গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠার কারণ (The controlling factors of Rural Settlement)
★ গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠার কারণ (The controlling factors of Rural Settlement)
গ্রামীণ বসতি, জনবসতি ভূগোলের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যে অঞ্চলের লোকবসতি বিক্ষিপ্ত কিংবা গোষ্ঠীবদ্ধ এবং রৈখিক, সেখানে জীবন ধারণের সুযোগ-সুবিধা খুব কম, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনঘনত্ব খুবই কম এবং কৃষিভিত্তি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পঞ্চায়েত সুষ্ঠুভাবে শাসনতন্ত্র পরিচালনা করে এবং সেখানকার জীবনধারন প্রণালী প্রাথমিত উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকে Rural Settlement বা গ্রামীণ বসতি বলে।
গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠার প্রভাবকারী কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল—
A. প্রাকৃতিক কারণসমূহ (Physical Factors) :
গ্রামীন বসতি গড়ে ওঠার পেছনে প্রাকৃতিক কারণগুলির প্রভাব অপরিসীম। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন–ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু ও মৃত্তিকা প্রভৃতির অনুকূল অবস্থানের জন্য গ্রামীন জনবসতির প্রকৃতি, আকার ও বিন্যাসের তারতম্য হয়ে থাকে। তা নিম্নে আলোচিত হল--
(i) ভূ-প্রকৃতি (Relief) :-
বসতি স্থাপনে প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ভূমির ঢাল, উচ্চতা ও বন্ধুর ভূ-ভাগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ বসতির উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। গ্রামীণ বসতিগুলি মূলতঃ সমভূমির স্বল্প ঢালবিশিষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠে। অপেক্ষাকৃত কম বসতি লক্ষ্য করা যায় পাহাড় ও মালভূমির ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশে।
(ii) জলবায়ু (Climate) :
তাপমাত্রা আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের উপর নির্ভর করে গ্রামীণ বসতি বিস্তার লাভ করে।
যেমন–নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে। আবার মরু ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিকূল জলবায়ুর জন্য একই প্রকৃতির বসতি গড়ে ওঠেনি। এখানে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা
হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে বসতিগুলি সূর্যের দিকে মুখ করে রৈখিক ধরনের তথা উপবৃত্তাকার তথা হেরিং মাছের কাঁটার ন্যায় যেখানে একটি পথের সাথে অনেকগুলি ছোট ছোট রাস্তা দুই দিক থেকে মিলে গ্রামীন বসতি গড়ে ওঠে।
(iii) মৃত্তিকা (Soil):
গ্রামীণ বসতি বিস্তারে মুক্তিকার বিশেষ অবদান রয়েছে। কৃষিকাজের উপযোগী মুক্তিকাতে মানুষ স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। উর্বর মুক্তিকা মানুষের বসতি স্থাপনে প্রভাব বিস্তার করে। নদীগঠিত পলি মৃত্তিকা অঞ্চলে অধিক গ্রামীণ জনবসতি লক্ষ্য করা যায়। উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমিতে উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি হওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল গ্রামীণ বসতি লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবীর হিমবাহ বা বরফাবৃত অঞ্চলগুলিতে উর্বর মুক্তিকা না থাকায় সেগুলি জনমানবশূন্য। একই কারণে কাশ্মীর, নেপাল ও ভূটানের বহু অঞ্চল বসবাসযোগ্য নয়। ভারতের ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা যুক্ত ভূমিভাগও বসতি গড়ে ওঠার জন্য আদর্শ নয়।
(iv) জলের যোগান (Water Supply):
ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকে আজকের আধুনিক সভ্যতা সবগুলিই গড়ে উঠেছে জলের সহজলভ্যতার উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর সর্বত্র বসতি জলের উৎস স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। জলের অভাবযুক্ত স্থানে জলের চাহিদা পূরণের জন্য অন্যত্র স্থান থেকে জল নিয়ে আসা হয়।শুধুমাত্র পানীয় তাই নয়, ফসল উৎপাদন ও পশুপালনের জন্যও জলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন—সাহারা ও আরবের মরুদ্যানগুলোকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে উঠেছে। তেমনই ভারতের গঙ্গা, চীনের ইয়াং-সি-কিয়াং, জার্মানির রাইন নদীকে কেন্দ্র করে খুব ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সিন্ধু, মায়ানমারের ইরাবতী, দক্ষিণ আমেরিকার, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের উপত্যকাগুলোতেও অধিক জনবসতি দেখা যায়।
