Environmental Geography : সাধারণ জ্ঞান (Basic Knowledge of geography Part 2)

 ■ ভূত্বক কী? 

পৃথিবীর সবচেয়ে ওপরের কঠিন শিলাগঠিত স্তরটিকে ভূত্বক (Crust) বলে। ভূ-ত্বক কঠিন শিলা বিভিন্ন পাত বা হেঁটি (plate) দিয়ে তৈরি। এই পাতগুলি ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের নমনীয় শিলার ওপর ভাসম অবস্থায় রয়েছে। ভূত্বক দুই প্রকার, যথা – মহাদেশীয় ভূত্বক ও মহাসাগরীয় ভূত্বক। ভূত্বককে উপাদানের ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- সিয়াল (sial) ও সিমা (sima)।


■ সিয়াল কী? 

ভূত্বকের সবচেয়ে ওপরে সিলিকন (Si) ও অ্যালুমিনিয়াম (Al) সমৃদ্ধ শিলা স্তরকে সিয়াল* (SIAL) বলে। সিয়াল মহাদেশ বা স্থলভাগ গঠন করে।


■ মহাদেশীয় ভূত্বক কী? 

সিয়াল গঠিত ভূত্বককে মহাদেশীয় ভূত্বক (Continental Crust) বলা হয়। মহাদেশের নীচে সিয়াজে গড় বিস্তৃতি প্রায় 30-40 কিমি। গ্র্যানিট জাতীয় আগ্নেয় শিলা, নিস ও সিস্ট জাতীয় রূপান্তরিত শিলা ও বিভিন্ন পাললিক শিলা, যেমন— বেলেপাথর শেল ইত্যাদি মহাদেশীয় ভূত্বক বা সিয়াল-এর প্রধান উপাদান ।


■ সিমা কী?

 ভূ-ত্বকের সর্বনিম্ন অংশে সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Mg) সমৃদ্ধ শিলা স্তরকে সিমা** (SIMA) বলে। সমুদ্রের নীচে 5 কিমি থেকে 7 কিমি পর্যন্ত সিমা-র বিস্তৃতি। 


■ মহাসাগরীয় ভূত্বক কী?


ভূত্বকের সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম গঠিত অংশটিকে মহাসাগরীয় ভূত্বক (Oceanic Crust)-ও বল হয়। মহাসাগরীয় ভূত্বক সমুদ্রের তলদেশ তৈরি করেছে। ব্যাসন্ট (Basalt) জাতীয় ক্ষারীয় আগ্নেয়শিলা মহাসাগরীয় ভূত্বক বা সিমার প্রধান উপাদান। সিমা-র নিম্নসীমান্তে রয়েছে ‘মোহো বিযুক্তি' (Moha discontinuity)।


■ মোহো বিযুক্তি কী?

ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের মধ্যবর্তী সীমানাকে মোহো বিযুক্তি বলে (Mohorovicic discontinuity) মহাদেশীয় ভূত্বকেরনীচে 35 কিমি এবং মহাসাগরীয় ভূত্বকের নীচে 7 কিমি গভীরতায় মোহো বিযুক্তি অবস্থিত।


জিগ-স-ফিট (Jig-saw-fit) কী ?

দুই বা একাধিক মহাদেশের মধ্যে পরস্পর জোড় লাগানো মিলকে জিগ-স-ফিট (Jig-saw-fit) বলে। যেমন আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ও দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলের মধ্যে জোড়।


■ মহাদেশগুলি পরস্পরের থেকে কী হারে সরছে? 

গড়ে প্রতি বছরে 20 থেকে 75 মিলিমিটার হারে মহাদেশগুলি সরছে। আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের উদাহরণ নিলে দেখা যায় যে আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশ পার্সিয়ান উপযুগ থেকে (Permian period) গড়ে 30 বছরে । মিটার হারে পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে আটলান্টিক মহাসাগর তৈরি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যেও এই সরণের স্বপক্ষে প্রমাণ মিলেছে।


■ পাত বা প্লেট কী ?

 বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনের কঠিন শিলার যে চলমান চাদরগুলি ভূত্বক গঠন করেছে, তাকে পাত বা প্লেট (Plate) বলে। ভূত্বকে 7টি বড়ো এবং 20টি ছোটো প্লেট আছে।


■ রেগোলিধ কথাটির অর্থ কী?

আবহবিকার(Weathering) এর প্রভাভে ভুতকের উপরে চূর্ণ-বিচূর্ণ বিয়োজিত শিলার শিথিল স্তরকে regolith বলে ।

■ ধৌত প্রক্রিয়া বা লিচিং কী?

জলের মাধ্যমে মাটির একটি স্তর থেকে খনিজ লবণ এবং অন্যান্য পদার্থের অপসারণকে ধৌত ব ধৌতি প্রক্রিয়া (ইংরেজি পরিভাষায় লিচিং [leaching]) বলে। 


■ হিউমাস স্তর কী?

