Cultural Geography(সাংস্কৃতিক ভূগোল): Scope,Subject & Defination, Type PDF
সাংস্কৃতিক ভূগোলের বিষয় পরিধি (Scope of Cultural Geography) :
সংস্কৃতি সাংস্কৃতিক ভূগোলের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু এবং মানবজাতির সামগ্রিক কর্মপদ্ধতির প্রতিচ্ছবি হওয়ায় সংস্কৃতির উদ্ভব, বিকাশ, যুগ ও এলাকাভেদে মানব সংস্কৃতির বিচিত্র রূপ ও ব্যাপ্তি সাংস্কৃতিক ভূগোলের বিষয় পরিধির অন্তর্গত। সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামীণ জগতের অংশ হিসাবে মানুষের উৎপত্তি, বিবর্তন তথা প্রাচীন ও আধুনিক মানুষের বিভিন্নতা, মানুষের ভাষা, বর্ণ, আচার-আচরণ, জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় রাজনৈতিক পদ্ধতি, মানুষের উপর পরিবেশের এবং পরিবেশের উপর সংস্কৃতির প্রভাব প্রভৃতি সাংস্কৃতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়। সাংস্কৃতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত বিষয়গুলো হলো—
1. মানব বিবর্তন (Evolution of Man) :
কিভাবে মানুষ পৃথিবীতে আবির্ভূত হলো এবং পর্যায়ক্রমে আধুনিক মানুষে পরিণত হলো সেই বিষয়ে আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের অন্তর্গত, এ প্রসঙ্গে জীবাশ্মের তুলনামূলক পরীক্ষা মানব বিবর্তন পঠন পাঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
2. মানুষের ভাষা (Human Language) :
ভাষা সংস্কৃতির একটি মৌলিক উপাদান। তাই ভাষার মাধ্যমে মানব সমাজের সব মতবাদ ও চিন্তাধারা গোষ্ঠী থেকে গোষ্ঠী ও বংশ পরম্পরায় পরিবাহিত হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রচলিত প্রায় 2500 থেকে 3500 ভাষার সময়ের সাথে সাথে ক্রমবিকাশ কিভাবে ঘটেছে তার আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।
3. মানব ধর্ম (Human Religion) :
সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান ধর্ম, ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুশাসন নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও মানুষের সামগ্রিক জীবনধারাকে প্রভাবিত করে এক পরিব্যাপক শক্তিরূপে কাজ করে। বিভিন্ন সংস্কৃতিকে ধর্মের বিশ্লেষণ ও প্রয়োগের বিভিন্নতা সম্পর্কে আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত।
4. বর্ণ (Race ) :
মানবজাতির শরীরের গঠনগত পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে মানবজাতিকে ককেশীয়, মঙ্গোলীয়,অস্ট্রেলীয় ও নিগ্রো এই চারভাগে বিভক্ত করা হয়। এদের বিস্তারিত আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের অন্তর্গত। এক্ষেত্রে মানুষের দৈহিক বৈশিষ্ট্য যেমন— মাথা ও মুখের আকৃতি, দেহের উচ্চতা, ওজন, চামড়ার রং প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়।
5. মানুষের সংস্কৃতি (Human Culture) :
মানুষের সমস্ত কাজের ধারা, কাজের ফল এবং আচরণের সমষ্টি মানুষের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত বিষয় হওয়ায় এগুলির বিশদ আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত।
6. সাংস্কৃতিক অঞ্চল (Cultural Region) :
ইতিহাসের কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন বিশেষ সংস্কৃতিপুষ্ট একটি সমাজগোষ্ঠীর আবাসভূমি সাংস্কৃতিক অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত। এরূপ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঞ্চলের বিস্তার, ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারণ, তাদের সামঞ্জস্য পার্থক্য তুলনা ইত্যাদি আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত।
7. সংস্কৃতির রূপান্তর (Culture Change) :
পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন পরিবর্তনশীল, একইভাবে ভূপৃষ্ঠে সময়ভেদে মানুষের অনুশীলনকৃত কার্যাবলি মানুষের নিজস্ব কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ধারায় ক্রমবিকাশ লাভ করেছে ও রূপান্তরিত হয়েছে। তবে এই রূপান্তর অতি দ্রুতভাবে বা অত্যন্ত ধীর গতিতে বা বহু শতাব্দী ধরে স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত থাকে। সংস্কৃতির রূপান্তরের বিশদ বিবরণ সাংস্কৃতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।
8. মানব বসতি বা জনপদ (Human Settlement) :
বসবাসযোগ্য অবস্থানেই মানুষ তার বসতি নির্মাণ করে এবং বিভিন্ন কার্যাবলির মাধ্যমে সেই পরিবেশকে আরও উপযুক্ত করে তোলে। তবে তার এই বসতি বা জনপদ গড়ে তোলার পিছনে সেখানকার ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, বসবাসকারী মানুষদের সংস্কৃতির প্রভাব আছে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ বা নগরীয় বসতির উদ্ভব, বিকাশ ও উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত। আশ্রয়ের জন্য, গৃহ নির্মাণের বিভিন্ন ধরন, যোগাযোগের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনাও এর মধ্যে পড়ে।
9. মানব পরিবেশ (Human Environment) :
মানুষের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই কোনো অঞ্চলে বসবাসরত মানবগোষ্ঠীতে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক মানুষের উপর পরিবেশের প্রভাব, পরিবেশের, উপর সংস্কৃতির প্রভাব সম্পর্কে বিশদ আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত।
10. সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য (Cultural Landscape) :
বিভিন্ন ভূদৃশ্যে প্রতিফলিত বিভিন্ন সংস্কৃতি ও পরিবেশের সংমিশ্রণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়। মানবিক পরিবেশে মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি, কৃষিভূমি, কলকারখানা, সেতু প্রভৃতির মধ্যে মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে ও উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সাংস্কৃতিক পরিবেশে পরিণত করে। বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিবেশের সম্পর্ক, বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবনের মধ্যে সম্পর্ক তুলনা ও পার্থক্য প্রভৃতি বিষয় সাংস্কৃতিক ভূগোলের পরিধিভুক্ত।
14. সাংস্কৃতিক জগৎ (Cultural Realm) :
একটি ভৌগোলিক ব্যাপ্তিস্থানে মানবগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক যেমন— ভাষা, ধর্ম, সমাজ, অর্থনীতি, জীবনধারা প্রভৃতির মধ্যে সাদৃশ্য দেখা যায়। এরূপ সাদৃশ্য সম্পন্ন বিস্তৃত অঞ্চলকে সাংস্কৃতিক জগৎ বলে। যেমন- ইসলামী জগৎ, ইউরোপীয় জগৎ, ভারতীয় জগৎ ইত্যাদি। সাংস্কৃতিক জগতের উদ্ভব, বিস্তার, বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা সাংস্কৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
সাংস্কৃতিক ভূগোলে মানবজাতির বিভিন্ন কাজ, আচার, আচরণ, রীতিনীতির উৎপত্তি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা হয়। মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি, বিমানবন্দর, রেলপথ, সড়কপথ মহাকাশ অভিযান সবই মানুষের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের ফল। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিন্ন মানবগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মাধ্যমে এক একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বতন্ত্র পরিবেশ গড়ে তুলেছে। স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রত্যেক মানব গোষ্ঠীর এসব সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার রূপ ও কাঠামো সাংস্কৃতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়।
Comments
Post a Comment