(V) শুস্ক জমি(Dry Land) :-
পৃথিবীর অধিকাংশ কৃষি জমিগুলি নদীর তীবরর্তী নীচু স্থানে বা বন্যাপ্লাবিত এলাকায় অবস্থিত। বন্যা প্রক এলাকায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ উঁচু স্থানে গ্রামীণ বসতি গড়ে তোলে। উঁচুস্থানের অর্থ অনেকটাই শুষ্ক হয়।
(vi) ভৌম জল (Ground Water):
গ্রামীণ বসতিগুলি ভৌমজলের উৎসস্থলে গড়ে উঠেছে। ভৌমজলকে গ্রামীণ মানুষ পানীয় হিসাবে গ্রহণ করে।পানীয় জল মানুষের জীবনধারণের অন্যতম উপাদান। ভৌমজলকে গ্রামীন এলাকায় চাষের কাজেও ব্যাবহার করা হয়।
B. অপ্রাকৃতিক কারণ (Non Physical Causes):
গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠার পেছনে যেমন প্রাকৃতিক কারণগুলির প্রভাব দেখা যায় সেইরূপ অপ্রাকৃতিক কারণগুলিং প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তা নিম্নে আলোচনা করা হল--
(1) যোগাযোগ (Communication) :
গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকারী বিষয় হল যোগাযোগ ব্যবস্থা। গ্রামীণ বসতি অঞ্চলগুলি সাধারণত রাস্তার সংযোগস্থলে কিংবা রাস্তার ধারে গড়ে ওঠে।
(ii) সামাজিক কারণ (Social Factors)
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সামাজিক অবস্থার মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন সামাজিক বিষয়গুলি জনবসতিকে প্রভাবিত করে। এই সামাজিক বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে গ্রামীন জনবসতি গড়ে ওঠে। যথা-
(a) একই জীবিকার মানুষেরা একই স্থানে বসতি স্থাপন করে।
(b) একই ভাষাভাষির মানুষেরা একত্রিত হয়ে পৃথক একটি জনবসতি গড়ে তোলে। যেমন–বিহার ও ঝাড়মতে কিংবা মহারাষ্ট্রের গ্রামীন ভিন্ন ভাষার মানুষেরা একত্রিত হয়ে এই ধরনের বসতি গড়ে তোলে।
(c) একই জাতির মানুষেরা সাধারণত একই স্থানে বসতি গড়ে তোলে। যেমন—মধ্যপ্রদেশে এই ধরনের বসতি লক্ষ্য করা যায়।
(iii) অর্থনৈতিক কারণ (Economic Factors) :
গ্রামীন বসতি গড়ে ওঠার পেছনে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে অরণ্য সম্পদ সংগ্রহ, খনিজ পদার্থ উত্তোলন, সমুদ্রের মৎস্য সংগ্রহ প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যাবলীর উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। যেমন—দক্ষিণ আমেরিকার চিলির মরুভূমিতে খনিজপদার্থ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে খনিজ তৈল প্রভৃতি কেন্দ্র করে গ্রামীন বসতি গড়ে উঠেছে। আবার নিবিড় বনভূমির কাষ্ঠ সংগ্রহকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় গ্রামীন বসতি লক্ষ্য করা যায়।
(Iv) শিক্ষাক্ষেত্র (Education) :
প্রাচীনকালে গুরুকুলীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বর্তমান বিদ্যালয় শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ বসতিগুলি বিকাশ লাভ করেছে। গ্রামীন পাঠশালা কিংবা বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গ্রামীন বসতি লক্ষ্য করা যায়।
(V) সাস্থ্য (Heath) :
স্বাস্থ্যই মানুষের সম্পদ। অনুকুল প্রাকৃতিক পরিবেশের সান্নিধ্যে মানুষ বসতি নির্মাণ করে। স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক সময় গ্রমীন বসতি গড়ে তোলে।
(vi) ধর্মক্ষেত্র (Religious Place) :
ধর্মক্ষেত্র গ্রামীণ বসতি বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিক্ষার মত জীবনে পরিপূর্ণতা বিকাশে মানুষ ধর্মকে গ্রহণ করে। তাই দেখা যায় কোন স্থানে ধর্মীয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ বসতিগুলি বিস্তার লাভ করে। সুতরাং গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে উপরোক্ত কারণগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
rural settlement and its types,
rural settlement based on population,
rural settlement book,
rural settlement definition ap human geography,
rural settlement definition geography,
rural settlement geography notes,
rural settlement geography book pdf,
rural settlement grade 12 geography,
rural settlement ap human geography,
rural settlement ka meaning,
Comments
Post a Comment