 মাটির A স্তরের ওপরে হিউমাস স্তর মাটির থাকে। এটি মাটির পৃষ্ঠতর এবং বিয়োজিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ স্তর। প্রসঙ্গত, বিয়োজিত জৈব পদার্থকে হিউমাস (humus) বলে। 


■ হিউমাস কী?

সূক্ষ্ম জীবাণুরা জৈব পদার্থকে বিয়োজিত করে যে কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, প্রোটিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ পদার্থ সৃষ্টি করে, তাকে হিউমাস (humas) বলে।


 ■ মাটিতে হিউমাস বা জৈব পদার্থ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কী বলে?


হিউমাস গঠন প্রক্রিয়াকে হিউমিফিকেশন (humification) বলা হয়।


■ মাটিতে হিউমাস-এর প্রয়োজনীয়তা কী? 

হিউমাস মাটির উর্বরতা বাড়ায়। মাটিতে জল ও বায়ুর প্রবাহ সচল রাখে। মাটির গ্রথন (texture) রাখে।


■ মাটির ওপর পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলির প্রভাব কীরূপ?

 পরিবেশ মাটি ও তার বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে, যেমন – (i) অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মাটি আম্লিক (acidic) প্রকৃতির।

 (ii) স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মাটি ক্ষারীয় (alkaline) প্রকৃতির।


প্রাকৃতিক বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাট কাকে বলে?


পৃথিবীর যে স্থানে অনুকূল পরিবেশের সাহায্যে কোনো একটি জীব বা জীবগোষ্ঠী স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে ও দল বেঁধে বসবাস করে, তাকে প্রাকৃতিক বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাট (Habitat) বলে। যেমন— কাঁটা জাতীয় গাছের প্রাকৃতিক বাসভূমি হল উষ্ণ মরুভূমি; পেঙ্গুইনের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল; তিমি মাছের জন্য সমুদ্র ইত্যাদি।


        হ্যাবিট্যাট বলতে রসতি বা নিবাসও বোঝায়। উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের অবস্থান ও স্থায়ী আস্তানাকে যে অঞ্চল বা পরিবেশ সুনিশ্চিত করে, তাই হল বসতি বা নিবাস বা হ্যাবিট্যাট (habitat)


■ পরিবেশের সঙ্গে প্রাকৃতিক বাসভূমির বা হ্যাবিট্যাটের সম্পর্ক কী? 

পরিবেশের সঙ্গে প্রাকৃতিক বাসভূমির একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। অনুকূল পরিবেশ ছাড়া কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী বা কোনো গোষ্ঠীর মানুষ পৃথিবীর কোথাও সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে দলবেঁধে বসবাস করতে পারে না। পরিবেশের সাহায্য না পেলে তাদের পক্ষে সেখানে বংশ পরম্পরায় জীবনধারণ করা সম্ভব নয়। তাই পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বাসভূমি হল অবিভাজ্য। এর মধ্যে পরিবেশ হল কারণ। আর প্রাকৃতিক বাসভূমি হল ফল বা পরিণাম।

        পরিবেশ কীভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রাকৃতিক বাসভূমি গড়ে তোলে তার কয়েকটা উদাহরণ নীচে দেওয়া হল। যেমন---


(1) ভিজে, ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে প্রাকৃতিক পরিবেশ হল শৈবালের বাসভূমি। 

(2) উষ্ণ, স্বল্প বৃষ্টির মরুভূমি পরিবেশ হল কাঁটা ঝোপ বা জেরোফাইট (xerophyte) উদ্ভিদ ও উট, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীর বাসভূমি।

(3) নদীর মোহনায় লবণ ও মিষ্টি জলের মিশ্র পরিবেশ হল ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বাসভূমি। 

(4) স্থলভাগ হল উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের বাসভূমি।

(5) সমুদ্রের লবণাক্ত পরিবেশ হল সামুদ্রিক উদ্ভিদ, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বাসভূমি ইত্যাদি।


 ■ প্রাকৃতিক বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাট কয় প্রকার ও কী কী?

 বাস্তুতন্ত্র অনুসারে প্রাকৃতিক বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাট (Habitat) চার ধরনের, যেমন— (1) মিষ্টি বা সুপেয় জলের প্রাকৃতিক বাসভূমি; (2) সামুদ্রিক এলাকার প্রাকৃতিক বাসভূমি; (3) মোহনা অঞ্চলের প্রাকৃতিক বাসভূমি; (4) স্থলভাগের প্রাকৃতিক বাসভূমি।


■ লিমনোলজি কী?

লিমনোলজি (Limnology) হল হ্রদ-সংক্রান্ত বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানে সুপেয় জলের প্রাকৃতিক ও জৈব পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করা হয়। 


■ ওশানোগ্রাফি কী?

