ঘূৰ্ণ বৃষ্টিপাত বা সীমান্ত বৃষ্টিপাত (Cyclonic or Frontal Rainfall) :সীমান্ত বৃষ্টি কাকে বলে, ইহার উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

 ঘূৰ্ণ বৃষ্টিপাত বা সীমান্ত বৃষ্টিপাত (Cyclonic or Frontal Rainfall)


 ঘূর্ণবাত বা সীমান্ত সৃষ্টির মাধ্যমে যে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, তাকে ঘুর্ণবৃষ্টি বা সীমান্ত বৃষ্টিপাত বলা হয়। দুই বিপরীতধর্মী বায়ুগুপ্ত (উদ্বু-আর্দ্র ও শীতল-ভারী) যখন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন হালকা উরু বায়ুপুঞ্জটি ওপরের দিকে উঠে যায়। দুই বায়ুপুপ্তের মধ্যবর্তী এলাকায় সীমাস্ত তলের সৃষ্টি হয়। সীমান্ত বা বাতাগ্র বরাবর উষ্ম বায়ু ওপরের দিকে উঠে তাপবিযুক্ত হারে শীতলীকরণ হয়। এর ফলে বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণবৃষ্টি বা সীমান্ত বৃষ্টির সৃষ্টি হয় ।


ঘূর্ণবৃষ্টি বা সীমান্ত বৃষ্টিপাতের উৎপত্তি (Genesis of Cyclonic or Frontal Rainfall) ঃ

 ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোর ঘূর্ণবাত সৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণবৃষ্টি বা সীমান্ত বৃষ্টি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। তাই ঘূর্ণবৃষ্টির উৎপত্তিকে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়— 

1. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টিপাত (Tropical Cyclonic Rainfall) : 

নিরক্ষরেখা থেকে উভয় দিকে 20° অক্ষাংশের মধ্যে এই ধরনের বৃষ্টিপাত সীমাবদ্ধ। যখন দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জ একটি ঢাল বরাবর মিলিত হয়, সেখানে জলীয় বাষ্পপূর্ণ হালকা বায়ু, শীতল ও ভারী বায়ুর ওপর অবস্থান করে। চারপাশ থেকে নিম্নচাপের দিকে আগত বায়ু, কেন্দ্রের কাছে উর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। জলীয় বাষ্পপূর্ণ সেই বায়ু উপরিভাগে উত্থিত হয়ে, ঘনীভবনের মাধ্যমে মেঘ সৃষ্টি করে মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়। দু-ভাবে এই বৃষ্টি হয়ে থাকে, যথা

-(i) শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণবৃষ্টি ঃ নিরক্ষরেখার উভয় দিকে মূলত 10°-20° অক্ষাংশের মধ্যে শক্তিশালী ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। কিউমুলোনিম্বাস জাতীয় মেঘ সৃষ্টির মাধ্যমে এই বৃষ্টিপাত বজ্রবিদ্যুৎসহ হয়ে থাকে।

 (ii) দুর্বল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবৃষ্টিঃ অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণির ঘূর্ণবাত সৃষ্টির মাধ্যমে এই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকালে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ছোটো ছোটো যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও অনেকদিন স্থায়ী হয়।


2. নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতজনিত ঘূর্ণবৃষ্টি (Temperate Cyclonic Rainfall) : 

সীমান্ত অঞ্চলে উয়-আর্দ্র ও শীতল-ভারী বায়ুর সংঘর্ষের মাধ্যমে নাতিশীতোয় অঞ্চলে ঘূর্ণবৃষ্টি হয়ে থাকে। দুই ধরনের সীমান্ত অঞ্চলে এই বৃষ্টি হয়ে থাকে, যথা—

(i) উষ্ণ সীমান্ত বৃষ্টিপাত ঃ উয় সীমান্ত বা উরু বাতাগ্র এলাকায় উয় বায়ু শীতল বায়ুর ওপরে উঠে যায়। ওপরে উঠে চাপ হ্রাস পাওয়ায় সেই বায়ু প্রসারিত হয় এবং অবশেষে শীতলীকরণের মাধ্যমে ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এর ফলে বিস্তৃত ...এলাকা জুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

 (ii) শীতল সীমান্ত বৃষ্টিপাত : শীতল সীমান্ত অঞ্চলে শীতল বায়ু অনেক বেশি। আগ্রাসী (aggressive) হয়। এর ফলে শীতল বায়ু ভয় বায়ুকে পিছন থেকে ঠেলে দেয়, তাই উদ্বু বায়ু ওপরে উঠে যায়। এই কারণে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর চাপ হ্রাস পায় এবং অবশেষে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই অংশে কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সঞ্চার হওয়ায় অল্প এলাকা জুড়ে বজ্রবিদ্যুৎসহ ভারী বৃষ্টিপাত হয়।

                      🌍               🌏               🌏


ঘূর্ণ বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Cyclonic Rainfall) 

(i) দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষের মাধ্যমে সীমান্ত অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাত হয়। তাই এই বৃষ্টিপাতে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা, বায়ুর ঘনত্ব এবং বায়ুপ্রবাহের দিক তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। 

(ii) বেশিরভাগ সময়েই এই বৃষ্টি ঝিরঝিরে বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হিসেবে উপস্থিত হয়। তবে কখনো-কখনো দমকা বাতাসসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। শীতল সীমান্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত প্রবল ও ক্ষণস্থায়ী হয়। 

(ii) ঘূর্ণবৃষ্টির স্থায়িত্ব অনেক বেশি। অর্থাৎ অনেক বেশি সময় ধরে ঘুর্ণবৃষ্টি স্থায়ী হয়। বৃষ্টি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সংঘটিত হয়। বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী -হলেও বা বৃষ্টিপাতের সময়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও একটানা বা অবিরামভাবে সর্বদা বৃষ্টিপাত হয় না।



Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)