ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণ (Management of Population Growth in India)

 ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণ (Management of Population Growth in India) :


চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির ফলস্বরূপ জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার অনেক কমে গিয়েছে। এছাড়া সম্পদ সৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ভারতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলি আলোচনা করা হল-


1. জনসচেনতা বৃদ্ধি : শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত জনসাধারণের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা তথা জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত আবশ্যক। কেবলমাত্র সরকারী প্রচেষ্টা নয়, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষিত যুবক-যুবতী এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে এসে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।


2. নারী সচেতা বৃদ্ধি:  শহরাঞ্চলে বিশেষত গ্রামে যে নারীদের সস্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে পুরুষত্রান্তিক সমাজের বলি হতে হয়। এরূপ নারী সমাজে সচেতনতা বিশেষত যৌন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।


3. গ্রামে নারী শিক্ষার বিস্তার: গ্রামে মহিলাদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে। গ্রামের মহিলারা শিক্ষিত হলে তারা নিজেদের মতপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে। এর ফলে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে।


4. পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ:  বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার জন্য নানা নীতি গ্রহণ করতে হবে। পরিবার পরিব জন্য যাতে অর্থের কোনো অভাব না হয় সরকারকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।


5. বাল্য ও বহুবিবাহ রোধ : ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


6. স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি : গ্রামাঞ্চলে মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। মহিলা ও শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় অর্থপ্রদান প্রভৃতি বিষয়ে সরকারকে সচেতন হতে হবে। 


7. যৌন সচেতনতা বৃদ্ধি : পুরুষ কিংবা মহিলাদের মধ্যে যৌন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গ্রামে কিংবা শহরে ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্যবিধির বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রচার প্রভৃতির মাধ্যমে জনবিস্ফোরণের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।


৪. শল্যচিকিৎসার দ্বারা গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা :

স্ত্রীলোকের জরায়ুর অভ্যন্তরে পাতলা প্লাস্টিকের ফাস (loop) স্থাপন করলে গর্ভসঞ্চার হতে পারে না এবং জরারুর অভ্যন্তরে ভ্রূণ রোপিত হতে বাধা দেয়।

             শল্য চিকিৎসার দ্বারা পুরুষের শুনালির ভাস ডিফারেন্সের কিছু অংশ কেটে এবং কাটা দুপ্রান্ত বেঁধে দেওয়া হয় । এরফলে শুক্রাশয় থেকে শুক্রাণু নির্গত হতে পারে না। একে ভ্যাসেকটমি বলে। যার দ্বারা জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়


9. গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন : গর্ভনিরোধক বড়ি মহিলাদের অতি জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। জরায়ুর অন্ত্রগাত্রে ভ্রূণ রোপনে বাধা দেয়।

           চীনে সারা দেশ জুড়ে বিনামুল্যে গর্ভনিরোধক বড়ি প্রদান করা হয়। ভারতেও সরকার থেকে গর্ভনিরোধক বল সেবনের জন্যে তা বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের বিভিন্ন ক্লিনিকে গর্ভপাতের সুব্যবস্থা করতে হবে


10. পারিবারিক বোঝাপড়ার বাতাবরণ তৈরী করা : উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পারিবারিক চাপ ও অত্যাচার প্রভৃতি বাধ্যবাধকতার কারণে মহিলারা কন্যা সন্তান অপেক্ষা পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার আগ্রহে একাধিক গর্ভধারণে বাধ‍্যহন ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এক্ষত্রে দেশের সচেতন নাগরিক হওয়ার সুবাদে পারিবারিক ক্ষেত্রে স্ত্রী-পুরুষের বোঝাপড় বাতাবরণ তৈরী করা উচিত।


11. চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতি সাধন : ঊনয়নশীল দেশগুলিতে জন্মহার বেশী। সেক্ষেত্রে এক পরিবারে প্রচুর শিশুর জন্ম হয়। যাতে কয়েকটি শিশুর মৃত্যু হলেও পরিবার শেষ অবধি সন্তানহীন না হয় এক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানে  ব্যাপক উন্নতির মাধ্যমে উচ্চ শিশুমৃত্যুর হারকে রোধ করতে হবে।


12. সরকারী পদক্ষেপ : ভারত সরকারকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। চীনের পদ্ধতি অনুসারে ভারতেও ‘এক শিশুনীতি’ আইনগতভাবে বলবৎ করতে হবে। এছাড়াও পুত্রসস্তান প্রাপ্তির আকাঙ্খায একাধিক সন্তানের জন্ম দেওয়া আইনগতভাবে রোধ করা প্রয়োজন।

Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)