Environmental geography : ভূগোলের সাধারণ জ্ঞান (Basic Knowledge of geography ) Part 1

 1.প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?

প্রকৃতি নিজে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জীবের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে উপাদানগুলি তৈরি করেছে, সেই উপাদানগুলির সমষ্টিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ (Physical Environment) বলে।


■ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলি কী কী? 

প্রাকৃতিক পরিবেশের দুটি প্রধান উপাদান আছে। যেমন-

(1) সঞ্জীব উপাদান : 

ইংরেজি ভাষান্তরে একে বায়োটিক কমপোনেন্ট (Biotic Component) বা লিভিং কমপোনেন্ট বলে। যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, মাছ, ব্যাং, বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ, শ্যাওলা, গাছপালা ইত্যাদি। এই উপাদানগুলির জীবন আছে তাই এরা সজীব উপাদান।


Part -2 ➖➖(Click Here)


(2) জড় উপাদান : 

ইংরেজিতে জড় উপাদানকে আবায়োটিক কমপোনেন্ট (Abiotic Component) বা “নন-লিভিং কমপোনেন্ট” বলে। যেমন – আলো, জল, বিভিন্ন গ্যাস, মাটি, তাপমাত্রা ইত্যাদি। এই উপাদানগুলির প্রাণ নেই, কিন্তু জীবন ধারণে সাহায্য করে। তাই এরা জড় উপাদান।


অ্যানথ্রোপোস্ফিয়ার বা টেকনোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝায়? 

মানুষ তার প্রয়োজনে পরিবেশ ও ভূমণ্ডলের যে অংশকে পরিবর্তন করে বা যে অংশে নতুন কিছু নির্মাণ করে বা তৈরি করে তাকে অ্যানথ্রোপোস্ফিয়ার (anthroposphere) বা টেকনোস্ফিয়ার (techno-sphere) বলে। যেমন— খাল, ব্রিজ, শহর, কৃত্রিম দ্বীপ ইত্যাদি।


■ গঠন অনুসারে পৃথিবীর প্রধান উপাদান বা মণ্ডলগুলি কী কী?

গঠনের ভিত্তিতে পৃথিবীর চারটি উপাদান বা মণ্ডল। এর মধ্যে তিনটি জড় মণ্ডল, যেমন— 

(1) বায়ুমণ্ডল (atmosphere), 

(2) শিলামগুল বা অশ্মমণ্ডল (lithosphere),

 (3) বারিমণ্ডল (hydrosphere) এবং 

(4) একটি সজীব উপাদান অর্থাৎ জীবমণ্ডল (biosphere)।


পৃথিবীকে ঘিরে থাকা গ্যাসীয় আবরণকে বায়ুমণ্ডল বলে। পৃথিবীর ওপরে শিলা দিয়ে তৈরি কঠিন স্তরটি শিলামণ্ডল নামে পরিচিত। বারিমণ্ডল হল ভূ-পৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত যাবতীয় জলরাশি অর্থাৎ সাগর, মহাসাগর, নদী, হ্রদ, জলাভূমি প্রভৃতিকে একসঙ্গে বারিমণ্ডল বলে। আর উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতকে একত্রে জীবমণ্ডল বলা হয়।

              জীবজগতের সমস্ত প্রয়োজনীয় বস্তু ও মানুষের উপভোগ্য যাবতীয় সম্পদ এই চারটি ‘মণ্ডল’ বা ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায়।


■বায়ুমণ্ডল কাকে বলে?


ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, তাকে বায়ুমণ্ডল (atmosphere) বলে। শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মতো বায়ুমণ্ডল পার্থিব পরিবেশের অবিভাজ্য অংশ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে এই গ্যাসীয় আবরণ সংযুক্ত হয়ে রয়েছে।


■ বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী?


বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত। জীবজগতের পক্ষে দুষিত পদার্থ যেমন, সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসও বায়ুমণ্ডলের অঙ্গ।


বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ অনুসারে নাইট্রোজেন প্রথম (78-08%) ও অক্সিজেন দ্বিতীয় (20-94%) স্থানের অধিকারী। সম্মিলিতভাবে এই দুটি গ্যাস বাতাসের প্রায় শতকরা 99 ভাগ জুড়ে রয়েছে। বিশদভাবে বলতে গেলে এরকম দাঁড়ায়— (1) নাইট্রোজেন (N+) 78-08%, (2) অক্সিজেন (O,) 20-94%, (3) আর্শন (Ar) 0.93%. (4) কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO,) 0-03%. (5) অন্যান্য গ্যাস, যেমন--- (Ne) + ম (He) + জোন (O) + হাইড্রোজেন (H) + ফিল্টন (Kr) + জেনন (Xe) + (CH4) 0-02%, (6) জলীয় বাষ্প।


            Part -2 ➖➖(Click Here)

■ বায়ুমণ্ডল পরিবেশকে কীভাবে প্রভাবিত করে।

 (1) বায়ুমণ্ডল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।

(2) বায়ুমণ্ডল জল, বাতাস ইত্যাদি পুনর্জর শক্তির (renewable energy) জোগান দেয়।

(3) বায়ুমণ্ডল প্রাণীজগতকে অক্সিজেন ও উদ্ভিদ জগতকে কার্বন ডাইঅক্সাইড দেয়। 

(4) বায়ুমণ্ডল অবলোহিত রশ্মি (infra-red ray) এবং অভিবেগুনি রশ্মির (ultra-violet my )ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জীবজগতকে রক্ষা করে। 

(5) বায়ুমণ্ডল প্রাণীজগতের শারীরবৃত্তীয় (physiological) প্রয়োজন মেটায়।

(6) বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি ছাড়া জলচক্র (hydrological cycle) অস্তিত্বহীন।

(7) বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। 

(8) অক্সিজেন গ্যাস শ্বাসকার্যে সাহায্য করে ও প্রাণীদেহে শক্তি ও উত্তাপ জোগায়।

(9) অক্সিজেন দহনকার্যে সহায়তা করে।

(10) কার্বন ডাইঅক্সাইড তাপ শোষণ করে।

(11) নাইট্রোজেন প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করার কাজে লাগে। 

(12) জলীয় বাষ্প বৃষ্টিপাত, মেঘ, তুষারপাত, কুয়াশা ইত্যাদি সৃষ্টি করে।


■ ক্ষুব্ধমণ্ডল বা ট্রোপোস্ফিয়ার কী?

 ট্রোপোস্ফিয়ার নামের এই বলয়টি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে গড়ে 14 কিমি উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। আকৃতিগতভাবে ক্ষুব্ধমণ্ডল উপবৃত্তাকার। মেরু অঞ্চলে এই উপত্তরটি ৪ কিমি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে 16 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্ষুব্ধমণ্ডল নামটির মধ্যেই বায়ুস্তরের এই বিশেষ বলয়টির বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। এখানে মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়, ঘুর্ণবাত (cyclone), প্রতীপঘূর্ণবাত (anticyclone) প্রভৃতি দেখা যায়। গ্রিক শব্দ ট্রোপো (Tropo) কথাটির অর্থ মিশ্রণ বা বিক্ষোভ। 


■ ল্যাপস রেট (Lapse Rate) কী?


টুপোস্ফিয়ার উচ্চতা ও উষ্ণতার সম্পর্ক বিপরীত, অর্থাৎ এখানে প্রতি কিমি উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে 6-4° সে. তাপমাত্রা হ্রাস পায়। কিংবা বলা যেতে পারে, প্রতি হাজার ফুট উচ্চতায় 3-6° ফা. উষ্ণতা কমতে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাসের এই অনুপাতকে “ল্যাপ্স রেট" (normal lapse rate) বলে।


■ ট্রোপোস্ফিয়ারের গুরুত্ব কী?


বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য স্তরের তুলনায় ট্রোপোস্ফিয়ারের প্রভাব প্রাণী ও মানব জীবনের ওপর অপরিসীম। ক্ষুত্রমণ্ডল শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়ক গ্যাস সরবরাহ করে। জলচক্রের মাধ্যমে বৃষ্টি দেয়। তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। বাতশক্তির মাধ্যমে পুনর্ভব শক্তি-সম্পদের সন্ধান দেয়।


■ অ্যালবেডো কী?


সূর্য থেকে আসা সৌরশক্তির প্রায় 34% মেঘ, ধূলিকণা, বরফে ঢাকা জমি, সাগর-মহাসাগর, মরুভূমি, বনভূমি থেকে বিচ্ছুরিত ও প্রতিফলিত হয়ে আলোক তরঙ্গের আকারে মহাশূন্যে ফিরে যায়। একে পৃথিবীর অ্যালবেডো (Albedo) বলে।


■ তাপমাত্রার বৈপরীত্য বলতে কী বোঝায়?

 উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও উষ্ণতা যখন কমে না, তখন এই বিপরীত অবস্থাকে তাপমাত্রার বৈপরীত্য বা বৈপরীত্য উষ্ণতা (Inversion of temperature) বলে। রাত্রিবেলা পাহাড়ি ঢালে ও দিনের বেলা উপত্যকা অঞ্চলে বৈপরীত্য উষ্ণতা ঘটে।


■ ক্যাটাবেটিক বায়ু কী?


রাত্রিবেলা পাহাড়ের গা থেকে তাপ বিকিরণের ফলে পাহাড়ি ঢাল ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন পাহাড়ের ওপরের ঢাল থেকে ঠান্ডা ভারী বাতাস নীচের দিকে নামতে থাকে ও উপত্যকার মধ্যে জমা হয়। উপত্যকামুখী এই শীতল বায়ুকে ক্যাটাবেটিক (Katabatic) বায়ু বলে। ফলে নীচে উপত্যকার মধ্যে খুব ঠান্ডা বাতাস, আর একটু ওপরের দিকে অপেক্ষাকৃত গরম অবস্থা লক্ষ করা যায়।


■ অ্যানাবেটিক বায়ু কী?


দিনের বেলা উপত্যকার বায়ু গরম হয়ে পাহাড়ি ঢাল বরাবর ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এই ঊর্ধ্বমুখী। উষ্ণ বায়ুকে অ্যানাবেটিক (Anabatic) বায়ু বলা হয়।


■ মেসোস্ফেরিক মেঘ ও নক্‌টিলুসেন্ট মেঘ কী?


মেসোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ সীমায় তাপমাত্রা হল মাইনাস 90°সে.। আলোচ্য স্তরের 75-85 কিলোমিট উচ্চতায় অতি ক্ষুদ্র বরফ কণা (যার মাপ 1 মাইক্রন বা 1,000 মিলিমিটারের 1 ভাগ), দ্বারা গঞ্জি মেসোস্ফেরিক মেঘ (Mesospheric cloud) দেখা যায়। এই মেঘ রাত্রিবেলা সূর্যের প্রতিফলিত আলো ঝকমক করে। রাত্রিকালীন উজ্জ্বল এই মেঘ নক্‌টিলুসেন্ট মেঘ (Noctilucent cloud) নামে পরিচিত।


 ■ থার্মোস্ফিয়ার কী?


বায়ুমণ্ডলে মেসোস্ফিয়ারের ওপরের স্তর হল থার্মোস্ফিয়ার। গ্রিক শব্দ “থার্মোস”-এর অর্থ হল ভাগ থার্মোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ে এবং প্রায় 2500°সে.-এ পৌঁছোয়। প্রসঙ্গঃ “ইনটারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন”টি থার্মোস্ফিয়ার স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে 330-435 কিলোমিটার উচ্চত অবস্থিত। 


■ বিসমমণ্ডল কী?


ভূ-পৃষ্ঠের 90-100 কিমি উচ্চতার মধ্যে বিসমমণ্ডল শুরু হয়। এই মণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা প্রায় 10,000/ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। বাতাসের গ্যাসীয় উপাদানগুলির পরিমাণ এখানে সমান নয়। সে কারণে এই বলয়ী। বিসমমণ্ডল বা হেটারোস্ফিয়ার (Heterosphere) নামে পরিচিত।


■ আয়নমণ্ডলের গুরুত্ব কী?

আয়নমণ্ডল বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে ও মেরুপ্রভা (aurora) সৃষ্টি করে।


■ এরোপজ কী?

এরোপজ (aeropause) হল ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের সেই সীমা, যার ওপরে এরোপ্লেন উড়তে পারেন 50-60 কিমি উচ্চতায় এরোপজ অবস্থিত।


■ শিলামণ্ডল কাকে বলে?

পৃথিবীর শিলাগঠিত কঠিন বহিরাবরণকে শিলামণ্ডল বা লিথোস্ফিয়ার (Lithosphere) বলে। শিলামণ্ডলের অন্য নাম অশ্মমণ্ডল। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 35 কিমি গভীর পর্যন্ত শিলামণ্ডলের ব্যাপ্তি। শিলামণ্ডলের নীচে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত আরও দুটি বৃত্তাকার স্তর রয়েছে। 35 থেকে 2,900 কিমি গভীর পর্যন্ত অংশকে গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল বা ব্যারিস্ফিয়ার (Mantle/ Barysphere) বলে। গুরুমণ্ডলের নীচে 2,900 কিমি থেকে 6,371 কিমি অর্থাৎ ভূকেন্দ্র পর্যন্ত অঞ্চল কেন্দ্রমণ্ডল বা সেন্ট্রোস্ফিয়ার (Centrosphere or Core of the earth) নামে পরিচিত।


■ শিলামণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী?

শিলামণ্ডল আগ্নেয় (Igneous), রূপান্তরিত (Metamorphic) ও পাললিক (Sedimentary) শিলায় গঠিত।

      ভূ-ত্বকের (crust of the earth) প্রায় 98% শতাংশ অক্সিজেন, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ ইত্যাদি আটটি মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এদের মধ্যে অক্সিজেন ও সিলিকনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।



Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)