পৃথিবীর বিভিন্ন ধরণের উষ্ণ স্থানীয় বায়ু (Hot Local Winds)
পৃথিবীর বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় বায়ু (Hot Local Winds)
পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে উন্ন প্রকৃতির স্থানীয় বায়ু লক্ষ্য করা যায়, যেগুলি স্থানীয় বা আঞ্চলিক স্তরে জলবায়ুর বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। নিম্নে কয়েকপ্রকার উল্লেখযোগ্য উন্ন প্রকৃতির স্থানীয় বায়ুর পরিচয় দেওয়া হল--------
1. চিনুক (Chinook) :
রেড ইন্ডিয়ান শব্দ ‘চিনুক'-এর অর্থ 'তুষার-ভক্ষক' (Snow-eater)। উত্তর আমেরিকায় রকি পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে বসন্তকালে যে উঠু ও শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে চিনুক বলা হয়। এই বায়ু উয় প্রকৃতির। উষ্ম বায়ুর প্রভাবে পার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলে যায় বলে চিনুককে তুষার-ভক্ষক বলা হয় (Oliver & Hidore, 2003) ।
● অবস্থান ও প্রকৃতি (Location and Nature) :
চিনুকের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো, উয়োমিং, মন্টানা, উত্তর ডাকোটা, ওরিগন, ওয়াশিংটন এবং কানাডার আলবেটা, ম্যানিটোবা ও ম্যাকেঞ্চি অন্যলে। রকি পর্বতের পশ্চিম ঢাল দিয়ে যখন চিনুক বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন শুষ্ক তাপবিযুক্ত হারে (dry adiabatic) প্রতি 100 মিটার উচ্চতায় 1°C করে উন্নতা হ্রাস পেতে থাকে। তারপর যখন এই বায়ু উঁচু এলাকায় উপস্থিত হয় তখন সংপৃক্ত (saturated) হয়ে পড়ে। উন্নতার হ্রাস পাওয়া এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সংপৃক্ত হবার পর মেঘ সৃষ্টি এবং বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরে ঘনীভবনজনিত লীনতাপ ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই এই সময়ে চিনুক বায়ু আর্দ্র তাপবিযুক্ত (moist adiabatic rate) হারে প্রতি 100 মিটার উচ্চতায় 0.5°C উন্নতা হ্রাস পায় (Khillar, 2012 ) চিনুক বায়ু রকি পর্বত অতিক্রম করে যখন পূর্বদিকের ঢালে পৌঁছায় তখন উন্নতা বৃদ্ধি পায়। বায়ু পর্বতের গা বেয়ে নীচের দিকে নামতে থাকে বলে উন্নতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। তাই একই উচ্চতায় রকি পর্বতের পশ্চিম দিকের ঢালের তুলনায় পূর্ব দিকের ঢালে চিনুক বায়ু বেশি উগ্ন হয়। বেশিরভাগ সময়েই এই বায়ু রকি পর্বতের পূর্বদিকে প্রায় 300 কিমি এলাকা জুড়ে সংকীর্ণ ফালি (narrow zone) বরাবর দক্ষিণে নিউ মেক্সিকো থেকে উত্তরে কানাডা পর্যন্ত অবস্থান করে। চিনুক একপ্রকার ঝোড়ো বায়ু (gusty wind) এবং যার গতিবেগ ঘণ্টায় 160 কিমি পর্যন্ত হতে পারে ।
• চিনুক বায়ুর প্রভাব (Impact of Chinook) :
জলবায়ু এবং অর্থনীতির উপর চিনুকের একগুচ্ছ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অনুবাত ঢালে (Leeward slope) বায়ু যখন নীচের দিকে নামে, তখন সেই বায়ু শুষ্ক ও উষু হয়। তখন এই অংশের জলবায়ু অনেকটা মরুপ্রকৃতির (desert like) হয়ে থাকে। আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে মাত্র 10 থেকে 20 শতাংশ। অত্যধিক উদ্বু প্রকৃতির বায়ুর প্রভাবে বরফ দ্রুত গলে যায় (Trewartha & Horn, 1980) ।
চিনুক বায়ু 1 দিনে প্রায় 150 মিলিমিটার বরফ গলিয়ে দেয়। লক্ষ্য করা গেছে, মাত্র। দিনে ½ মিটারও বরফ গলিয়ে দেয়। সেই জন্যই এই বায়ুকে 'তুষার-ভক্ষক' বলা হয়।
