মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Monsoon Winds)

 ★★ মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য


মৌসুমি বায়ু পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রবাহিত হয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রকৃতি নির্ধারণেও এই বায়ুর অবদান অপরিসীম। মৌসুমি বায়ুর অসংখ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে এই সব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল-- 


1. মাধ্যমিক সঞ্চালন (Secondary Circulation) :

 মৌসুমি বায়ু মাধ্যমিক সঞ্চালনের অন্তর্গত একপ্রকার বায়ুপ্রবাহ। তাই মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি তাপীয় প্রকৃতির (thermal type) বায়ুপ্রবাহ।বিশাল এলাকা জুড়ে এই বায়ু জলবায়ুর উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে (Menon, 1989) |


2. ঋতুভিত্তিক বায়ুপ্রবাহ (Seasonal Wind) : 

মৌসুমি বায়ু পুরোমাত্রায় ঋতুভিত্তিক। ঋতু অনুসারে এই বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় একে সাময়িক বায়ুপ্রবাহ বলা হয়। তবে ঋতুর পরিবর্তন অনুসারে মৌসুমি বায়ুরও গতিমুখ পরিবর্তিত হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রবাহে চক্রাকার বিপরীতমুখীতা (Cyclic reversal) লক্ষ্য করা যায় ।


3. ব্যাপ্তি বা বিস্তার (Extension) : 

মৌসুমি একপ্রকার আঞ্চলিক বায়ুপ্রবাহ। তবে এর বিস্তার বা ব্যাপ্তি অনেক বেশি। সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে বিশাল এলাকা জুড়ে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। তাই অনেক সময় এই বায়ুকে ভূ-মণ্ডলীয় বায়ুপ্রবাহ (Global wind) বলা হয় (Khramov, 1957)


4. অক্ষাংশগত অবস্থান (Latitudinal location) :

 অক্ষাংশ অনুযায়ী মৌসুমি বায়ু নিরক্ষরেখার উভয় দিকে মুখ্যত 20° উত্তর থেকে 20° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই মৌসুমি বায়ুকে ক্রান্তীয় অঞ্চল বা উয়ুমণ্ডলের বায়ুপ্রবাহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় ।


5. স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহত্তর সংস্করণ (Large form of Land and Sea Breeze) :

স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর সাদৃশ্য সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন এডমণ্ড হ্যালী। তাঁর মতে, মৌসুমি বায়ু হল স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহত্তম সংস্করণ। এই ধরনের বায়ুর তীব্রতা জলভাগ ও স্থলভাগের তাপমাত্রার নতি বা ঢালের (temperature gradient) উপর নির্ভরশীল। উপমণ্ডলে স্থলভাগ ও জলভাগের তাপগ্রাহিতার তারতম্যের জন্যই তাপমাত্রার ঢাল বেশি হওয়ায় মৌসুমি বায়ু শুধুমাত্র উয়মণ্ডলেই সীমাবদ্ধ (Halley, 1686)।


6. আয়ন বায়ুর সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Trade winds) : 

উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালীন যে মৌসুমি বায়ু লক্ষ্য করা যায়, তা বাণিজ্য বায়ুরই রূপান্তর হিসাবে পরিগণিত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে ফেরেলের সূত্র অনুসারে ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় (Das, 1968)। তবে অনেকেই এই ধরনের বায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিসাবে গণ্য করেন না (Barry & Chorley, 1998)


7. মৌসুমি বায়ুর গতিবেগ (Velocity of Monsoon wind): 

মৌসুমি বায়ু বৃহৎ আকারে প্রবাহিত হয়। প্রবাহপথের দৈর্ঘ্য কয়েক হাজার কিমি। প্রবাহপথে পর্বতের বাধা, পৃথিবীর আবর্তনগতির তারতম্য, ভূ-পৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণ ইত্যাদি কারণে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ হ্রাস পায়। এছাড়াও উচ্চ অক্ষাংশের বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া (interaction) কিংবা মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে ঊর্ধ্ববায়ু প্রবাহের মিথস্ক্রিয়া বা পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে মৌসুমি বায়ুর গতিবেগের তারতম্য হয়। । সাধারণভাবে মৌসুমি বায়ুর গড় গতিবেগ প্রতি সেকেণ্ডে 3 মিটারের সামান্য বেশি ।


8. অসম বণ্টন (Uneven Distribution) : 

মৌসুমি বায়ুর ঋতু অনুসারে পরিবর্তন সব স্থানে। সমানভাবে লক্ষ্য করা যায় না। সমুদ্রের উপর এই পরিবর্তন স্পষ্ট হলেও স্থলভাগে তা স্পষ্ট নয়। সমুদ্রের মধ্যে ঋতু অনুসারে যে পরিবর্তন হয়, সমান অক্ষাংশে অবস্থিত ইথিওপিয়ার স্থলভাগে এই পরিবর্তন দেখা যায় না। ইথিওপিয়াতে সারাবছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব বায়ু ছাড়া অন্য কিছুই প্রবাহিত হয় না (Halley, 1686)।


                কিছু কিছু গবেষক আবার মৌসুমি বায়ুর এই পরিবর্তনকে সংক্ষিপ্ত সময়ের ভিত্তিতে (short period reversals) গণ্য করেছেন। এই বায়ু আবার কোন কোন সময় উচ্চ অক্ষাংশে (higher latitudes) এবং এমনকি স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরেও লক্ষণীয় হয় (Menon, 1989)


9. ওয়াকার কোশের উপস্থিতি (Presence of Walker's cell) : 

মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত অঞ্চলে পূর্ব-পশ্চিমে আবর্তনকারী অসংখ্য ওয়াকার কোশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে হ্যাডলে ও ওয়াকার কোশের আপেক্ষিক গুরুত্বের উপর এশিয়ার গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর কার্যকারিতা নির্ভরশীল। দুর্বল ওয়াকার কোশ সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর পক্ষে অনুকূল। কিন্তু সক্রিয় ওয়াকার কোন মৌসুমি বায়ুকে দুর্বল করে তোলে। আবার হ্যাডলে কোশের সঙ্গেও মৌসুমি বায়ুর সম্পর্ক অন্যরকম। হ্যাড়লে কোশ দুর্বল হলে মৌসুমি বায়ুও দুর্বল হয়। এইরকম গ্রহব্যাপী কোশের মাধ্যমে


Comments

Popular posts from this blog

হড়পা বান (Flash Flood): হড়পা বান কাকে বলে, ইহার বৈশিষ্ট্য ও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে ? মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তির কারণ গুলি আলোচনা কর

চলক ও ধ্রুবকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Variable and Constant)