কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা মেঘের বীজকরণ: কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কাকে বলে ?কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির পদ্ধতি (Methods of Cloud Seeding or Artificial Rain)

 কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা মেঘের বীজকরণ

বায়ুমণ্ডলে ভাসমান সব ধরনের মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয় না। বিশেষ কিছু মেঘ থেকে নির্দিষ্ট বায়ুমণ্ডলীয় আবহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে যে সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয় না, সেই সব মেঘের মধ্যে কৃত্রিম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবহাওয়ার পরিমার্জন ঘটিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব হয়। কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে বলা হয় কৃত্রিম বৃষ্টিপাত  ।


 সুতরাং, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হল কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট এমন এক ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান বিশেষ ধরনের মেঘকে কৃত্রিম উপায়ে সম্পৃক্ত করে বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। এই কারণেই সমগ্র প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম পরিমার্জন বা কৃত্রিম রূপান্তর (Artificial Modification) বলা হয়ে থাকে ।


 পৃথিবীর বেশিরভাগ অঞ্চলেই বর্তমানে জলের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। চিরাচরিত জলের উৎসসমূহ, যেমন ভৌমজল, নদী, জলাশয় ইত্যাদি অংশগুলিতে জলের ঘাটতি দেখা যায়। জলের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তাই মেঘের পরিমার্জন ঘটিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত অত্যন্ত জরুরি। পরিচলন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট মেঘের (convective clouds) মধ্যেও কৃত্রিম পদ্ধতিতে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব (Chemikov, 1994)। মেঘ থেকে কৃত্রিম উপায়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটানো যদিও রাশিমাত্রিক উপায়ে (Statistically) প্রমাণ করা দুঃসাধ্য, তবুও এটা দাবি করা হয় যে মেঘের পরিমার্জন ঘটিয়ে বেশি বৃষ্টিপাত লাভ করা সম্ভব ।

#Flipkart Big Bachat Dhamal sale started 4th-6th December . price alart For all mobile .Flipkart Sale started.

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির পদ্ধতি (Methods of Cloud Seeding or Artificial Rain)


বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঘনীভূত হয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঘটায়। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য বায়ুমণ্ডলস্থিত মেঘের মধ্যে অতিরিক্ত জলাকর্ষী অণু বা জল কেন্দ্রাণু সরাবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে এই কেন্দ্রাণু লবণ, শুষ্ক বরফ, সিলভার আয়োডাইড বা পটাশিয়াম আয়োডাইড হতে পারে। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর সময়ে তুষারপাতের মতো ঘটনাও বৃদ্ধি পায়। মেঘের মধ্যে উন্নতা যখন -7°C থেকে -20°C-এর মধ্যে অবস্থান তখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মূলত যে তিনটি পদ্ধতিতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয় তা বর্তমানে আলোচনা করা হল ----


1. স্থির কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা স্থির মেঘ বীজকরণ (Static Cloud Seeding)

 মেঘ মধ্যস্থিত অতি ক্ষুদ্র ভৌত গুণাবলির পরিবর্তন (alter the microphysical properties of cloud) ঘটিয়ে যে ধরনের কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয় তাকে স্থির বা স্থিতিশীল মেঘ বীজকরণ বলা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে মেঘের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভৌত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যেভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তা হল—

 ● মেঘের মধ্যে সিলভার আয়োডাইডের মিশ্রণ ঘটানো হয়। এই রাসায়নিক যৌগ বরফের কেলাস গঠনে সাহায্য করে। মেঘের মধ্যে অবস্থানকারী আর্দ্রতা, সিলভার আয়োডাইডের সান্নিধ্যে আসায় দ্রুত তা বৃষ্টিবিলুতে রূপান্তরিত হয়।

 ● কিউমুলি ও শৈলোৎক্ষেপ মেঘ (Cumull and orographic cloud), যা সাধারণত শীতল ও মহাদেশীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে, সেখান থেকেই এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়।