চিনুক বায়ু স্থানীয়ভাবে হঠাৎ করে উয়তা বাড়িয়ে দেয় (sudden rise in temperature)। প্রায়শই দেখা যায়, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে উন্নতা 10°C থেকে 15°C বেড়ে যায়। এমনও দেখা যায়, প্রায় 24 ঘণ্টায় এই বায়ু 22°C উন্নতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের USA-এর মন্টানা প্রদেশের কিপ (Kipp in Montana) নামক স্থানে মাত্র 7 মিনিটের ব্যবধানে 19°C উন্নতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় (Trewartha & Horm. 1980) | 1966 খ্রিস্টাব্দের 6 জানুয়ারি কানাডার পিনচের ক্লিক (Pincher Creek) নামক স্থানে চিনুক বায়ুর প্রভাবে মাত্র 4 মিনিটের ব্যবধানে 21°C উন্নতা বৃদ্ধি পায় (Barry & Chorley, 2005)। 1943 খ্রিস্টাব্দের 22 জানুয়ারি দক্ষিণ ডাকোটার স্পিয়ারফিস-এ (Spearfish in South Dakota) সব থেকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উন্নতা অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে এই স্থানে মাত্র 2 মিনিটের মধ্যে উন্নতা এক লাফে 27°C বৃদ্ধি পায় (Oliver & Hidore, 2003)। চিনুকের প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের বরফ গলে যায়। জমা বরফ গলে যাবার ফলে তৃণভূমি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে পশুচারণের বিশেষ সুবিধা হয়। সমগ্র অঞ্চলে শীতের তীব্রতা হ্রাস পায়। তবে চিনুকের ঋণাত্মক প্রভাব বা অসুবিধাও লক্ষ্য করা যায়। শুষ্ক বায়ু হওয়ায় মৃত্তিকার আর্দ্রতা হ্রাস পায় (Chinook deplete the soil moisture)। এর ফলে বসন্তকালীন শস্য উৎপাদন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
2. হারমাট্টান (Harmatan) :
হারমাট্টান একপ্রকার উন্ন ও শুদ্ধ বায়ু। শক্তিশালী এই বায়ু সাহারা মরুভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম আফ্রিকার গিনি উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয়। স্থানীয় ভাষায় হারমাট্রান কথার অর্থ ডাক্তার (doctor); তাই হারমাটান বায়ুকে ডক্টর উইন্ড (Doctor wind) বলা হয়। গিনির জলবায়ু ভীষণভাবে উয়, আর্দ্র এবং পীড়াদায়ক (quite hot, humid and oppressive)। কিন্তু হারমাট্রান বায়ুর প্রভাবে আবহাওয়া কিছুটা আরামদায়ক হয়ে থাকে বলেই স্থানীয় মানুষেরা এই বায়ুকে 'ডক্টর বায়ু বলে থাকেন।
● হারমাট্টান বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. উপকূল থেকে অভ্যন্তরের দিকে বালুকাপূর্ণ এই বায়ু এবং অস্বস্তিকর হয়।
ii. যেহেতু হারমাট্রান অত্যন্ত উয়, আর্দ্র এবং বালুকাপূর্ণ, তাই অনেক সময় বৃক্ষকা ওগুলি ডালপালাহীন চেহারায় দণ্ডরূপে অবস্থান করে।
iii. উত্তর গোলার্ধে শীত ও গ্রীষ্মকালে এই বায়ুর গড় সীমা যথাক্রমে ৫° উত্তর এবং 18° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত।
3. সিরোক্কো (Sirocco or Scirocee) :
সাহারা মরু অঞ্চল থেকে যে শুষ্ক ও ধূলিকণাযুক্ত উদ্ভবায়ু মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও ইটালি, মাল্টা বা সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে সিরোক্কো বলা হয়। মূলত গ্রীষ্মকালে এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। ভূমধ্যসাগরের উপর নিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ হয়। তাই এই বায়ুতে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বস্থিত আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের কোন কোন দেশে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
● সিরোক্কো বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. সিরোক্কো বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ খুবই কম, মাত্র 10% - 201
ii. দৃশ্যমানতা কম। দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের (0) কাছাকাছি।
iii. ভূমধ্যসাগরের কাছাকাছি নিম্নচাপ (depressions) সৃষ্টি হওয়ায় এই বায়ুর উৎপত্তি হয়। পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।
iv. যখন পূর্ণবাতজনিত শুক্কা তৈরি হয় তখন সিরোক্কো বায়ু অতিমাত্রায় শক্তিশালী হয়।
