র কিন্তু মানুষ পরিবেশের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এর বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণও রয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞানী তাই সর্বদাই এই মানবীয় ভূগোলের পরিধিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তা সর্বক্ষেত্রে যথাযথ হয়নি। তবে এদের মধ্যে কয়েকজন মানবীয় ভূগোলবিদের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য, যেমন, ই.হান্টিংটন, এ.ভি পারপিলো, ভি সি. ফ্রিঞ্জ ও জি.টি ট্রিওয়ার্থা, যারা মানবীয় ভূগোলের পরিধিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে ব্যাখ্যা করেছেন মানবীয় ভূগোলর পরিধি নিম্নে আলোচনা করা হল বিভিন্ন মানবীয় ভূগোলবিদদের ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে—
1. ই. হান্টিংটন এর ধারণা (Ellsworth Huntington, September 16, 1876-October 17, 1947):
হান্টিংটন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট ভৌগোলিক যিনি তার বিভিন্ন গ্রন্থে যেমন “Civilization and Climate”(1915), “Human Habitat” (1927) উল্লেখ করেছেন মানবীয় ভূগোলের পরিধিকে। মানবীয় ভূগোলের বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন জৈব প্রাকৃতিক পরিবেশ এর পরিপ্রেক্ষিতে। নিচের সারণিতে মানবীয় ভূগোলের বিভিন্ন উপাদান গুলি দেখানো-
হান্টিংটনের মত অনুসারে মানবীয় ভূগোলের উপাদান
হান্টিংটনের মতে জৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের সকল উপাদান একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং একে অপরকে প্রভাবি করে, সেই সঙ্গে সম্মিলিতভাবে মানব জীবন এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়, যার আবার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় মানুষের ব্যবহারে মাধ্যমে, চিত্রে যার উল্লেখও রয়েছে।
হান্টিংটনের দেওয়া সারণি অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে তিনি মানবীয় ভূগোল এ প্রাকৃতিক পরিবেশের যে দিকগুলি আলে দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন, সেগুলি হল—
A. গোলক রূপে পৃথিবী :
গোলক রূপে পৃথিবীকে বিশ্লেষণ করা যায় নিম্নলিখিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সেগুলি হল—
I. মানুষের বসবাসস্থল (Earth as a home of Man) :
প্রথমেই আমরা পৃথিবীকে মানুষের বসবাস স্থল হিসেবে দেখে থাকি। তাই মানুষ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীকে নানাভাবে পরিবর্তিত করে চলেছে।
II. পৃথিবীপৃষ্ঠের নানা পরিবর্তন ও মানব জীবনে তার প্রভাব (The changes on the surface of the Earth and its effect on Human life):
বিভিন্ন প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ঘটনা ভূপৃষ্ঠের চারিত্রিক গঠনকে পরিবর্তিত করছে, যা মানবীয় জীবনকেও প্রভাবিত করছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, বন্যা, খরা ইতাদি। আবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ মানব জীবন যাত্রা ও তার মান নির্ধারণ করে।
III. কাঁচামাল সরবরাহ (The Earth alone offers raw materials) :
শিল্প উন্নয়নের জন্য দরকার কাঁচামাল। আর সেই কাঁচামাল পাওয়া যায় ভূগর্ভে, যা আবার ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর সর্বস্থ অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এটি অত্যাবশ্যক।
b. জলভাগ (Watermass) :
