Class 8: অষ্টম শ্রেণীর ষষ্ঠ অধ্যায় জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ উত্তর(set-1)
1. নিরক্ষীয় অঞ্চলের রাত্রিকে ‘ক্রান্তীয় শীতকাল’ (Winter of Tropics) বলা হয় কেন?
উত্তর: নিরক্ষীয় অঞ্চলের 5°-10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ সংলগ্ন অঞ্চলে সারাবছর সূর্য প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে এখানকার তাপমাত্রা গড়ে প্রায় 27°C থাকে। দিনেরবেলায় সূর্যরশ্মির প্রখরতায় এই তাপমাত্রা প্রায় 38°C হয়ে এক উয় ভ্যাপসা আবহাওয়ার সৃষ্টি করে। কিন্তু রাত্রিতে তাপমাত্রা কমে গিয়ে 20°-25°C তাপমাত্রায় পৌছোলে এখানে ঠান্ডা অনুভূত হয়। তাই নিরক্ষীয় অঞ্চলের রাত্রিকে ক্রান্তীয় শীতকাল বলে।
2. নিরক্ষীয় অঞ্চলে বার্ষিক উন্নতার পার্থক্য অপেক্ষা দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপের পার্থক্য বেশি কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল পৃথিবীর একটি ঋতুবৈচিত্র্যহীন অঞ্চল কারণ, এখানে সারাবছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয়, ফলে সারাবছরই উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত গ্রীষ্মঋতু বিরাজ করে। বার্ষিক উষ্ণতা প্রসর হয় প্রায় 2°C |
অন্যদিকে, সারাদিন ধরে অধিক পরিমাণে সূর্যালোক প্রাপ্তির কারণে দৈনিক তাপমাত্রা থাকে প্রায় 38°C-40°C। বিকেলের দিকে পরিচলন বৃষ্টিপাত উন্নতা হ্রাসে সাহায্য করে এবং তাপমাত্রা নেমে 15°C হয়। অর্থাৎ দৈনিক তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি হয়। তাই, এই অঞ্চলে বার্ষিক উন্নতার পার্থক্য অপেক্ষা দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপের পার্থক্য বেশি হয়।
3. নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যকে 'পৃথিবীর ফুসফুস' বলা হয়'।
– কারণ ব্যাখ্যা করো?
উত্তর: নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যকে 'পৃথিবীর ফুসফুস' বলা হয়, কারণ—
ফুসফুস যেমন শ্বাসকার্যের মাধ্যমে প্রাণীদেহকে সজীব রাখে, ঠিক তেমনি নিরক্ষরেখার উভয়পার্শ্বে 5°-10° অক্ষাংশের মধ্যে গড়ে ওঠা গহন অরণ্য পৃথিবীর একটি অন্যতম অঙ্গা, যা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে পৃথিবীর সজীবতা বজায় রাখতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই নিরক্ষীয় বৃষ্টিঅরণ্য 'পৃথিবীর ফুসফুস' নামে পরিচিত।
4. নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যের তলদেশ অত্যন্ত স্যাতসেঁতে ও
অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় কেন? অথবা, নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যের
ভিতরে সহজে প্রবেশ করা যায় না কেন?
উত্তর: সারাবছর উন্নতা ও বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় এই অরণ্যের উদ্ভিদগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রচুর ডালপালা ও পাতায় ভরে ওঠে।ফলে, অরণ্যের উপরিস্তরে এই ডালপালা পাতা মিশে চাঁদোয়ার সৃষ্টি হয়, যার জন্য সূর্যের আলো অরণ্যের তলদেশে পৌঁছোতে পারে না। তাই তলদেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। আবার সারাবছর বৃষ্টি হওয়ায় অরণ্যের মাটি ভিজে থাকে এবং সূর্যালোকের অভাবে স্যাতসেঁতে পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই আর্দ্র স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে প্রচুর লতা-গুল্ম, পরগাছা জন্মায়, যার জন্য তলদেশ অত্যন্ত দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে, সহজে প্রবেশ করা যায় না।
5. নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
— এর কারণ কী? অথবা, নিরক্ষীয় অরণ্যের সাম্প্রতিক
ধ্বংসের কারণ বা ৰূপ কেমন?
উত্তর: 1970 সালে ট্রান্স-আমাজন হাইওয়ের মাধ্যমে সেলভা অরণ্য অঞ্চল বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের সূচনা হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বৃষ্টি অরণ্যের চারপাশে নতুন জনবসতি গড়ে উঠেছে। মানুষ তার ক্রমাগত চাহিদা, বসতি, কৃষি, পরিবহণ, শিল্প প্রভৃতির প্রয়োজনে প্রতিদিন বিশাল অশাল জুড়ে বৃষ্টি অরণ্য ধ্বংস করছে। ফলে নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক (2019) ভয়ঙ্কর দাবানলে ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকার অরণ্যের বিশাল অংশ বিনাপ্রাপ্ত হয়েছে।
মোট কথা, সেলভা অরণ্যের ধ্বংসের প্রধান কারণগুলি হল--
●কাষ্ঠশিল্প (2%-3%দায়ী),
●পশুচারণ (65%-70% দায়ী),
●বাণিজ্যিক কৃষি (5%-10% দায়ী),
●স্থায়ী কৃষি (20%25% দায়ী),
● দাবানল ও নগরায়ণ (1%-2% দায়ী)।
6. ‘মৌসূমি জলবায়ু অঞ্চলে উদ্বু-আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুদ্ধ শীতকাল'—ব্যাখ্যা করো। অথবা, মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে শীত-গ্রীষে বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় কেন?
