ইকোলজি ও ইকোসিস্টেম (Ecology and Ecosystem): সমস্ত রকমের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (3 or 5 marks) --geographyhonour
ইকোলজি ও ইকোসিস্টেম (Ecology and Ecosystem)
■ বাস্তুসংস্থান বা বাস্তব্যবিদ্যা বা ইকোলজি (Ecology) বলতে কী বোঝায়?
প্রাণীবিজ্ঞানী হেকেল-এর মতে জীবের একটি সুনির্দিষ্ট পরিবেশে বেঁচে থাকার ঘটনা হল ‘ইকোলজি'। আক্ষরিক অর্থে ‘ইকোলজি' কথাটির মানে হল বাসস্থান (home) সম্পর্কে জ্ঞান বা অধ্যয়ন। আবার সামগ্রিক অর্থে জীবাণু, উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসারে জৈব এবং অজৈব উপাদানগুলির মধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত ও সক্রিয় ভাবে যে অবিরাম কাজ চলছে সেই বিষয়ে বিশদ জ্ঞান অর্জন করাকে বাস্তুসংস্থান বা ইকোলজি (Ecology) বলে।
ইকোলজি শব্দটির Meaning(মানে) ?
দুটি গ্রিক শব্দ থেকে ইকোলজি কথাটির উদ্ভব হয়েছে। শব্দ দুটি হল যথাক্রমে “oikos” (মানে বাড়ি বা গৃহ বা বাসস্থান, ইংরেজিতে home) এবং “logos” (অর্থাৎ জ্ঞান বা knowledge)।
■ ইকোলজি পাঠের উদ্দেশ্য কী?
ইকোলজি জানলে বিভিন্ন জীবের সংখ্যা অর্থাৎ “পপুলেশন” (population) সম্পর্কে ধারণা জন্মায়। তা ছাড়া, জীবের জিন ও কোশ সংক্রান্ত নানান তথ্য জানা যায়। কৃষিবিজ্ঞান, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা,পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির মধ্যে মেলবন্ধনের সুযোগ বাড়ে। জৈব সম্পদের সংরক্ষণ আরও বাস্তবমুখী হয় এবং মানুষের সচেতনতা বাড়ে।
■ সম্প্রদায় বাস্তুসংস্থান বা গোষ্ঠী বাস্তুসংস্থান বা সিন্ইকোলজি বা কমিউনিটি ইকোলজি কী?
কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির জীবগোষ্ঠীকে সেই স্থানের পরিবেশ এবং ওই জীবগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে যখন আলোচনা করা হয়, তখন তাকে সম্প্রদায় বাস্তুসংস্থান বা গোষ্ঠী সংস্থা (Community ecology) বা সিন্ইকোলজি-ও (Synecology) বলা হয়।
জনসংখ্যা বাস্তুসংস্থান বা অইকোলজি বা পপুলেশন ইকোলজি কাকে বলে?
কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী একটি প্রজাতির জনসংখ্যাকে যখন সেই স্থানের পরিবেশ এবং ওই জাতির জনসংখ্যার ভিত্তিতে আলোচনা করা হয়, তখন তাকে জনসংখ্যা বাস্তুসংস্থান ( Population ecology) বা অটইকোলজি-ও (Autecology) বলা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বণ্টন বুঝতে ইকোলজি সাহায্য করে।
মানব বাস্তুসংস্থান বা হিউম্যান ইকোলজি কাকে বলে?
মানুষকে কেন্দ্র করে বাস্তুতন্ত্র ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের আলোচনাকে মানব বাস্তুসংস্থান বা হিউম্যান ইকোলজি (Human Ecology) বলে।
বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম কাকে বলে?
বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুরীতি বা ইকোসিস্টেম (Ecosystem) বলতে একটি নির্দিষ্ট স্থানের পরিবেশ, ওই পরিবেশে বসবাসকারী জীবগোষ্ঠী এবং ওই জীবগোষ্ঠী ও পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ফলে উৎপন্ন অবস্থাকে বোঝায়। সম্পর্কের ফলে উৎপন্ন অবস্থাকে বোঝাই ।
জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তুতন্ত্রের সংজ্ঞা হল- যে নির্দিষ্ট প্রণালীতে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের জীবসম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে এবং ওই অঞ্চলের জড় বা অজৈব উপাদানের সঙ্গে আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য উৎপন্ন উপাদানের বিনিময় ঘটায়, তাকে বাস্তুরীতি বা বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) বলে।
■ ইকোসিস্টেম কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
1935 সালে বিজ্ঞানী ট্যাসলে (A G Tansley) সর্বপ্রথম ইকোসিস্টেম (Ecosystem) কথাটি ব্যবহার করেন।
■ ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য কী?
ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র হল একটি ক্রিয়াপদ্ধতি। এই পদ্ধতির সাহায্যে কোনো একটি বিশেষ অঞ্চে বসবাসকারী উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ শুধু যে নিজেদের মধ্যেই সম্পর্ক তৈরি করে তাই নয়, ওই অঞ্চলের জন্ম উপাদান যেমন, মাটি, জল, বায়ু, সূর্যালোকের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি করতে সমর্থ হয়। বাস্তুতন্ত্রের মূল ভিত্তি হল জড় জগৎ ও জীবজগৎ।
■ বায়োসিনোসিস বা বায়োসিনোস কী ?
বাস্তুতন্ত্রে কোনো বসতি-র (habitat) অন্তর্গত বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক ক্রিয়াকে বায়োসিনোসিস (biocoenosis) বা বায়েসিনোস (biocoenose) বলে।
বায়োসিনোসিস (Biocoenosis) কথাটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
বায়োসিনোসিস কথাটি সর্বপ্রথম কার্ল মোবিয়াস (Karl Mobius) ব্যবহার করেন।
■ বায়োজিওসিনোসিস(Biogeocoenosis) কী?
বায়োজিওসিনোসিস (biogeocoenosis) বলতে বাস্তুতন্ত্রে কোনো বসতি (habitat) এবং ওই বসঙ্গি অন্তর্গত বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক ক্রিয়াবিক্রিয়াকে বোঝায়।
■ বায়োজিওসিনোসিস(Biogeocoenosis) কথাটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
বায়োজিওসিনোসিস কথাটি সর্বপ্রথম সুকাচেভ (Sukachev) ব্যবহার করেন।
■ বাস্তুতন্ত্রের প্রধান নীতিগুলি কী কী?
বাস্তুতন্ত্রের প্রধান নীতিগুলি (Principles) হল --
(1) পরিবেশের একক হল বাস্তুতন্ত্র, যা পরিবেশের জড় ও জীবজ উপাদানের মিলিত ফসল।
(2) জীবমণ্ডল হল সবচেয়ে বড়ো বাস্তুতন্ত্র।
(3) বাস্তুতন্ত্রের প্রভাবে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব সুস্থায়ী (sustainable) হয়েছে ।
(4) প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সঙ্গীব উপাদানগুলি একে অন্যের ওপর ক্রিয়া করে ও প্রভাব বিস্তার করে।
(5) সৌরশক্তিকে ভিত্তি করে বাজতন্ত্রের সমস্ত কাজ ঘটে চলেছে।
(6) কাজের হার (rate)-এর বদল হলেও বাস্তুতন্ত্রে যে সমস্ত প্রাকৃতিক ও জৈৰ প্রণালীগুলি সুদুর অতীতে কাজ করেছে, তারা আজও কাজ করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
ইকোলজি এবং শ্যালো ইকোলজি বলতে কী বোঝায়?
• “ডিপ ইকোলজি" (Deep Ecology) হল পরিবেশ সংক্রান্ত একটি বিশেষ ধারণা বা আন্দোলন (movement) যেখানে মনে করা হয় যে পৃথিবী, উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের পরিবেশে সবার গুরুত্ব সমান। মানুষের কোনো বিশেষ গুরুত্ব নেই।
● "শ্যালো ইকোলজি” (Shallow Ecology) বলতে মানুষের প্রয়োজনে পরিবেশের অস্তিত্ব রক্ষার ধারণাকে বোঝায়। শ্যালো ইকোলজির মূল কথা হল মানবকেন্দ্রিক পরিবেশ। অর্থাৎ পরিবেশের সেই উপাদান বা সেই অঞ্চলগুলির সুরক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি মানুষের কাছে যার অর্থনৈতিক উপযোগিতা আছে, যেমন—পর্যটনের উদ্দেশ্যে অরণ্যের সংরক্ষণ।
ডিপ ইকোলজি”Deep Ecology -র ধারণা কে দিয়েছেন?
1973 সালে নরওয়ের প্রখ্যাত দার্শনিক ও পর্বতারোহী আরনি নেস (Arne Naess) সর্বপ্রথম “ডিপ" (Deep Ecology) কথাটি ব্যবহার করেন। |
"লাইট গ্রিন”(Light Green) শব্দটি বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের ক্ষেত্রে কী অর্থ বহন করে?
মানবকেন্দ্রিক পরিবেশ বা শ্যালো ইকোলজির ধারণা বা দর্শন (philosophy)-কে পরিবেশ বিজ্ঞানের ভাষায় “লাইট গ্রিন” (Light Green) বলা হয়।
Comments
Post a Comment