v. উত্তর আফ্রিকার আটলাস পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে যখন উত্তর ঢালে এই বায়ু উপস্থিত হয়, তখন চরমমাত্রায় উদ্বু ও শুদ্ধ হয়। তারপর দক্ষিণ ইটালিতে যখন পৌঁছায়, তখন এই বায়ু বৃষ্টিপাত ঘটায়। সাহারা মরুভূমির লাল বালি থেকে এই বৃষ্টিপাতের উৎপত্তি বলে, একে বলা হয় রক্ত বৃষ্টি (blood rain)।
vi. কৃষি ও শস্য উৎপাদনে সিরোকো ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। জলপাই চাষ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
vii. উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ইউরোপে এই বায়ু বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন–মিশরে খামসিন ((Khamsin), লিবিয়ায় গিবলি (Gibli), টিউনিশিয়ায় চিলি (Chili), দক্ষিণ-পূর্ব স্পেনে লেভেচ (Leveche) এবং আরব মরুভূমিতে সিমুম বা সাইমুম (Simoom)।
4. খামসিন (Khamsin) :
মিশরে সিরোক্কো বায়ুকে খামসিন বলা হয়। খামসিন একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ পঞ্চাশ। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে প্রায় 50 দিন ধরে এই বায়ু প্রবাহিত হয় বলে, একে খামসিন বলা হয় (Khamsin is an Arabic word which means fifty. Since this wind blows for about fifty days from April to June, it is aptly called Khamsin.)।
● খামসিন বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
1. এই বায়ু উষু ও শুষ্ক প্রকৃতির। মরুভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বালুকাপূর্ণ হয়। উন্নতা 50°C-এর বেশি।
ii সাহারা মরুভূমি থেকে এই বায়ু উত্তর দিকে মিশর ও সৌদি আরবের দিকে প্রবাহিত হয়।
iii. এমনিতে শুষ্ক হলেও কখনো কখনো এই বায়ু সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আর্দ্র প্রকৃতির হয়।
Iv. ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে পূর্বদিকে যখন নিম্নচাপ সরে যায় তখন বাতাগ্র বা (front) এলাকা থেকে খামসিন বায়ুর উৎপত্তি হয়।
5. চিলি (Chili) :
আলজেরিয়ার সাহারা মরুভূমি থেকে উৎপন্ন একপ্রকার উদ্বু ও আর্দ্র বায়ুর নাম চিলি। ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে টিউনিশিয়া পর্যন্ত এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
●চিলি বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Chili ):
.i দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়।
ii. গ্রীষ্মকালে এই বায়ুর উন্নতা 40°C-এর বেশি হয়।
iii. আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ 10%-এর কম।
6. লেভেচ (Leveche) :
দক্ষিণ-পূর্ব স্পেন দেশে সিরোকো বায়ু লেভেচ বা লেভেস নামে পরিচিত। সিরোক্কোরমতো এই বায়ুও উঠু ও আর্দ্র প্রকৃতির।
● লেভেচ বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. নিম্নচাপের সামনের দিকে অগ্রগমনের জন্য এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
Ii) প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা বহন করে থাকে।
iii. উত্তপ্ত বালুকণার সংস্পর্শে উদ্বৃতার পরিমাণ বেশি থাকে।
iv) আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ উল্লেখ্যমাত্রায় কম।
7. কারাবুরান (Karaburan)
মধ্য এশিয়ার চিন দেশের জিনজিয়াং-এর অন্তর্গত তারিম অববাহিকার ( Tarim Basin of Xinjiang) অন্তর্গত একপ্রকার উগ্ন বায়ুর নাম কারাবুরান। বসন্তের শুরুর দিকে মার্চ-এপ্রিল মাসে এই বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তি হয়। গ্রীষ্মের শেষ পর্যন্ত এই অংশের ভূমিভাগ উত্তপ্ত থাকে বলে এই বায়ুর উৎপত্তি হয়।
● কারাবুরান বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. একপ্রকার শক্তিশালী বা প্রবল গতিসম্পন্ন বায়ু। প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা বহন করে থাকে।
ii. মরুভূমি থেকে ধূলোর মেঘকে দ্রুতবেগে এগিয়ে নিয়ে যায় (it sweeps up clouds of due from the desert) । বায়ু সমগ্র এলাকাকে গভীরভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে। এর ফলে এই বায়ু মানুষের কছে অস্বস্তিকর আবহাওয়া রচনা করে।