● মেঘের উন্নতা -10°C থেকে 25°C এর মধ্যে অবস্থান করে। মেঘের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ অতি শীতল জলের সহজলভ্যতার ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট সময়সীমার (timescale limited) মধ্যে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়।



2. গতিময় কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা গতিশীল মেঘ বীজকরণ (Dynamic Cloud Seeding) :

মেঘের মধ্যে বায়ু চলাচলের বা বায়ুর গতির পরিমার্জনের চেষ্টা করে (Attempt to modify the air motion within the couds) যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। তাকে গতিশীল মেঘ বীজকরণ বলা হয়। এই পদ্ধতিতে যেভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হয়, তা হল------


● গতিশীল পদ্ধতিতে মেঘের মধ্যে বায়ুর উল্লথ স্রোতকে (Vertical air currents) প্রবলভাবে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়। এর ফলে বেশি পরিমাণে জল মেঘের মধ্য দিয়ে আসা-যাওয়া করে বলে বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। 

● স্থির শেষ বীজকরণের তুলনায় গতিশীল মেঘ বীজকরণে প্রায় 100 গুণ বেশি বরফের কেলাস ব্যবহার করা হয়। পদ্ধতিটিও বেশ জটিল। কারণ গতিশীল মেঘ বীজকরণ কার্যকর ঘটনাবলির পরম্পরার ওপর নির্ভরশীল।

● কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের (Colorado State University) বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের (Atmospheric Science) অধ্যাপক ড. উইলিয়াম আর. কটন (William R. Cotton) এবং অন্যান্য গবেষকরা গতিশীল মেঘ বীজকরণের 11টি পৃথক পর্যায়ের (Stages) কথা উল্লেখ করেন। সমগ্র পদ্ধতিটি স্থিতিশীল মেঘ বীজকরণের তুলনায় অনেক বেশি জটিল এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটির মধ্যে একটি পর্যায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বনাশ (ruin) হয়ে যায়, তাহলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির প্রচেষ্টা বিফলে চলে যায়।



3. জলাকর্ষী বা জলকেন্দ্রাণু মেঘ বীজকরণ (Hygroscopic Cloud Seeding)

 মেঘের মধ্যে লবণের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়, তাকে জলাকরী বা জলকেন্দ্রাণু মেঘ বীজকরণ বলা হয়। 1990 খ্রিস্টাব্দে জি. ম্যাথার (G. Mather) দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রাফট মিল (Kraft Mill) অঞ্চল থেকে মেঘের মধ্যে জলকেন্দ্রাণু উপকরণের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়া থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতেও এই পদ্ধতির সফলতা পাওয়া যায়। এই পদ্ধতির সাহায্যে যেভবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, তা হল-------


● জলাকর্ষী বীজকরণ (Hygroscoping Seeding) সম্পূর্ণভাবে উদ্বু-মেঘ বীজকরণের (Warm cloud seeding) সম্পর্কযুক্ত। এই ধরনের বীজকরণের মূল উদ্দেশ্যেই হল মেঘের মধ্যে লবণের কথা সরাবরাহ করে বেশি মাত্রায় বৃষ্টিপাত সংঘটিত করা।

● মেঘের মধ্যে লবণকণার মিশ্রণ ঘটিয়ে জলের ভ্রুণ (embryas) সৃষ্টি করা হয়। এই ভ্রুণেই ওপর নির্ভর করেই বৃষ্টিবিন্দু সৃষ্টি হয়।

● ছোটো ছোটো বিন্দুগুলি আকারে ছোটো হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ায়। তারপর বণ্টিত জলবিন্দুগুলি কাটানো প্রক্রিয়ায় (Coalescence Process) সম্মিলিত হয়ে তাদের আকার বৃদ্ধি পায় এবং অবশেষে বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। অতি সম্প্রতি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঞ্চলে 2-5 মাইক্রন ব্যাস বিশিষ্ট লবণকণা মেঘের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সফলভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়।







Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)