ভূপৃষ্ঠের শতকরা 30 ভাগ স্থল এবং 70 ভাগ জল, 30% স্থলভাগ যদি বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়, তবে 70% জলভাগ ও যথেষ্ট বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে মহাসাগর সাগর, উপসাগর, নদী-নালা, খাল বিল ইত্যাদি। বিভিন্ন রূপে থাকা এই জলভাগ মানব সভ্যতার বিকাশের অন্যতম ক্ষেত্র কারণ জল শুধু জীবন দানই করে না, তার সাথে কৃষিকাজ, পরিবহন, বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করে। পৃথিবীর অধিকাংশ সুপ্রাচীন সভ্যতা নদীকে ভিত্তি করেই তার তীরে গড়ে উঠেছিল। যেমন, সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এছাড়া দেখা যায় পৃথিবীর সকল বড় বড় বাণিজ্যনির্ভর শহরগুলি সমুদ্র তীরে গড়ে উঠেছে। নদী বিধৌত অঞ্চলগুলি পলিগঠিত উর্বর মৃত্তিকাসমৃদ্ধ হওয়ায় কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত হয়। যেমন, ভারতের গঙ্গা, যমুনা, কাবেরী নদী বিধৌত অঞ্চলগুলি তাই কৃষি প্রধান। এইভাবে পৃথিবীর জলভাগ প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মানব পরিবেশের ও উপাদান।
C. মৃত্তিকা ও খনিজ (Soils and Minerals) :
ভূত্বকের উপরিভাগে অবস্থিত সূক্ষ্ম শিথিল আবরণ যা ভূপৃষ্ঠের ওপর আচ্ছাদিত হয়ে অবস্থান করে, তাকে মৃত্তিকা বলে। শিলা আবহবিকার প্রাপ্ত হয়ে খনিজ আলগা হয়ে জৈব পদার্তের সাথে মিশে মৃত্তিকা সৃষ্টি করে। মৃত্তিকা শুধুমাত্র উদ্ভিদের আধারই নয়, সে সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। মৃত্তিকা প্রকৃতি (ভৌত ও রাসায়নিক), জল ধারণ ক্ষমতা, উর্বরাশক্তি ইত্যাদি গুণাবলী কৃষিকার্যকে অত্যন্ত প্রভাবিত করে। তাই মৃত্তিকার আঞ্চলিক বিভিন্নতা অনুসারে কৃষিজ ফসলের উৎপাদনের আঞ্চলিক বন্টনের পার্থক্য দেখা যায়। সেই সঙ্গে কোন কৃষিনির্ভর অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট প্রভাবিত হয় পরোক্ষভাবে এই মৃত্তিকা দ্বারা। আবার খনিজ পদার্থের উপস্থিতি যে কোন অঞ্চল কে সম্পদশালী করে ধরে তোলে। দেখা গেছে পাললিক শিলা গঠিত অঞ্চলে চুনাপাথর, ডলোমাইট, কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদি পাওয়া যায়। খনিজের উপস্থিতির উপর ভিত্তিকরে শিল্প গড়ে ওঠে। শিল্পের উন্নতি যে কোন দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত করে তোলে।
d. জলবায়ু (Climate) :
জলবায়ু প্রকৃতির অন্যতম উপাদান। জলবায়ুর বিভিন্নতার কারণে ভূমিরূপ মৃত্তিকা, উদ্ভিজ্জ, নদনদীর বৈশিষ্ট্য ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়। আবার প্রকৃতির এই সকল উপাদান গুলি ও জলবায়ুকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। যেমন, জলবায়ুর প্রভাবে কোন অঞ্চলের কৃষিজ উৎপাদন নির্ধারিত হয়, বনজ সম্পদের প্রতুলতা বা অপ্রতুলতা, তৃণভূমির অবস্থান, পশুচারণ এর সুযোগ অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। এছাড়া এর সাথে পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত সেই স্থানের মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস, বসতির ধরন, পোশাক-পরিচ্ছদ, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি৷
2. এম. ভিন্ সেন্ট পারপিলোও এর ধারণা (Aimé Vincent Perpillou, 24 January, 1902-12 February, 1976) :
ফ্রান্সের মানবীয় ভূগোলবিদ এম. ভিন্ সেন্ট পারপিলোও তার বিখ্যাত গ্রন্থ “Human Geography" (1966) তে বলেন মানবীয় ভূগোলর চারটি বিভাগ রয়েছে, এই বিভাগগুলি হল—
i. মানব বিবর্তনের উপাদানসমূহ (Factors of Human Geography):
এখানে মানব বিবর্তনের যে সকল উপাদানগুলি কার্যকর হয়, সেগুলিই আলোচনা করা হয়। এখানে মানুষের প্রকৃতি নির্ভর জীবন থেকে প্রযুক্তি নির্ভর সাংস্কৃতিক পদ্ধতি সমূহের উল্লেখ এখানে রয়েছে।
ii. পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন (Form of adaptiation to the Environment) :
বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিভাবে তার প্রাকৃতিক পরিবেশকে আয়ত্তে আনে বা নিজেকে অভিযোজন করে তা আলোচিত এখানে হয়।
iii. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও মানব শৃংখল মোচন (Technical facts and stages in Human Emancipation) :