ওশানোগ্রাফি হল সমুদ্র সংক্রান্ত বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এই শাখায় সমুদ্রের প্রাকৃতিক ও জৈব পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করা হয়।


■ প্র্যাঙ্ক কী?

প্ল্যাঙ্কটন (Plankton) হল জলে ভাসমান ক্ষুদ্র জীবকণা। এদের গমনাঙ্গ নেই।


* নেন কী?

নেকটন (Nekton) হল সাঁতার কাটা জলচর জীব, যেমন- মাছ, কচ্ছপ, তিমি। এদের গমনাঙ্গ আছে।


■ হ্যালোফাইট কী?

লবণাক্ত মাটি ও সমুদ্রের লবণ জলে যে উদ্ভিদ জন্মায়, তাদের হ্যালোফাইট (Halophytes) বলে।


■ সমুদ্রের নেরিটিক বা তটীয় অঞ্চল কী?

ভটভূমির কাছে এবং উপকূল থেকে ধীরে ধীরে সমুদ্রের মধ্যে ঢালু হয়ে যাওয়া অগভীর মহীসোপানের ওপর বিস্তৃত সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রাকৃতিক বাসভূমিকে নেরিটিক (Neritic) অঞ্চল বলে। সমুদ্রের প্রায় 360 মি. গভীর পর্যন্ত নেরিটিক অঞ্চল বিস্তৃত। এখানে সামুদ্রিক শ্যাওলা, প্ল্যাঙ্কটন এবং হেরিং, ম্যাকারেল, সার্ডিন প্রভৃতি মাছ ও অগভীর এলাকার অন্যান্য জলজ প্রাণী দেখা যায়।


■ সমুদ্রের ব্যাথিয়াল বা গভীর সমুদ্রের অঞ্চল কী? 

মহীঢাল (Continental Slope) থেকে গভীর সমুদ্রের সমভূমি পর্যন্ত ব্যাথিয়াল (Bathyal) হ বিস্তৃত। 360 মি. থেকে 5,000 মিটার পর্যন্ত এই এলাকা গভীর। এখানে ভীষণ অন্ধকার। এই অঞ্চলের বাসিন্দা হল ফ্যাংটুথ ফিশ, ভাইপার ফিশ প্রভৃতি মাছ, হাঙর, সামুদ্রিক কাঁকড়া ইত্যাদি (Nekton) জীব। 


■ সমুদ্রের আলোকিত বা ফোটিক অঞ্চল কী?


গ্রিক শব্দ ‘ফোস্’ (Phos) কথাটির অর্থ আলো। সমুদ্রের যে গভীরতা পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌঁছোয় তাকে আলোকিত অঞ্চল বা ফোটিক (Photic) অঞ্চল বলে। একে ইংরেজিতে ইউফোটিক (Euphotic) অঞ্চলও বলা হয়। এখানে জলজ উদ্ভিদ ও বসবাসকারী প্রাণীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সামুদ্রিক শ্যাওলা, প্ল্যাঙ্কটন এবং হেরিং, ম্যাকারেল প্রভৃতি মাছ এখানে বসবাস করে।


■ সমুদ্রের অন্ধকার বা আফোটিক অঞ্চল কী?

গড়ে 200 মি. গভীরতা থেকে সমুদ্রের গভীরতম এলাকা পর্যন্ত অন্ধকার বা আফ্রোটিক (Aphotic) অঞ্চল বিস্তৃত। কাঁকড়া, হাঙর, তিমি মাছ, ভাইপার ফিশ প্রভৃতি নেকটন জীব এখানে পাওয়া যায়।


 ■ প্রাকৃতিক বাসভূমি হিসেবে মোহনা অঞ্চলের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য কী?

মোহনা বলতে নদী ও সাগরের মিলন অঞ্চলকে বোঝায়। এখানে জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে সাগরে লবণাক্ত জল ও নদীর মিষ্টি সুপেয় জালের মধ্যে মিশ্রণ ঘটে। এই বাসভূমির ইংরেজি নাম এসচুয়ারাইন হ্যাবিট্যাট (Estuarine habitat)। এখানে জীববৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য মোহনা অঞ্চল সুপরিচিত। যেমন, সুন্দরবন।


■ মোহনা অঞ্চলের প্রাকৃতিক বাসভূমিতে কী ধরনের জীব বাস করে?

 মোহনার প্রাকৃতিক বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাটের জীববৈচিত্র্য সমুদ্র ও নদীর তুলনায় অনেক বেশি। প্ল্যাঙ্কটন জলজ উদ্ভিদ, জলাজমির লম্বা ঘাস; ইলিশ, স্যামন প্রভৃতি মাছ ও কুমির, শুশুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণী এখানে বসবাস করে। মোহনা অঞ্চলে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে যে পরিমাণ শক্তি জলজ উদ্ভিদ জোগান দেয়, তার চেয়ে



Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)