iii. স্বল্প ব্যাসযুক্ত বা হালকা ধূলিকণাসমূহকে অনেক দূর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়। এর ফলে খোলা (haze) আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। দৃষ্টিস্বচ্ছতা হ্রাস পায়।
8. ব্রিকফিল্ডার (Brickfielder):
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথওয়েলস্-এর দক্ষিণ-পূর্ব অংশে এই স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। উত্তরে অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরভাগ থেকে দক্ষিণে উপকূলের দিকে ব্রিকফিল্ডার বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়।
● ব্রিকফিল্ডার বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. অস্ট্রেলিয়ায় যখন গ্রীষ্মকাল চলে তখন অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এই প্রবাহিত হয়।
ii. নিম্নচাপজনিত কারণে উৎপত্তি হয়। গতিবেগ অনেক বেশি।
iii. ধূলিকণার মেঘ বহন করে থাকে। পরিণতিতে সৃষ্টি হয় ধূলিঝড় (dust storms)।
iv. উন্নতা 38°C-এর বেশি হয়; যার ফলে এই বায়ু মনুষ্যজীবনের পক্ষে মোটেই আরামদায়ক নয়।
9.লু (Loo) :
গ্রীষ্মকালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতে একপ্রকার উদ্বু ও শুষ্কবায়ু প্রবাহিত হয়, যা 'লু' নামে পরিচিত। রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশেরপশ্চিমাংশে মূলত এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
● লু বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. গ্রীষ্মকালে দিনের বেলা ‘লু’ বায়ুর গতিবেগ ও তীব্রতার মাত্রা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
ii. রাত্রিবেলা এই বায়ু অতি দুর্বল এবং অস্পষ্ট (very feeble)। সকাল বেলা অত্যন্ত নিম্ন গতিবেগ লক্ষ্য করা যায়।
iii. সকাল 7টা থেকে ৪টার মধ্যে গতিবেগ ও তীব্রতার (speed and intensity) মধ্যে সামান্য বৈচিত্র্য (little variations) লক্ষ্য করা যায়।
iv. সকাল ৩টা থেকে দুপুর ২টো সর্বোচ্চ গতিবেগ লক্ষণীয় হয়। বিকেল 5 বা টো পর্যন্ত এই প্রবাহ বজায় থাকে। সূর্যাস্তের পর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
v. মধ্যাহ্নের সময় উন্নতা থাকে প্রায় 45°C-এর কাছাকাছি। এই সময়ে আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে হয় মাত্র 10% থেকে 20%।
vi. শক্তিশালী এই বায়ুর গভীরতা প্রায় 2 কিমি।
vii. বায়ুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা থাকে। তাই দৃষ্টিস্বচ্ছতা হ্রাস পায়। দৃষ্টিস্বচ্ছতা হ্রাস পেয়ে 1 কিমি বা তারও কম হয়।
viii. সূর্যাস্তের পর প্রবাহ বন্ধ হলেও বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার উপস্থিতি থাকে। তাই দৃষ্টিস্বচ্ছতা তখনও কম থাকে। এই অবস্থা 3 থেকে 10 দিন স্থায়ী হয়। যতদিন পর্যন্ত না ধুলিঝড় এই অবস্থাকে নষ্ট করে a dust storm breaks the spelt) ততদিন পর্যন্ত এমন স্বপ্ন দৃষ্টিস্বচ্ছতা বিরাজ করে।
10. লেডাণ্টার (Levanter) :
স্থানীয় বায়ু হিসাবে লেভান্টার-এর আর একটি নাম আছে। নামটি হল সোলানো (Solano)। দক্ষিণ-পূর্ব স্পেন, বালেরিক দ্বীপপুঞ্জ (Balcaric Island) ও জিব্রাল্টার প্রণালীর Nots of Gibraltar) মধ্যে এই বায়ুপ্রবাহের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।।
● লেভান্টার বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
i. পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
ii. গ্রীষ্মকালে এবং শরৎকালের শুরুতে যখন পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় তখন এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
ii. বায়ু আর্দ্র প্রকৃতির এবং হালকা। কখনো কখনো ঝঞ্ঝাপূর্ণ আবহাওয়া রচনা করে। এর ফলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
iv. কখনো কখনো জিব্রাল্টার পাহাড়ের (Rock of Gibraltar) অনুবাত ঢালে মারাত্মক বা বিপদগ্রস্ত ঘূর্ণির(dangerous eddies) সৃষ্টি করে।
V. মাঝারি গতিতে যখন এই বায়ু প্রবাহিত হয় তখন জিব্রাল্টার পাহাড়ে এক ধরনের মেঘ সৃষ্টি এই মেঘের নাম ‘hanner cloud'। এই মেঘের বিস্তার 1 কিমি বা তার বেশি হয়। কিন্তু বায়ু করে। যখনদ্রুতগতিতে প্রবাহিত হয় তখন এই মেঘ অদৃশ্য হয়ে যায়।
11. বাৰ্গ (Berg) :
দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমির উপর দিয়ে প্রায় সারাবছর ধরে বিশেষ করে শীতকালে একপ্রকার উন্ন বায়ু প্রবাহিত হয়, যা বার্গ নামে পরিচিত। এইপ্রকার উরু বায়ু পার্শ্ববর্তী দেশগুলির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সেখানকার উন্নতা বাড়িয়ে দেয়।
'বাগ' একটি জার্মান বা ডাচ্ ভাষা, যা মূলত জার্মানিতে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ সঠিক নামের একটি উপাদান (as an element in proper names) অর্থাৎ একটি একক পাহাড়। যেমন জার্মানির ফেল্ডবার্গ ও হেসেলবার্গ (as a single hill or mountain in Germany eg Feldberg, Hesselberg)। আবহাওয়াবিদ্যায় এই পরিভাষাটি স্থানীয় বায়ুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
●বার্গ বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
i. দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমি ও জার্মানির মধ্যভাগের পার্বত্য উপত্যকায় প্রবাহিত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে নীচের দিকে মধ্য জার্মানিতে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
ii. এই বায়ু উষ্ণ এবং শুষ্ক। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাহিত এই বায়ু উপকুলীয় আবহাওয়াকে উদ্বু করে তোলে।
12. নরওয়েস্টার (Norwester): '
নরওয়েস্টার' শব্দটি নিউজিয়াও ও ভারতে ব্যবহৃত হয়। তবে দুই দেশে ভিন্ন অর্থে নরওয়েস্টার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। নিউজিল্যাও নরওয়েস্টার এক ধরনের ফন বায়ু (Fohn type)। নিউজিল্যান্ডে এই বায়ু নিউজিল্যাও আল্পস থেকে দক্ষিণ দ্বীপপুঞ্জের দিকে প্রবাহিত হয় (blowing from the New Zealand Alps across the South Island))
ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও সন্নিহিত অঞ্চল যেমন বিহার, কখণ্ড, ওড়িশা, অসম এবং বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ অংশে সংগঠিত বজ্রকণ্ঠা নরওয়েস্টার নামে পরিচিত। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই বায়ুর হাসান ঘটে বলে একে নরওয়েস্টার বলা হয়।
• নরওয়েস্টার বায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
1. একপ্রকার উঁচু বায়ু। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়। বিকেলবেলা এই বায়ুর আবির্ভাব ঘটে।
iii. বায়ুর গতিবেগ অত্যন্ত বেশি। ঘন্টায় প্রায় 60 থেকে 90 কিমি বেগে প্রবাহিত হয়।
iii. ছোটনাগপুর ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে পূর্বনিকে প্রবাহিত হয়। অত্যন্ত আনোয়ক। পশ্চিমবঙ্গে বৈশাখ মাসে সংগঠিত হয় বলে একে কালবৈশাখী (Kal-Baisakhi) বলা হয়।অসমে এই বায়ুকে বরদৈহলা বলা হয়।
Tv. বজ্রসহ বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 10 সেমি । আম ফলনের সময়ে এই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে বলে, দক্ষিণ ভারতে একে আম্র বৃষ্টি (Mango-showers) হয়। প্রায় 50 সেমি বৃষ্টিপাত হয়।
v. ঝড়ের তাণ্ডব বেশি থাকায় প্রচুর সম্পত্তিহানি ও জীবন নষ্ট হয়। তবে সামান্য বৃষ্টিপাতের প্রভাবে অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে চা ও পাট চাষের সুবিধা হয়।
vi. বৃষ্টিপাত হয় বলে এই বায়ুর প্রভাবে উন্নতার চরমতা হ্রাস পায়। নরওয়েস্টারের প্রভাবে উত একলাকে প্রায় 10°C-15°Cয়।
Comments
Post a Comment