Class 9 : নবম শ্রেণীর প্রথম অধ্যায় "গ্রহরুপে পৃথিবী" Question Answer Part-1

__নবম শ্রেণী প্রথম অধ্যায় গ্রহরূপে পৃথিবী


1. পৃথিবীর আকার সম্পর্কে ধারণা (Concept of Shape of the Earth): 


সময়ের পরিবর্তনের সাথে পৃথিবীর 'চ্যাপটা আকার', 'গোলাকার', 'অভিগত গোলাকার', 'জিয়ড' প্রভৃতি আকৃতিগত ধারণায় নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি দেখা যায়—

১. চ্যাপটাকৃতি পৃথিবী (Flat Earth) – গ্রিসে প্রাচীন যুগ, নিকট প্রাচ্যের ব্রোজু ও লৌহ যুগ, ভারতে গুপ্তযুগ, চিনে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত দার্শনিক ও পণ্ডিতদের ধারণা ছিল 'পৃথিবী চ্যাপটা রুটি বা টেবিলের মতো যার ওপর আকাশ এক বিশাল উপুড় করা পেয়ালা। সমতল পৃথিবীর প্রান্তে গেলে পৃথিবী থেকে সবকিছুর পতন ঘটবে।

২. গোলাকৃতি পৃথিবী (Spherical Earth) - প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির ধারণা বিরাজ করত। গ্রিক দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদদের ধারণা অনুযায়ী – ৬০০ খ্রি. পূ. পিথাগোরাস পদার্থবিদ্যার সুত্র মেনে গোলাকৃতি পৃথিবীর ধারণা সর্বপ্রথম ব্যক্ত করেন। প্লেটো এইমত সমর্থন করেন। অ্যারিস্টটল চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের ওপর পৃথিবীর ছায়া দেখে পৃথিবীর গোলকাকৃতির ধারণা দেন।

৩.অভিগত গোলকাকৃতি পৃথিবী (Oblate Spheriod Earth) – বিংশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইংল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গবেষকগণের হিসাব থেকে পৃথিবীর নিরক্ষীয় ও মেরু ব্যাসের পার্থক্য ৪৩ কিলোমিটার এবং পরিধির তফাৎ ৬৭.১৫৪ কিলোমিটার পাওয়া যায়। পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ অর্থাৎ মেৰু অক্ষ চাপা এবং পূর্ব-পশ্চিম অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চ স্ফীত থেকে পৃথিবীর গোলাকৃতি ধারণা ভেঙে অভিগত গোলাকৃতির ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়।


৪.. পৃথিবী সদৃশ বা জিয়ড আকৃতি পৃথিবী (Geoid Earth) – বিংশ শতকের শেষ ও একবিংশ শতকের প্রাথমিক লগ্নে এসে পৃথিবীর গড় সমুদ্রতল ও অভিকর্ষজ আকর্ষণের ভিন্নতা দেখে অভিগত গোলকাকৃতি নয় বরং 'পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীরই মতো' বা 'জিয়ড' আকৃতির ধারণা সর্বজনগ্রাহ্য হয়।


2. পৃথিবীর আকার সম্পর্কে ভারতীয় জ্যোতির্বিদের ধারণা ?

=> ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ, আর্যভট্ট (৪৭৬-৫৫০ খ্রি.) গোলাকার পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেন। পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির ধারণা বরাহমিহিরও পোষণ করতেন।


3.অভিগত গোলকরূপে পৃথিবী (Earth as an Oblate Spheroid):


পৃথিবী পৃষ্ঠে ভিন্ন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু চাপা এবং মধ্যভাগ অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত। পৃথিব এই বিশেষ আকৃতিকে অভিগত গোলক (Oblate Spheroid) বলা হয়। 

অভিগত গোলকরুপী পৃথিবীর বৈশিষ্ট্যগুলি হল-----

পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতি


 ● নিরক্ষীয় ও মেরুব্যাসের ভিন্নতা : ১৭৪৩ সালে ক্লেরাট তাঁর তত্ত্বে এব ১৭৮৬ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন ব্যাখ্যা করেন পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস (বৃহৎ অক্ষ) ১২,৭৫৭ কিমি ও মেরু ব্যাস (ক্ষুদ্র অক্ষ) প্রায় ১২,৭১৪ কিমি অর্থাৎ পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস মেরু ব্যাস অপেক্ষা ৪৩ কিমি বড়ো।

চ্যাপটা মেরুপ্রদেশ : পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তির জন্য সংনমন বা চাপন মাত্রা, (Compression or flattening) বেশি হওয়ায় পৃথিবীর মেরু অঞ্চল চ্যাপটা।

 ●ঘড়ির সময় ভিন্নতা : ১৬৭১ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জাঁ রিচার (Jean Richeer) লক্ষ করেন, তাঁর দোলক ঘড়িটি দক্ষিণ আমেরিকার কেইন দ্বীপে (৫° উত্তর) প্রায় ২.৫ মিনিট দেরিতে চলছে। অথচ একই ঘড়ি প্যারিসে (৪৮°৩০′ উত্তর) সঠিক সময় দিত। এমন ঘটার কারণ ১৬৮৬ সালে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার দ্বারা স্পষ্ট হয়। সূত্র মেনে কেইন দ্বীপ নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি থাকায় অধিক অভিকর্ষজআকর্ষণে ধীরে চলছিল অথচ প্যারিসে দূরত্ব বৃদ্ধিতে অভিকর্ষজ আকর্ষণ কম থাকায় সঠিক সময় দিচ্ছিল। পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতি আকারের কারণে ঘড়ির সময় ভিন্নতা দেখা যায়।

 ●নক্ষত্রের উন্নতি কোণের তারতম্য : নক্ষত্রের উন্নতি কোণ মাপক যন্ত্রের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি নিরক্ষরেখা থেকে একই দ্রাঘিমারেখা বরাবর ১১০ কিমি উত্তরে গিয়ে ধ্রুবতারার উন্নতি কোণ ১° পেল। কিন্তু এই ব্যক্তি ওই দ্রাঘিমারেখা বরাবর ২২০ কিমি উত্তরে গিয়ে ধ্রুবতারার উন্নতি কোণ ২° অপেক্ষা কম পাবে। ২° কোণ পাওয়ার জন্য আরো বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। মেরুর দিকে প্রতি ১° কোণ বেশি পাওয়ার জন্য আরো অধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। এর থেকেই পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়। 

একই দ্রাঘিমারেখায় দুটি অক্ষরেখার মধ্যে দূরত্বের তারতম্য : পৃথিবী অভিগত গোলক হওয়ার এক উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হল একই দ্রাঘিমারেখা বরাবর দুটি অক্ষরেখার দূরত্ব নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে বৃদ্ধি পাওয়া।

অক্ষরেখার ভিন্ন পরিধি: পৃথিবী অভিগত গোলক হওয়ায় একই মানের অক্ষরেখার পরিধি উত্তর গোলার্ধ অপেক্ষা দক্ষিণ গোলার্ধে সামান্য বেশি।


4. পৃথিবীর আকৃতির পরিমাপ প্রথম কে পদক্ষেপ করেছিলেন ?

উত্তরঃ: পৃথিবীর আকৃতি প্রথম পদক্ষেপ করেছিলেন গ্রিক পন্ডিত এরাটোসথেনিস ।








Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর