ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ (Causes of Rapid Growth of Population in India)-----geographyhonour
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ (Causes of Rapid Growth of Population in India) :
ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতের লোকসংখ্যা 1210193422 জন।সমগ্র পৃথিবীর জনসংখ্যার শতকরা 16.7 ভাগ। বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভৃতি কারণের যা জটিল সমন্বয়ে ভারতের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।
A. প্রত্যক্ষ কারণ :
1. উচ্চ জন্মহার : স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত ভারতে জন্মহার ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা তেমনভাবে বাড়েনি। কিন্তু স্বাধীনতার পর জন্মহার আগের মতোই থাকে কিন্তু মৃত্যুহার কমে যাওয়ার জনসংখ্যা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায়। অত্যধিক জন্মহারের কারণগুলি হল—
(i) অল্প বয়সে বিবাহ : সাধারণত প্রজনন হার 15-45 বছর যদিও আইন অনুযায়ী ছেলে ও মেয়ের বিবাহের বয়স গড় 21 ও 18 বছর নির্ধারিত হয়েছে। তবুও এখনও গ্রামাঞ্চলে। মেয়েদের বিবাহের গড় বয়স 14 বছর। অল্পবয়সে বিবাহের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
অল্প বয়সে বিবাহ → অল্পবয়সে গর্ভধারণ → দীর্ঘদিন দাম্পত্য অধিক সন্তান উৎপাদন।
(ii) স্বল্পশিক্ষার হার : ভারতবর্ষে এখনও শিক্ষার হার কম। ভারতের 25.96% মানুষ এখনো নিরক্ষর এবং এখনো নারী সাক্ষরত হার 65.46% (2011) অর্থাৎ দেশের 34.54% নারী এখনো নিরক্ষর। সার্বজনীন শিক্ষা, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার প্রসার সেভাবে ঘটেনি। ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির শিক্ষা সকলের মধ্যে আসেনি।
(iii) বহুবিবাহ ও ধর্মান্ধতা : বহুবিবাহের ফলে নারী ও পুরুষের মধ্যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা অধিক হয়। নানান ধর্মীয় কারণে বহু ধর্মাবলম্বী মানুষদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মত থাকায় জন্মহার বাড়ছে।
(iv) তরুন জনসমষ্টি : ভারতের জনসমষ্টির বয়সগত গঠন অপেক্ষাকবৃত তরুন। 15-59 বছরের মধ্যে মোট জনসংখ্যার প্রায় 62.5% রয়েছে। 15 বছরের নীচে রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় 29.5% জনসংখ্যা। এরূপ তরুন জনসমষ্টি জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
2. জৈবিক জেনেটিক কারণ : প্রাণীজগতে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রজনন ক্ষমতা তাদের পরিবেশ, বাসস্থান ও খাদ্য প্রভৃতির উপর নির্ভর করে। পরিবেশ, বাসস্থান, খাদ্যের বিভিন্নতার দরুণ এদের মধ্যে প্রজননের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। মানুষের ক্ষেত্রেও ইহাই প্রযোজ্য। উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েরা অল্প বয়সে সন্তান উৎপাদনে সক্ষম এবং উৎপাদন শক্তিও অধিক। তাই পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলে জনসংখ্যা অধিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
3. কম মৃত্যুহার : 1951 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতে আধুনিক চিকিৎসার উন্নতি, মহামারী রোধ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যারোধ প্রভৃতি কারণে মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে।
B. পরোক্ষ কারণ :
(4) অর্থনৈতিক কারণ :
(i) দারিদ্র্য : দারিদ্র্যজনিত কারণে অপুষ্টি ও রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ভারতের অধিকাংশ অধিবাসীই দারিদ্র্যতার ফলে অপুষ্টির শিকার যা পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাছাড়া দারিদ্র্যের কারণে অর্থনৈতিক নিরাপত্তর আশায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 2011 সালে ভারতে দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করেন শতকরা 21.9 জন। যেখানে গ্রামে 25.7% এর শহরে 13.7%।
(ii) কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা : ভারত কৃষিভিত্তিক দেশ হওয়ায় কৃষিকাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় অধিক জনসংখ্যার উপর সবসময়ই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই কারণে ভারতে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অধিক।
(iii) উন্নয়নশীল অর্থনীতি : ভারত উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনসংখ্যা অধিক বৃদ্ধি পায়। কৃষিভিত্তিক সমাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন → অধিক সন্তান জন্মদান →
দারিদ্র্য পরিবার → অপুষ্টি রোগ → অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা → জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
5. সামাজিক কারণ :
(i) পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষা : ভারতে পুত্র সন্তানের অধিক আকাঙ্ক্ষার জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পুত্র সন্তান পরলৌকিক ক্রিয়ার অংশীদার হওয়ার এবং বৃদ্ধ বয়সে পুত্র সন্তানের নিকট থেকে অধিক নিরাপত্তা পাওয়া যায় বলে সামাজিক সংস্কারগত কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
(ii) যৌথ পরিবার প্রথা : ভারতের যৌথ পরিবার প্রথা অধিক জন্মহারে সাহায্য করে। কারণ যৌথ পরিবার প্রথায় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা পাওয়া যায় বলে সন্তান প্রতিপালনে কোনোরূপ অসুবিধা দেখা হয় না।
6. অধিক শিশু মৃত্যুর হার : ভারতে শিশু মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত বেশি গ্রামাঞ্চলে শিশু মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত অধিক হওয়ায় পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ভারতে 2011 সালের জনগণনা অনুসারে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে 44 জন।
7. অচেতনতা : সামাজিক কিংবা মানসিক অসচেতনতার জন্য মহিলাদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক লক্ষ্ম করা যায়।
8. কর্মসংস্থান : উন্নয়নশীল দেশের কিংবা অনুন্নত দেশগুলিতে শ্রমশক্তির 20% মহিলারা কর্মে নিযুক্ত থাকে। বাকি অংশ কর্ম বহির্ভূত বলে সামাজিক শিক্ষার অনেক অভাব রয়েছে। তাদের মধ্যে অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
10. সমাজে নারী স্বাধীনতা : যে সমাজে নারী স্বাধীনতা ও মূল্যবোধ খুবই কম সেখানে পুরুষের ইচ্ছামত সন্তানের জন্ম হয়। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি দ্রুতহারে বৃদ্ধিপায়।
11. মহামারি নিয়ন্ত্রণ : দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় এবং খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে রোগ, অনাহার এবং অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা কমে চলেছে। যা পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
12. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি : বর্তমানে ভারত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ক্ষেত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রে জীবন ও ধনসম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করছে যা পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
13. শরণার্থী আগমন : দেশ বিভাগের ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি যথা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে বহু শরণার্থী ভারতে চলে আসায় ভারতের জনসংখ্যার এক বিপুল পরিবর্তন ঘটে।
Comments
Post a Comment