উত্তর: জলভাগ থেকে খগভাগে বায়ুপ্রবাহ স্থূলভাগ ও জলভাগের মধ্যে উন্নতার পার্থক্যের জন্য এই বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ু স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহত্তম সংস্করণ। সূর্যের উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মকালে থলভাগ জলভাগের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত হয়, ফলে স্থলভাগে নিম্নচাপ কেন্দ্র ও জলভাগে উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। তাই জলভাগের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে স্থলভাগের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। সেই বায়ু দীর্ঘ সমুদ্রপথে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিসেবে স্থলভাগে প্রবেশ করে বলে এই বায়ু আর্দ্র হয়।
স্থলভাগ থেকে জলভারে বায়ুপ্রবাহ : অপরদিকে সূর্যের দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে শীতকালে স্থলভাগে উয়তা কমে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় এবং জলভাগে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। ফলে, স্থলভাগের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে জলভাগের দিকে অর্থাৎ, উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে শুষ্ক হয়।এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। তাই মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মে বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ দেখা যায়।
7. মৌসুমি বায়ুতে প্রায়ই খরা বা বন্যার কারণ কী? অথবা, মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে খরা ও বন্যার প্রবণতা বেশি হয় কেন?
উত্তর: মৌসুমি বায়ু খুবই খামখেয়ালি এবং অনিশ্চিত চরিত্রের হয়, তাই এখানে যখন স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ট কম বৃষ্টিপাত ঘটে তখন খরার (Drought) সৃষ্টি হয়, আবার অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটলে বন্যার (Flood) সৃষ্টি হয়। বিষয়টির ব্যাখ্যা নিম্নরূপ—
মৌসুমি জলবায়ুতে খরার কারণ :
১.বর্ষার বৃষ্টি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দীর্ঘ বিলম্ব করে নামলে,
2. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল প্রকৃতির হলে, আর্দ্র মৌসুমি বায়ুর ঘনীভবনের পরিবেশ না থাকলে,
৩. বনভূমি ও জলভাণ্ডার ক্রমশ হ্রাস পেলে খরার সৃষ্টি হয়।
মৌসুমি জলবায়ুতে বন্যার কারণ :
১.. স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগে বৃষ্টি নামলে,
২. দীর্ঘদিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাত ঘটলে, হঠাৎ হঠাৎ স্থায়ী নিম্নচাপ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হলে,
৩.নদীগর্ভ ক্রমশ পলির দ্বারা ভরাট হয়ে এলে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
8. মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের বেশির ভাগ স্থানে পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়। এর কারণ কী ?
উত্তর: মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের যে সমস্ত স্থানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 – 200 সেমি সেখানে পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়।
কারণ – মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের প্রায় 90 শতাংশ বৃষ্টিপাতই গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দ্বারা ঘটে। ই বায়ু দীর্ঘ | কিন্তু অন্য ঋতুতে বিশেষত শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না। এই সময় জলের অভাবে গাছগুলি পত্রমোচন করে তাদের বাষ্পমোচনের হার কমিয়ে দেয়। তাই পর্ণমোচী অরণ্যই বেশি দেখা যায়।
9.মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা জনবহুল অঞ্চল হওয়ার কারণ কী? ★
উত্তর: মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা জনবহুল হওয়ার কারণ হল—“
১. অনুকূল জলবায়ু : মৌসুমি জলবায়ুর গড় তাপমাত্রা প্রায় 20°C-25°C এবং বৃষ্টিপাত 100-200 সেমি হওয়ায় সমুদ্রে বসবাসের পক্ষে এই জলবায়ু খুবই অনুকূল।
২.উর্বর মৃতিকা : এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে পলিগঠিত উর্বর অঞ্চল মৃত্তিকার সহাবস্থান থাকায় কৃষিকাজ করতে বিশেষ সুবিধা হয় ৷
৩. জলসম্পদ : এই অঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন নিত্যবহ ও অনিত্যবহ নদী পর্যাপ্ত জলসম্পদের জোগান দেয়।
৪. অরণা সম্পদ : মৌসুমি জলবায়ুতে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী, ম্যানগ্রোভ প্রভৃতি অরণ্যের সম্পদকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
৫. খনিজ সম্পদ : এখানে লোহা, তামা, বক্সাইট, খনিজ তেল যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়।
৬.পরিবহণ : মৌসুমি জলবায়ুর বেশিরভাগ সমতলভূমি হওয়ায় এখানে পরিবহণ ব্যবস্থার খুবই উন্নতি ঘটেছে।
Comments
Post a Comment