এই বিভাগে প্রযুক্তির উন্নয়ন, শিল্পোন্নয়ন, কারিগরি শিল্প ও এই সকল শিল্পের স্থানিক বন্টন, বাণিজ্য ইত্যাদি
3. ফিঞ্চ ও ট্রিওয়ার্থা এর ধারণা (V. C Finch and G. T Trewartha, 1949) :
ভারনর ক্লিফোর্ড ফিঞ্চ (Vermor Clifford Finch, 1883-1959) ও গ্লেন থমাস ট্রিওয়ার্থ (Glenn Tomas Threwartha, 1896-1984) তার “Elements of Geography : Physical and Cultural (1949)” গ্রন্থে মানবীয় ভূগোলের বিভিন্ন উপাদানগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন, সেগুলি হল—
i. প্রাকৃতিক উপাদান (Physical Elements) : ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, খনিজ, মৃত্তিকা, জলাভূমি, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও প্রাণী সমূহ।
ii. জনসংখ্যা (Population) : জনসংখ্যা ঘনত্ব, স্থানান্তর, গ্রাম নগর অনুপাত প্রভৃতি।
iii. সাংস্কৃতিক উপাদান (Cultural Elements) : বসতি, কৃষিকার্য, শিল্প কারিগরি, ব্যবসা ও বানিজ্য, পরিবহন ব্যবস্থা প্রভৃতি।
4. ভিদেল দ্য লা ব্লাচে (Paul Vidal de La Blache, January 22, 1845 April 5, 1918) :
আধুনিক ভূগোলর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ভিদেল দ্য লা ব্লাচে। ভূগোলের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তার “Principles of Human Geography” গ্রন্থে জনসংখা ও বসতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সভ্যতার বিবর্তন, সভ্যতার উপাদান, সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার পরিবহন, গ্রামীণ বসতি ইত্যাদি সম্পর্কেও উল্লেখ করেছিলেন। তিনি মানবীয় ভূগোলের পরিধিকে তাই তিনটি ক্ষেত্রে বিভক্ত করেছিলেন—
I. জনসংখ্যা (Population) : বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বন্টন, জনসংখ্যার পরিমাণ ও বন্টন এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
II. পরিবেশ ও মানুষ সম্পর্কে (Man Environment Relationship) :
মানুষ ও পরিবেশের আক্তঃসম্পর্ককে সভ্যতার বিবর্তনে পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা-
●পরিবেশ ও মানুষের সামঞ্জস্যতা
● কাঁচামাল ও সাজ সরঞ্জাম
●বাড়ি বানানোর উপাদান
● মানব বাসস্থান
● সভ্যতার উন্নয়ন
5. জিন ব্রুনন্স (Jean Brunhes, 25 October 1869-25 April 1930) :
1910 সালে জিন ব্রুনন্স (Jean Brunhes) মানবীয় ভূগোল সম্পর্কে তার যে বইটি লেখেন সেটি হল “Geographie Humaine Essaie De Classi fication Positive”।ইসাইহা বাওম্যান (Isaiah Bowman), আর্ ই. ডর্জ (R. E. Dodge), টি. সি. লি. কম্পটি (T. C. Le Compte) প্রমুখ মানবীয় ভূগোলগণ মানবীয় ভূগোল হিসেবে উক্ত বইটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। জিন মানবীয় ভূগোলকে ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে সমাজ ও মানুষের বাসস্থানের পারস্পরিক সম্পর্ক অলোচনার বিষয় হিসেবে দেখেছেন। তিনি মানবীয় ভূগোলের পরিধিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করেন সেগুলি হল—
A. প্রথম গোষ্ঠীর অত্যাবশ্যক তথ্য (Essential Facts of First Group) :
বিষয়টি অনুৎপাদনশীল মৃত্তিকা ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি দু ভাগে বিভক্ত—i. বাড়ি ঘর ii. প্রধান সড়ক।
B. দ্বিতীয় গোষ্ঠীর অত্যাবশ্যক তথ্য (Essential Facts of Second Group) :
এক্ষেত্রে বিষয়টি বিশ্বের উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সংক্রান্ত। এটিকেও তিনি দুটি বিশেষ ক্ষেত্র থেকে আলোচনা করেছেন। যেগুলি হলো—iii. কৃষিযোগ্য ভূমি (Cultivated Land) iv. গৃহপালিত পশু (Domestic Animal)।
C. তৃতীয় গোষ্ঠীর অত্যাবশ্যক তথ্য (Essential Facts of Third Group) :
মৃত্তিকার কিছু ধ্বংসাত্মক ব্যবহার এক্ষেত্রে আলোচিত হয়েছে, সেগুলি হল—v. প্রাণী উদ্ভিদ ধ্বংস সাধন vi. খনিজ অপব্যবহার বা রবার অর্থনীতি।
Comments
Post a Comment